ব্যারিস্টার আরমানকে নিয়ে ব্রিটিশ সাংবাদিকের প্রশ্ন, ক্ষেপে গেলেন টিউলিপ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
২০১৬ সালের ৯ আগস্ট জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলির ছেলে ব্যারিস্টার আরমানকে তার নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এরপর থেকেই তার আর কোনো হদিস মেলেনি। তার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়, তবে ২০২৩ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ হাসিনার শাসন পতিত হলে দীর্ঘ আট বছর পর মুক্তি পান আরমান। মুক্তির পর জানা যায়, তিনি এই সময়টিতে শেখ হাসিনার গোপন কারাগার ‘আয়না ঘর’-এ আটক ছিলেন। মুক্তি পেয়ে আরমান এতটাই রুগ্ন হয়ে যান যে তাকে চেনা কঠিন হয়ে পড়ে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস গত বুধবার এই ঘটনা নিয়ে একটি চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে ব্যারিস্টার আরমানের নিখোঁজ হওয়ার পরের ঘটনা সামনে আনা হয়েছে। ২০১৭ সালে, ব্রিটিশ গণমাধ্যম চ্যানেল-৪-এর সাংবাদিক একবার টিউলিপ সিদ্দিককে প্রশ্ন করেছিলেন, কেন না শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে হওয়ার কারণে তার ফোন কল আরমানের মুক্তির জন্য সহায়ক হতে পারে। কিন্তু এই প্রশ্নে ক্ষিপ্ত হয়ে যান টিউলিপ। পরবর্তীতে তার ক্ষমতা ও প্রশাসন ব্যবহার করে আরমানের স্ত্রীকে হেনস্তা করার অভিযোগ ওঠে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে ব্যারিস্টার আরমান জানিয়েছেন, চ্যানেল-৪ এর প্রতিবেদনের কয়েক ঘণ্টা আগে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী তার বাসায় এসে স্ত্রীর কাছে কঠোরভাবে প্রশ্ন করে এবং তাকে হুমকি দেয়। তাদের আচরণ ছিল একদম সন্ত্রাসী জিজ্ঞাসাবাদের মতো। আরমান জানিয়েছেন, টিউলিপের কাছে প্রশ্ন করার বিষয়টি সম্ভবত শেখ পরিবারকে আঘাত দিয়েছিল, যা প্রশাসনিক পদক্ষেপের কারণ।
২০১৭ সালের ২৫ নভেম্বর, চ্যানেল-৪ এর সাংবাদিক টিউলিপ সিদ্দিকের কাছে গিয়ে আরমান সম্পর্কে জানান এবং বলেন, আপনার একটি ফোন কল অনেক পার্থক্য তৈরি করতে পারে। এই মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হয়ে টিউলিপ সিদ্দিক সাংবাদিককে বলেন, আরমান কি আপনার সংসদীয় আসনের কেউ? তিনি কি ব্রিটিশ?
সাংবাদিক জানালেন, আরমান বাংলাদেশি, এবং তার পরিবার আপনার কাছে একাধিকবার অনুরোধ করেছে। তখন টিউলিপ উত্তেজিত হয়ে বলেন, আপনি কি আমাকে ব্রিটিশ এমপি না, বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ বলছেন? আমি ব্রিটিশ এমপি।
ব্যারিস্টার আরমান লন্ডনে পড়ালেখা করেছিলেন এবং ২০১৬ সালে যুদ্ধাপরাধের মামলায় তার বাবার আইনজীবী ছিলেন। ঠিক এই সময়েই তাকে গুম করা হয়। তার ব্রিটিশ আইনজীবী মাইকেল পলক জানিয়ে দিয়েছেন, চ্যানেল-৪ এর সাংবাদিককে সতর্ক করা হয়েছিল আরমানের স্ত্রীর কাছে, যেন প্রতিবেদনটি প্রকাশ না হয়। ওইদিনই র্যাব সদস্যরা আরমানের বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে জোরাজুরি করে।
ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক এবং তার দল, লেবার পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি। তবে, টিউলিপের এক সহযোগী জানিয়েছেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে তিনি ফরেন অফিসে আরমানের ব্যাপারে পত্র পাঠিয়েছিলেন।
এটি একটি ভয়াবহ উদাহরণ, যেখানে একটি সাংবাদিকতার প্রশ্নের কারণে রাজনীতিকরা প্রশাসনিক ক্ষমতা ব্যবহার করে নাগরিকদের ওপর অমানবিক আচরণ চালিয়েছে।