দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফুজিমোরি মারা গেছেন

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৪ এএম

পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট ফুজিমোরি মারা গেছেন। ছবি: সংগৃহীত
পেরুর সাবেক প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফুজিমোরি মারা গেছেন, তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) তার মেয়ে কেইকো ফুজিমোরি এক আবেগঘন বার্তায় তার বাবার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ক্যানসারের সাথে দীর্ঘ লড়াই শেষে এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ফুজিমোরি ১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত পেরুর শাসনভার পরিচালনা করেন। এই এক দশক ছিল পেরুর জন্য রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিকভাবে এক অস্থির সময়, যা তার নেতৃত্বে কিছুটা স্থিতিশীলতা পেলেও শেষ পর্যন্ত দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে কলঙ্কিত হয়ে পড়ে।
ফুজিমোরি এমন একজন নেতা ছিলেন, যার কাজ একদিকে যেমন প্রশংসিত হয়েছে, অন্যদিকে সমালোচনার মুখেও পড়তে হয়েছে। তার শাসনামলে পেরুর অর্থনীতিতে উন্নতি এসেছিল, কিন্তু বামপন্থী গেরিলাদের দমনে তিনি যে কঠোর নীতি অনুসরণ করেছিলেন, তা নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় পরিচালিত তার কঠোর অভিযানে বহু সাধারণ মানুষ প্রাণ হারান, যা নিয়ে তীব্র সমালোচনা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ ওঠে।
কিন্তু সেই সময়, ফুজিমোরি অনেক পেরুবাসীর কাছে একজন ত্রাণকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, যিনি দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে তার শাসনের শেষ দিকে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার এতটাই প্রকট হয়ে ওঠে যে, তিনি নিজেই পেরু ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। জাপানে আশ্রয় নেওয়ার পরও দুর্নীতির অভিযোগ তার পিছু ছাড়েনি।
২০০৫ সালে চিলিতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ফুজিমোরিকে পেরুতে ফেরত পাঠানো হয় এবং বিচারে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। তার অপরাধের মধ্যে দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ছিল।
দীর্ঘ ১৫ বছরেরও বেশি সময় কারাগারে থাকার পর, ২০২৩ সালে সাংবিধানিক আদালতের রায়ে তিনি মুক্তি পান। ফুজিমোরির কারাবাস এবং মুক্তির সময়কাল জুড়ে, তাকে নিয়ে পেরুর জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। কেউ তাকে নায়ক মনে করে, আবার কেউ তার কঠোর শাসন এবং দুর্নীতির জন্য তাকে দোষারোপ করে।
আরো পড়ুন: গাজায় স্কুলে বর্বর হামলায় জাতিসংঘের ৬ কর্মীসহ নিহত ১৮
আলবার্তো ফুজিমোরির মৃত্যুতে পেরুর ইতিহাসের একটি জটিল অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটলো। একজন নেতার উত্থান-পতনের এই গল্পটি যেমন শক্তির ও সফলতার, তেমনি সেটি দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মানবাধিকারের ভয়াবহ লঙ্ঘনেরও সাক্ষী। তার জীবনের শেষ মুহূর্তগুলোতে তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হলেও, পেরুর জনগণের মনে তার নামটি চিরকাল এক বিতর্কিত চরিত্র হিসেবে বেঁচে থাকবে।