কোটা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৫৭ এএম

ম্যাথু মিলার। ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশে আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে চলমান আন্দোলেনের বিষয়ে অবগত থাকার পাশাপাশি এই ইস্যুতে বাংলাদেশে কী ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ করছে দেশটি।
সোমবার (১৫ জুলাই) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
এদিন ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা মিলারকে প্রশ্ন করেন, সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগের পক্ষে এবং কোটা বাতিলের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছে। ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী প্রতিবাদকারীদের হুমকি দেয়ার পরই ক্ষমতাসীন দলের শাখা বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করেছে এবং এতে প্রায় ৫০০ সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। এমনকি যেসব আহত শিক্ষার্থী জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছিল হাসপাতালের ভেতরে ঢুকে তাদের ওপরও হামলা চালিয়েছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। বাংলাদেশে চলমান ব্যাপক এই বিক্ষোভ নিয়ে আপনাদের অবস্থান কী?
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র অবগত রয়েছে। হামলায় শত শত মানুষ আহত হয়েছেন ও দুজন নিহত হয়েছেন। আমরা এই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।’
তিনি বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ যে কোনো বিকাশমান গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য ভিত্তি হিসাবে কাজ করে। আমরা শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানাই। বাংলাদেশে সহিংসতার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ও হামলার শিকার সকলের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন ম্যাথিউ মিলার।
এর আগে, রবিবার চীন সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’
প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের পর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা বা নাতিপুতি’ বলা হয়েছে অভিযোগ করে রবিবার রাত থেকে প্রতিবাদ শুরু করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ওইদিন রাতেই রোকেয়া হলের মেয়ে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রতিক্রিয়ায় মিছিল বের করেন। মিছিল থেকে এসময় স্লোগান দেয়া হয় ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’। এর পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে শিক্ষার্থীরা দলবেঁধে মিছিল নিয়ে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের সামনে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা চলা বিক্ষোভ শেষে তারা আবারো হলে ফিরে যান।
একই সময়ে (রবিবার মধ্যরাতে) চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
এই ইস্যুতে সোমবার উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাবিসহ দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়। পরে দুপুরে ঢাবির রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নেয় কয়েকশ আন্দোলনকারী। এসময় তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে নানা স্লোগান দেন। তবে তাদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক সমালোচনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের স্লোগানের ভাষা নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন।
সোমবার দুপুর ২টার পর থেকেই ঢাবির বিজয় ৭১ হলসহ বিভিন্ন হলে আন্দোলনকারীদের বাধা দেয় ছাত্রলীগ। এ খবরে আন্দোলনকারীর ছুটে এলে তাদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ, ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজন।
বিকেল ৪টার পর থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। এসময় ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠি-সোটা নিয়ে আক্রমণ শুরু করে। বহু আন্দোলনকারীকে তারা পিটিয়ে আহত করে। হামলায় অনেকের মাথা ফেটে যায়। আন্দোলনকারীরা কোথাও কোথাও প্রতিরোধের চেষ্টা করলে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়।
বিকেল ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চলা সংঘর্ষে শতাধিক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী আহত হন। তাদের অধিকাংশই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া আশপাশের অন্যান্য হাসপাতালেও গেছেন কেউ কেউ।
আরো পড়ুন: প্রচারণায় পরিবর্তন আনতে পারেন বাইডেন
এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও বিকেল থেকে ছাত্রলীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখানে অনেকে আহত হন। এছাড়া সোমবার বিকেলে আন্দোলনে নামেন রাজশাহী, কুমিল্লা, খুলনাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন।