রুশ হামলায় রক্তাক্ত ইউক্রেন, পলতাভায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৫১

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ এএম

ছবি: বিবিসি
ইউক্রেনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পলতাভা শহরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ৫১ জন নিহত ও ২৭১ জন আহত হয়েছেন। হামলায় একটি সামরিক একাডেমি এবং নিকটস্থ একটি হাসপাতাল আক্রান্ত হয়েছে। ইউক্রেনের স্থলবাহিনী নিশ্চিত করেছে, সামরিক কর্মীরা এই হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলার পূর্বে সতর্কতা এলার্ম বাজানোর পরে সামরিক একাডেমির বেশিরভাগ সদস্যই বোমা হামলা থেকে বাঁচতে আশ্রয়কেন্দ্রে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়। করণ এজন্য প্রয়োজনীয় সময় তাদের হাতে ছিল না। খবর বিবিসির।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এই হামলাকে ‘রুশ হিংস্রতা’ বলে অবিহিত করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেয়া হবে এবং এর কঠোর ও কঠিন প্রতিশোধ নেয়া হবে।
তিনি এসময় ইউক্রেনের মিত্রদের প্রতি আহ্বান জানান তাদেরকে দূর-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের। এই মুহূর্তে ইউক্রেনের হাতে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের স্বল্পতা রয়েছে।
সামরিক ইন্সটিটিউটটির মুখপাত্র মাইকিতা পেত্রভ (২৬) বিবিসিকে হামলার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি মাত্র ২ সপ্তাহ আগেই সেখানে যোগ দিয়েছিলেন। হামলার সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রথম ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানার মাত্র ৩ মিনিটের মধ্যেই দ্বিতীয়টি আঘাত হানে। এসময় চারদিকে অন্ধকার ও ধোঁয়ায় ছেয়ে যায়। ধূলায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাওয়ায় কোনকিছুই ভালোকরে দেখা যাচ্ছিলোনা। অনেক সদস্য এ সময়টাতে বাইরে থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে যায়। তবে ওই সময়য়ে ভবনটির বাইরে থাকা অনেকেই ওই মুহূর্তের হামলায় প্রাণ হারিয়েছেন।
এছাড়া, হামলার সময় এলার্ম বেজে উঠলে বেঁচে যাওয়া অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটে যান। কিন্তু কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রচণ্ড বিস্ফোরণে চারদিকে ধোয়ায় ছেয়ে যায়।
জানা কুলিশোভা (৩০) নামের সামরিক একাডেমির আরেক সদস্য বলেন তিনি বিপদ আচ করতে পেরে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছিলেন। কিন্তু তিনিও সময়মত পৌছাতে পারেননি। হামলায় তিনিও মারাত্মকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। কুলিশোভার স্বামী ডনবাস অঞ্চলে ফ্রন্টলাইনে এইমুহুর্তে যুদ্ধ করছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, এখানে সেনারা রুশ হামলায় মারা যাচ্ছেন, আমি অনেক সেনাকেই ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে থাকতে দেখেছি। তাদের স্ত্রীরা এখনো তাদের স্বামীদের ফেরার অপেক্ষায় আছেন।
এদিকে, ইউক্রেন সরকারের এমপি ওলেক্সি গনচারেঙ্কো জানান, পলতাভায় এলার্ম এবং ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতের মধ্যে মাত্র ৩ মিনিট সময় ব্যবধান ছিল। এমন পরিস্থিতিতে উঁচু ভবন থেকে নামা প্রায় অসম্ভব।
ইউক্রেনের স্থলবাহিনী জানিয়েছে, হামলার পরপরই একটি তদন্ত শুরু হয়েছে। সামরিক স্থাপনাগুলির নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
পলতাভার আঞ্চলিক গভর্নর ফিলিপ প্রোনিন এই হামলাকে ইউক্রেনের ওপর ‘চতুর এবং নির্মম রুশ আঘাত’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন হামলার পর এখনো ১৫ জনের বেশি মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রাশিয়াকে এই হামলার জবাব দেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, এই মুহূর্তে ইউক্রেনের দরকার দূর-পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা তাদের রুশ সন্ত্রাস থেকে রক্ষা করবে।
হামলার পর ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ সরকারেও পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। কৌশলগত শিল্পমন্ত্রী ওলেক্সান্ডার কামিশিন, উপ-প্রধানমন্ত্রী ওলহা স্টেফানিশিনা এবং বিচার, পরিবেশ ও পুনঃএকত্রীকরণ মন্ত্রীদের পদত্যাগের ফলে এই বছরের শুরুতে বরখাস্ত হওয়ার পর মন্ত্রিসভার এক তৃতীয়াংশ পদ শূন্য হয়ে যায়। ফলে আগামী দিনগুলোতে আরো বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরো পড়ুন: শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে যা লিখেছে গার্ডিয়ান
রুশ হামলার পর পলতাভা শহরে এক গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
অনুবাদ: বিবিসি অবলম্বনে