সাংস্কৃতিক উৎসবে কুষ্টিয়ার ‘পদ্মার নাচন’

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬ জানুয়ারি ২০২০, ০৮:০২ পিএম


দেশের ৬৪টি জেলা, ৬৪টি উপজেলা এবং জাতীয় পর্যায়ের পাঁচ হাজারের অধিক শিল্পী ও শতাধিক সংগঠনের অংশগ্রহণে ২১ দিনব্যাপী আয়োজনে একাডেমির নন্দনমঞ্চে এই শিল্পযজ্ঞে সোমবার (৬জানুয়ারি) চতুর্থ সন্ধ্যায় দর্শনীর বিনিমেয়ে কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী লোকনাট্য ‘পদ্মার নাচন’ পরিবেশিত হলো।
জানা যায়, কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা, মিরপুর ও দৌলতপুর থানার বিভিন্ন গ্রামে পদ্মপুরণের কাহিনী নিয়ে পদ্মার নাচন নামে এক ধরণের পরিবেশনা রীতি প্রচলিত রয়েছে। মূলত নৃত্যপ্রধান গীতিনাট্যাভিনয় এই লোকনাট্যের সাধারণ বিশেষত্ব। পদ্মপুরণের আখ্যানের গীতিনাট্যমূলক পরিবেশনায় নৃত্যের আধিক্য থাকে বলেই পরিবেশনা রীতির নামের সঙ্গে নাচন শব্দটি যুক্ত হয়েছে। নৃত্য ছাড়াও এধরনের পরিবেশনা রীতিতে বর্ণনাত্বক গীত এবং সংলাপও অভিনয়ে লক্ষ্য করা যায়। মূলত পাবনা অঞ্চলে প্রচলিত পদ্মপুরাণ গান থেকে অপেক্ষাকৃত আধুনিক কালে সৃষ্টি হয়েছে। কুষ্টিয়ার জেলার গ্রামে বসবাসরত নিম্নবর্ণের হিন্দু-মুসলমান জনতা এধরনের নাট্যপালার পৃষ্ঠপোষক। তারা সাধারণত সন্তান কামনা, বিপদ থেকে উদ্ধার, সাপের ভয়-ভীতি থেকে রক্ষা পাবার লক্ষ্যে পদ্মার নাচন আয়োজন করে থাকেন। আসরের শুরুতে বাদ্যযন্ত্রী ও অন্যান্য কুশীলব খোল বাদককে কেন্দ্রে রেখে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে ভূমি প্রণাম করে। এরপর বাদ্যযন্ত্রের তালে নাচের মাধ্যমে বামদিক থেকে ডান দিকে আসর পরিক্রমা করে। পরবর্তীতে পরিবেশনায় একে একে রামস্তব, বন্দনা গীত ও পালার প্রসঙ্গ শেষে মূল আখ্যানে বর্ণনাত্বক গীত, গদ্য ও সংলাপের মাধ্যমে পরিবেশনা চলতে থাকে।
এর আগে নন্দনমঞ্চে পরিবেশনায় ছিলো জামালপুর, সিরাজগঞ্জ ও পঞ্চগড় জেলার পরিবেশনা।জামালপুর জেলার পরিবেশনার শুরুতে জেলা ব্রান্ডিং জারীগান এবং দেশাত্ববোধক সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী টুটুল মাহমুদ, আশরাফুল হোসাইন, কাওসার আহমেদ, সাকিব হাসান শুভ, মো: সুমন মিয়া, নাজিমা আনছারী, শ্রাবন্তী, শশী ও শ্রেয়া। ‘তারায় করে ঝিকিমিকি’ ঘেটু নাচ এবং ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ দেশাত্ববোধক গানের কথায় সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে জনি, রাসেল, তপু, আকাশ, অন্তরা, রুপন্তী, সোনিয়া, সাথী, বিথী ও সুমী। একক সঙ্গীত জাতীয় পর্যায়ের তারকা শিল্পী টুটুল খান এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী সুমি আক্তার পরিবেশন করে লালনগীতি। যন্ত্রে সানাইয়ের সুর তোলেন শিল্পী মো: কবির, সঞ্জীব সেন, মো: বুলবুল ইসলাম, সেলিনা বেগম ও অজন্তা রহমান।
সিরাজগঞ্জ জেলার পরিবেশনায় ‘জেলা ব্রান্ডিং ভিডিও প্রদর্শনী’ বিজয় নিশান উড়ছে ঐ এবং নোঙর তোলো তোলো গানের কথায় সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে শিল্পী ড. জান্নাত আরা হ্যানরী, রাশু, আশিষ, সাইফুল, দুর্জয়, সুইটি, রেনেসাঁ, প্রিয়ন্তী, আশা ও স্বপ্না সাহা। পঞ্চগড় জেলার পরিবেশনায় তথ্যচিত্র প্রদর্শনী জেলা ব্রান্ডিং, সমবেত সঙ্গীত ‘হামার জেলা পঞ্চগড় ও হামার পানি টলমল এবং সোনার বাংলা গড়তে হলে ’ গানের কথায় শিল্পী নুরনবী জিন্নাহ, মো: মাহবুব, শিহাব, আদনান, মঞ্জু ইসলাম, আব্দুল মান্নান, পলি দত্ত, সাবরিনা, শবনম মীম, রোকসানা আক্তার ও মুক্তা রাণী; সমবেত নৃত্য ‘একটি মুজিবরের থেকে এবং কারার ঐ লৌহ কপাট ’গানের কথায় শিল্পী সুমন, পলাশ, লিটু, আনান, উমর ফারুক, লিপু, জ্যোতি, অহনা, নীড় ও তিলোত্তমা দাস; একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী স্বরনীকা বিশ্বাস এবং উপজেলা পর্যায়ের শিল্পী রোকসান আক্তার এবং যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী রঞ্জিত সরকার, জ্যোতি, রউস ও রুহিনী সিংহ। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চগড় জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আবু তোয়াবুর রহমান।
