জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ ৪১তম অধিবেশন বসছে বৃহস্পতিবার

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ মে ২০২৩, ০৩:৪২ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
সারা দেশের পাঁচ শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠকদের নিয়ে আগামী বৃহস্পতিবার (৪ মে) বিকালে রাজধানীতে শুরু হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের ৪১তম সম্মেলন। সেদিন বিকাল ৪টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় এই সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার।
মঙ্গলবার (২মে) সকালে ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ। এতে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিষদের চারজন সহ-সভাপতি মফিদুল হক, ডা.সারওয়ার আলী, লিলি ইসলাম, বুলবুল ইসলাম ও লাইসা আহমদ লিসা।
শর্মিলা বন্দোপাধ্যায় জানান, পরিষদের শিল্পীদের সম্মিলিত কণ্ঠে ‘তুমি নব নব রূপে এসো প্রাণে’ গানে শুরু হবে ৪১তম সম্মেলনের উদ্বোধনী আসর। এ আসরে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমান। যেখানে সম্মিলন ঘটবে সারা দেশের ৭২টি শাখা থেকে সমাগত পাঁচ শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠকদের।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার শিল্পীরা মঞ্চস্থ করবেন গীতিআলেখ্য ‘আন অমৃতবাণী’। এই গীতিআলেখ্য গ্রন্থনা করেছেন মহুয়া মঞ্জরী সুনন্দা ও দীপ্র নিশান্ত; নৃত্য পরিচালনা করবেন সুদেষ্ণা স্বয়ংপ্রভা তাথৈ। পরে সন্ধ্যায় সঙ্গীতানুষ্ঠান, আবৃত্তি ও শেষে জাতীয় সংগীত পরিবেশনায় শেষ হবে প্রথম দিনের অধিবেশন।
শুক্রবার সকালে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের প্রীতি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। পরে বিকাল ৫টায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার।
এবারের বিষয় : ‘নদী তীরের প্রেমের গান’। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন অধ্যাপক রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। এ সেমিনারে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমান। আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক মো. শাহ আযম শান্তনু ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী আজিজুর রহমান তুহিন।
এদিন সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হবে গীতিআলেখ্য ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’, ছায়ানটের শিল্পীদের এ পরিবেশনাটি পরিচালনা করবেন শর্মিলা বন্দোপাধ্যায়। শনিবার বিকেলে সমাপনী অধিবেশনে রবীন্দ্র পদক তুলে দেয়া হবে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম ও সংগীতজ্ঞ অধ্যাপক আ ব ম নুরুল আনোয়ারকে।
সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক অনুপম সেন। সমাপনী বক্তব্য দেবেন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সভাপতি সনজীদা খাতুন। এদিন তামান্না রহমানের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হবে গীতিআলেখ্য ‘বিদায় অভিশাপ’।
জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সহ-সভাপতি সারওয়ার আলী বলেন, এবার সম্মেলনের সূচি এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে আগত দর্শকের মনে হবে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতি পর্বে কতটা প্রাসঙ্গিক।
১৯৭৯ সালে জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলনন পরিষদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ’ নামে। ১৯৮১ সালে বিভাগীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রতিযোগিতা ও সম্মেলন অনুষ্ঠানসহ প্রথম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের আয়োজন করে ‘জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ’।
১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে এই সংগঠনের উদ্যোগে ব্যাপকতর ভিত্তিতে ‘দ্বিতীয় জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন প্রস্তুতি পরিষদ’ গঠন করে দ্বিতীয় জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন আয়োজন করা হয়। এরপর দেশব্যাপী বৃহত্তর পরিসরে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার লক্ষ্য নিয়ে পরবর্তীকালে বাঙালির চিরকালের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত করে সংগঠনের নাম করা হয় ‘জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ’।
প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দিকের বার্ষিক অধিবেশনগুলো কেবল রাজধানী ঢাকাতেই হতো। শাখাগুলিকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং সংস্কৃতিচর্চার ব্যাপকতর প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে নেয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বার্ষিক অধিবেশন হচ্ছে - এক বছর ঢাকায়, পরের বছর অন্য কোনো জেলায়। সেই থেকে সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন হচ্ছে এক বছর পর পর, কেবল ঢাকার অধিবেশনে।
রাজধানীর বাইরে প্রথম জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সলে চট্টগ্রামে। এরপর থেকে এক বছর অন্তর বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ বছর ১৭ মার্চ থেকে নওগাঁয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সাংগঠনিক কিছু অসুবিধার কারণে ৪১তম বার্ষিক অধিবেশন ঢাকাতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শর্মিলা বন্দোপাধ্যায় বলেন, শিক্ষার আলোকে সবার চিত্তকে আলোকিত করতে পারলেই সার্বিক স্বাধীনতা সাধন করা সম্ভব। ওই বিচিত্র বিধানে দীক্ষিত হতে পারলেই আমরা রবীন্দ্রনাথকে নব নব রূপে প্রাণে নিতে পারব। তার বাণী আমাদের উদ্দীপ্ত করুক, জাগ্রত করুক এই আকাঙ্খা নিয়ে এবারের রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনে আমরা মিলিত হব।