সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকারের পতনের পর বিশ্বজুড়ে এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে। এর রেশ এখন পৌঁছেছে দক্ষিণ এশিয়াতেও। বিশেষ করে ভারত, যে দেশটি পরমাণু শক্তিধর হিসেবে পরিচিত। এখন ভারত এক নতুন ভূরাজনৈতিক চাপে পড়তে যাচ্ছে। যদিও ভারতের আসাদ সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্পষ্ট নয়, তবে এই পতন দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক সমীকরণে ভারতের স্বার্থের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্ক করছে বিশ্লেষকরা।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানকে পশ্চিম এশিয়ার একটি শক্তি হিসেবে দেখা হয়। যা ওই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সৌদি আরব, ইসরায়েল ও তুরস্কের আধিপত্যের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে ইরান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ইরানের অন্যতম মিত্র ভারত। 

মধ্যপ্রাচ্যে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করা তালমিজ আহমেদ বলেছেন, ইসরায়েল যদি মধ্যপ্রাচ্যকে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়, তা ভারতের জন্য কোনোভাবেই মঙ্গলজনক হবে না। তিনি সতর্ক করেছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে যদি ইরান দুর্বল হলে ভারতের স্বার্থও দুর্বল হয়ে যাবে, যার ফলে ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একইভাবে, উপসাগরীয় দেশগুলোতে বসবাসকারী ৮৫ লাখ ভারতীয় নাগরিকের জন্য বাড়তি বিপদের সৃষ্টি হতে পারে।

আরো পড়ুন: ব্রিটিশরা ভারতবর্ষের কতটা আর্থিক ক্ষতি করে গিয়েছে

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ওয়েস্ট এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক অশ্বিনী মহাপাত্র মনে করেন, ইরানকে পশ্চিম এশিয়ায় একটা শক্তি হিসেবে ধরে রাখা ভারতের স্বার্থের জন্যই প্রয়োজন। ইরান দুর্বল হলে সুন্নি শাসকদের আধিপত্য বাড়বে এবং তারা পাকিস্তানকে সমর্থন করবে। একই সঙ্গে অঞ্চলটিতে তুরস্কেরও প্রভাব বাড়বে এবং সেটাও পাকিস্তানকে সাহায্য করবে। এই পরিস্থিতিতে ইরানই পশ্চিম এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য বজায় রাখে।

অধ্যাপক মহাপাত্র আরো জানান, ইরানের মাধ্যমেই ভারত মধ্য এশিয়ার বাজারে পৌঁছায়। ইরানে চাবাহার বন্দর নির্মাণ করছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে ইরান অস্থির হয়ে উঠলে নানান দিক থেকে ভারতের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে আগামী দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে ইরান তার হারানো ক্ষমতা আবার ফিরে পাবে বলে মনে করেন এ অধ্যাপক।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ওয়েস্ট এশিয়া স্টাডিজের অধ্যাপক আফতাব কমল পাশা মনে করেন, পশ্চিম এশিয়ায় ইরান যদি দুর্বল হয় তাহলে ভারতের স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ভারত তার প্রয়োজনীয় গ্যাস ও তেল সস্তায় ইরান থেকে পেতে পারে, কিন্তু আমেরিকার ভয়ে তা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও ইরানের সস্তা তেল ভারতের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।