শ্রদ্ধা-ভালোবাসায় পান্না কায়সারকে স্মরণ করলো উদীচী

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৩, ০৮:৩০ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
শ্রদ্ধা-ভালোবাসা ও গান-কবিতা-আবৃত্তিতে উদীচীর সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক এবং শিশু-কিশোর সংগঠক ও শহীদ জায়া পান্না কায়সারকে স্মরণ করলো বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী।
শনিবার (১৯ আগস্ট) বিকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শোকসভা আয়োজন করে উদীচী।
শোকসভার শুরুতে শহীদ জায়ার প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দ। এরপর শহিদ সন্তানের পক্ষে শ্রদ্ধা জানান জাহীদ রেজা নূর, পরিবারের পক্ষে পান্না কায়সারের পুত্র অমিতাভ কায়সার, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে শহিদ সন্তান ডা. নুজহাত চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের পক্ষে সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা। এরপর পান্না কায়সার-এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিরবতা পালন করা হয়।
নিরবতা পালনের পর উদীচীর শিল্পীরা পরিবেশন করেন দুটি সম্মেলক গান। এরপর উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমানের সভাপতিত্বে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। শুরুতে পান্না কায়সারের মৃত্যুতে উদীচীর পক্ষ থেকে শোক জানান উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দে। এরপর পান্না কায়সারের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন তার পুত্র অমিতাভ কায়সার, শহিদ বুদ্ধিজীবীর সন্তান জাহীদ রেজা নূর, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির পক্ষে ডা. নুজহাত চৌধুরী, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর-এর সাধারণ সম্পাদক প্রণয় সাহা, উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম সিদ্দিক রানা, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের পক্ষে ডা. লেলিন চৌধুরী, উদীচীর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইকরাম আহমেদ, উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি মাহমুদ সেলিম, সদস্য কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাস, উদীচীর সাবেক সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. রতন সিদ্দিকী, সাইফুদ্দিন মাহবুব প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, পান্না কায়সারের প্রয়াণে দেশের সংস্কৃতি জগতের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। ১৯৫০ সালের ৫ মে জন্মগ্রহণ করা পান্না কায়সার ছোটবেলা থেকেই প্রগতিশীল চিন্তাচেতনার সাথে পরিচিত হন। ষাটের দশকে স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তাল সময়ে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। সেখানে বাংলা বিভাগে পড়ার সময় তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন মুনির চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মতো কিংবদন্তি শিক্ষকদের। ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে উত্তাল গণঅভ্যূত্থানের সময়েই তিনি শহীদুল্লাহ কায়সারের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। শুরু হয়, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে তার নতুন পথচলা। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পান্না কায়সার-এর স্বামী শহীদুল্লাহ কায়সারকেও আলবদরের সহায়তায় বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এরপর আর ফিরে আসেননি তিনি। স্বাধীনতার পর পান্না কায়সার শিশু-কিশোর সংগঠন খেলাঘর-এর সাথে যুক্ত হন। একইসঙ্গে যুক্ত হন বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও। যুক্ত ছিলেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সঙ্গেও। সারাজীবন ধরেই তিনি জনগণের ন্যায়সঙ্গত অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। পাশাপাশি, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক হিসেবেও নতুন প্রজন্মকে স্বাধীনতার চেতনায় গড়ে তোলার চেষ্টা করে গেছেন। আলোচনা শেষে শোকসভায় একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুরাইয়া পারভীন ও বিপ্লব রায়হান। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন ও শিখা সেনগুপ্তা। এছাড়া, উদীচীর নৃত্য বিভাগের শিল্পীরা ‘ও আলোর পথযাত্রী’ গানটির সঙ্গেও নৃত্য পরিবেশন করেন। পুরো অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম।