×

খুলনা

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

কিডনি ডায়ালাইসিস ও সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট, চরম ভোগান্তিতে রোগীরা

Icon

মসিউর ফিরোজ, সাতক্ষীরা থেকে

প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৫০ পিএম

কিডনি ডায়ালাইসিস ও সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট, চরম ভোগান্তিতে রোগীরা

ছবি: ভোরের কাগজ

   

চিকিৎসা সেবায় খ্যাতি সম্পন্ন সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস ও সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট ৯ মাস ধরে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বারবার ধর্না ধরেও কোন প্রতিকার না পেয়ে চরম হতাশা প্রকাশ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

সামেক হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ এসব মেশিন নষ্টে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাতক্ষীরাসহ আশপাশের জেলার রোগীরা। পুরাতন মেশিন মেরামত ও ৫৫ টি নতুন কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বরাদ্দ চেয়ে পত্র প্রেরণ করা হলেও আজ পর্যন্ত কোন সুরাহা হয়নি বলে জানিয়েছে হাসপাতালের পরিচালক।

এছাড়াও বিগত চার মাস ধরে একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিনটিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং বন্ধ আছে সব কার্যক্রম। সেই থেকে মেরামতের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার জানানোর পরও কোনো প্রতিকার হয়নি বলে জানিয়েছে এই কর্মকর্তা।

তাহলে কি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাফিলতিতে দীর্ঘ সময়ে নষ্ট থাকা মেশিনগুলো মেরামত হচ্ছে না?

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত সামেক হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসা সেবার লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ১৯ টি কিডনি ডায়ালাইসিস ও একটি মাত্র সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপন করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ৯ মাস ধরে কিডনি ডায়ালাইসিসের ১১ টি ও ৪ মাস নষ্ট হয়ে পড়ে আছে একটি মাত্র সিটি স্ক্যান মেশিন। এতে করে চরম দূর্ভোগে পড়েছে সাতক্ষীরাসহ পাশের জেলার রোগীরা।

আরো জানা গেছে, হাসপাতালে ১৯ টি মেশিনের মধ্যে ১১ টি ও একটি মাত্র সিটি স্ক্যান মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলো সচল আছে সেগুলোতে সিরিয়াল পেতে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছে জীবন মরণের সন্ধিক্ষনে থাকা রোগীদের। শুধু সাতক্ষীরা নয়, খুলনা, যশোরসহ আশপাশের জেলা থেকেও কিডনি রোগী ডায়ালাইসিস করতে আসেন এখানে।

হাসপাতাল প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে কিডনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় প্রত্যাশিত সেবা বঞ্চিত হচ্ছে কিডনি রোগীরা।

দেখা গেছে, প্রতিদিন দুর-দুরান্ত থেকে কিডনি ডায়ালাইসিস ও সিটি স্ক্যান সম্পর্কিত হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আশা রোগীরা সিরিয়াল না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে অনেক রোগী। বাধ্য হয়ে অনেককে বেশি টাকা খরচ করে বাইরের হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে ডায়ালাইসিস করতে হচ্ছে। এতে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছে সাধারণ কিডনি রোগীদের। তাছাড়া হাসপাতালে ভর্তি কিডনি, সাধারণ ও দুর্ঘটনায় আহত রোগী স্বাস্থ্য পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রাত-বিরাতে শঙ্কাটাপন্ন রোগী নিয়ে ছুটতে হচ্ছে বেসরকারি ক্লিনিকে। গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। তাছাড়া রিপোর্ট দিতে বিলম্ব হওয়ায় ব্যহত হচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (কিডনি রোগ) না থাকায় চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন দৈনন্দিন হাসপাতালে আসা রোগীরা। এছাড়া দৈনিক রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

স্থায়ী কিডনি বিকল রোগীদের কিডনি প্রতিস্থাপন হলো সর্বোত্তম চিকিৎসা। কিন্তু বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না বিভিন্ন কারণে। তাই বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে ডায়ালাইসিস চিকিৎসা রোগীর জীবন বাঁচানোর একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায়।

