রহস্যে ঘেরা তাপসের ‘কালোঘর স্টুডিও’, কী হতো সেখানে?

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১২ পিএম

কৌশিক হোসেন তাপস
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কেন্দ্রিক রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানায় হত্যাচেষ্টা মামলায় দেশের একমাত্র সংগীতভিত্তিক টিভি চ্যানেল গান বাংলার চেয়ারম্যান কৌশিক হোসেন তাপসকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তাপসকে সাত দিনের রিমান্ডে নেয়ার জন্য আবেদন করেছে পুলিশ। এর শুনানি হবে বুধবার। তাপসকে গ্রেপ্তারের পর আলোচনায় এসেছে তার ‘কালোঘর স্টুডিওর’ নাম। গানবাংলা ভবনে সেই বিশেষ স্টুডিও ছিল। সেটি কালো কাঁচে ঢাকা থাকত; ফলে এর নাম হয় ‘কালোঘর স্টুডিও।’
আবৃত্তিশিল্পী রবিশঙ্কর মৈত্রীর ‘গানবাংলা’ বিনোদন চ্যানেলটি ছিল। ২০১১ সালের ২৪ অক্টোবর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় থেকে গানবাংলা টেলিভিশনের লাইসেন্স পান তিনি। ২০১২ সালের ১ জুলাই তাপস আর ফারজানা আরমান মুন্নী ৮০ লাখ টাকার দুটি শেয়ার কিনে পরিচালক হন। রবিকে কৌশলে সাজানো মামলায় ফাঁসিয়ে গানবাংলার সব নিজের নিয়ন্ত্রণে নেন।
অভিযোগ রয়েছে, চ্যানেলটি তাপসকে দিতে সহযোগিতা করেছিলেন তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আশরাফুল আলম খোকন। সেখানে নানা অপকর্ম করতেন তাপস। গানবাংলায় দেশি-বিদেশি শিল্পী নিয়ে আসতেন। ইউক্রেন ও ফিলিফাইনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে নারী শিল্পীদের নিয়ে আসতেন তাপস। তাদের গুলশান ও খিলক্ষেত এলাকার কয়েকটি অভিজাত হোটেলেও লাইভ মিউজিক শিল্পী ও নৃত্য শিল্পী হিসেবে সরবরাহ করতেন। এর মাধ্যমে তিনি হাতিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা।
কালোঘর স্টুডিও : গানবাংলা ভবনে ‘কালোঘর স্টুডিও’ নামে বিশেষ স্টুডিও ছিল। চারদিকে কালো কাঁচে ঢাকা থাকত স্টুডিওটি। ফলে এর নাম হয় ‘কালোঘর স্টুডিও।’ সেখানে প্রায় প্রতিরাতে বসত বিশেষ আসর। আসরে থাকতেন দেশি-বিদেশি মডেল, নায়িকা ও তরুণীরা। সেখানে মদ ও সিসা সেবন করা হতো; জড়ো হতো বিশেষ শ্রেণির ধনী মানুষ। পছন্দ মতো বিশেষ জনের সঙ্গে একান্তে সময় কাটানোর ব্যবস্থা রয়েছে কালোঘর স্টুডিওতে। সেগুলো ভিডিও করে রাখতেন তাপস। সেখানে যাওয়া ব্যক্তিরা পরবর্তীতে ক্রমাগত ব্লাকমেইলিংয়ের শিকার হয়েছেন।
গত রবিবার দিবাগত রাতে তার মালিকানাধীন গানবাংলা চ্যানেলের কার্যালয়ের সামনে থেকে হত্যাচেষ্টা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার কর হয়। মামলার সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই ইশতিয়াক মাহমুদ নামে এক ব্যবসায়ীসহ অন্যান্যরা কর্মসূচিতে অংশ নেন। উত্তরা পূর্ব থানাধীন ৪ নম্বর সেক্টরের আজমপুর নওয়াব হাবিবুল্লাহ হাই স্কুলের সামনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ হামলা চালায় এবং গুলিবর্ষণ করে। ইসতিয়াকের পেটে গুলি লাগে। তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে মামলা দায়ের করেন।
এর আগে গত ৫ আগস্ট রাজধানীর প্রগতি সরণীতে অবস্থিত দেশের একমাত্র সংগীতভিত্তিক টিভি চ্যানেল গান বাংলার ভবনে হামলা চালানো হয়। চ্যানেলটির স্টুডিও সেটআপ, শুটিং ফ্লোর, সাউন্ড সিস্টেম, এডিটিং প্যানেল, সম্প্রচার যন্ত্রসহ কয়েক কোটি টাকার সরঞ্জাম ধ্বংস হয়ে যায়।