ঢাবিতে ছাত্রশিবির আগে থেকেই ছিল, গোপনে চলে সাংগঠনিক কার্যক্রম

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ পিএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় পর প্রকাশ্যে এসেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় এনিয়ে আলোচনা আরো তীব্র হয়েছে। গত শনিবার নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আবু সাদিক কায়েম।
এমন একটি সময়ে আবু সাদিক কায়েম নিজের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করলেন যখন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করার আলোচনা চলছে। এমনকী স্থায়ীভাবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারেও প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যেই ছাত্রশিবির নেতার পরিচয় সামনে এনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে নানান আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্যে আসা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যেই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় অন্য রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনগুলো। অন্যদিকে, শনিবার নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা কায়েমকে চিনতেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে। ফলে তার নেতৃত্ব মেনে যারা মাঠে আন্দোলন করেছেন, তাদের অনেকেই এখন প্রতারিত বোধ করছেন।
আরো পড়ুন : প্রকাশ্যে ছাত্রশিবির, 'অস্বস্তিতে' বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা
আবু সাদিক কায়েমে সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন, আমরা আগে থেকেই ছিলাম, পরিস্থিতির কারণেই এতদিন নিজের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এতদিন ছাত্রশিবির কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাতে পারেনি? আর এখনই-বা হঠাৎ কেন তারা প্রকাশ্যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে চাচ্ছে?
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েমের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, পরিচয় জানানোর কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঐক্য যেন হুমকির মধ্যে না পড়ে, সেজন্যই গোপন রেখেছিলাম।
প্রকাশ্যে কার্যক্রম না চালালেও ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেমে ছিল না বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেন, আমরা আগে থেকেই ছিলাম। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের এত জুলুম-নির্যাতনের পরও আমরা শেষ হয়ে যাইনি।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হওয়া সাদিক কায়েম সম্প্রতি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। গত পাঁচ বছর তিনি হলে থেকেই পড়াশোনা করেছেন, গোপনে চালিয়েছেন সাংগঠনিক কার্যক্রমও।
সাদিক কায়েম বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যেভাবে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল, সে কারণেই আমরা এতদিন প্রকাশ্যে আসতে পারিনি।
কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর আগে খাগড়াছড়ির বাসিন্দা সাদিক কায়েমকে ক্যাম্পাসে অনেকে চিনতেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি এবং হিল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। তবে তিনি স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন। এরপর চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্ব পান।
তিনি বলেন, এখন ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতন হয়েছে। তারা বাদে বাকি সব সংগঠনের সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে ক্যাম্পাসে আমরা সুস্থ ধারার রাজনীতি করতে চাই।ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, খুব শিগগিরই নামগুলো প্রকাশ করা হবে।