চিকিৎসকদের মতে, স্বাস্থ্য রক্ষায় কিডনির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যখন ব্যক্তি সুস্থ থাকে, তখন কিডনি শরীরের পানি ও খনিজ পদার্থের (সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, সালফেট) অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য বজায় রাখে। অ্যাসিডিক মেটাবলিজমের শেষ পণ্য যা শরীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে পরিত্রাণ পেতে পারে না তাও কিডনির মাধ্যমে নির্গত হয়। কিডনিও এন্ডোক্রাইন সিস্টেমের একটি অংশ হিসেবে কাজ করে, এরিথ্রোপয়েটিন, ক্যালসিট্রিওল এবং রেনিন তৈরি করে। এরিথ্রোপয়েটিন লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে জড়িত এবং ক্যালসিট্রিওল হাড় গঠনে ভূমিকা পালন করে। ডায়ালাইসিস কিডনির কার্যকারিতা প্রতিস্থাপনের জন্য একটি অসম্পূর্ণ চিকিত্সা কারণ এটি কিডনির আপোষকৃত এন্ডোক্রাইন ফাংশনগুলোকে সংশোধন করে না। ডায়ালাইসিস ট্রিটমেন্ট এই ফাংশনগুলোর কিছুকে ডিফিউশন (বর্জ্য অপসারণ) এবং আল্ট্রাফিল্ট্রেশন (তরল অপসারণের) মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করে। ডায়ালাইসিসে অত্যন্ত বিশুদ্ধ (‘আল্ট্রাপিওর’ নামেও পরিচিত) জল ব্যবহার করা হয়।

কিডনি ডায়ালাইসিস হচ্ছে একটি প্রসেস বা প্রক্রিয়া। প্রতি মুহূর্তে বিপাক কার্যক্রমের ফলে মানবদেহে তৈরি হওয়া বর্জ্য শরীর থেকে বের করে দেয় কিডনি। মানুষের শরীরে যখন কিডনি কাজ করে না, তখন অনেক ধরনের বর্জ্য পদার্থ জমে যায়। সেজন্য কিডনির বিকল্প হিসেবে বর্জ্যগুলো পরিশোধিত করার যে প্রক্রিয়া, সেটিকে ডায়ালাইসিস বলা হয়। অর্থাৎ কিডনির বিকল্প হচ্ছে ডায়ালাইসিস।

কোন রোগীর কিডনি বিকল হলে ডায়ালাইসিস করতে হয়, সেটা অ্যাকিউট রেনাল ফেইলিওর এবং ক্রনিক রেনাল ইনজুরি হতে পারে। ডায়ালাইসিস একটি ব্যয়বহুল চিকিৎসা ব্যবস্থা। সবার জন্য এর ব্যয় বহন করা খুবই কঠিন। ফলে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ (সামেক) হাসপাতালের ১১ টি ডায়ালাইসিস মেশিন দীর্ঘ ৯ মাস ধরে বিকল থাকায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জেলার কিডনি রোগীরা।

ভুক্তভোগীরা বলেন, মাত্র ৪০০ টাকা দিয়ে কিডনি ডায়ালাইসিস করা হয় সামেক হাসপাতালে। বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয় হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা। তবে আট-নয় মাস ধরে হাসপাতালের ১৯ টি মেশিনের ১১ টি ডায়ালাইসিস মেশিন নষ্ট থাকায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগী সিরিয়াল না পেয়ে ডায়ালাইসিস করাতে পারছেন না। অত্যাবশ্যকীয় এই স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ছে অনেক কিডনি রোগীদের। ফিরে যেতে হচ্ছে অনেক রোগীকে।

সরকারি খরচে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালটি চালু হলেও কাঙ্ক্ষিত সেবা মিলছে না। ডায়ালাইসিস ও সিটি স্ক্যান মেশিন বিকল থাকায় স্বল্প আয়ের রোগীরা পড়েছেন বেশি বিপাকে। দ্রুত এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. কুদরত-ই-খোদা বলেন, ২০১৩ সাল থেকে পর্যায়ক্রমে ১৯ টি কিডনি ডায়ালাইসিস ও একটি মাত্র সিটি স্ক্যান মেশিন স্থাপন করা হয়। এসব মেশিনের বয়স আট-নয় বছর পেরিয়ে গেছে। তারপরও কখনো কখনো মেরামত করে চালানো হয় কিডনি ডায়ালাইসিসের কাজ। তবে আট-নয় মাস ধরে ১১ টি ডায়ালাইসিস ও একমাত্র সিটি স্ক্যান মেশিন প্রায় ৫ মাস নষ্ট হয়ে আছে। তাছাড়া একজন কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও দরকার। পুরাতন মেশিন মেরামত ও ৫৫ টি নতুন ডায়ালাইসিস মেশিন ও কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চেয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। যদিও এখনো সেগুলো পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সেবা বিভাগ সচিব সাইদুর রহমান বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি। যত দ্রুত সম্ভব সব সমস্যার সমাধান করা হবে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App