যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাওয়া কে এই কিয়ার স্টারমার?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৬:২৮ পিএম
যুক্তরাজ্যের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেল লেবার পার্টি। ৪১০টি আসনে জয় পেয়েছে দলটি। বড় ব্যবধান গড়ে তুলেছে কনজারভেটিভ পার্টির সঙ্গে। এই পার্টি পেয়েছে ১১৬টি আসন। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে ৩২৬ আসনের জয় প্রয়োজন তাদের। ওদিকে লিবারেল ডেমোক্র্যাটস পার্টি পেয়েছে ৭০টি আসনে জয়। এর মধ্য দিয়ে টানা ১৪ বছর পর যুক্তরাজ্যের ক্ষমতা থেকে সরতে হলো কনজারভেটিভ পার্টিকে। বিদায় নিতে হবে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে। আর সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর পদটি পাকাপোক্ত করলেন লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার।
ভোটের মাঠে লেবার পার্টির এমন সাড়া জাগানো সাফল্যের নায়ক ছিলেন স্যার কিয়ার স্টারমার। স্টারমারের জন্ম রাজধানী লন্ডনে। ৬১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন একজন মানবাধিকার আইনজীবী। তিনি পাবলিক প্রসিকিউশনের ডিরেক্টর এবং ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যার অর্থ স্টারমার ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের সবচেয়ে সিনিয়র প্রসিকিউটর সরকারি কৌঁসুলি ছিলেন। ২০১৪ সালে তাকে নাইট উপাধি দেওয়া হয়েছিল।
আইনজীবী হিসেবে বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের পর স্টারমার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। সাংসদ হন পঞ্চাশের কোঠায় এসে। তবে রাজনীতি নিয়ে তার বরাবরই আগ্রহ ছিল। যুবক বয়সে তিনি ছিলেন উগ্র বামপন্থী। পরিবারের চার সন্তানের মধ্যে স্টারমার বেড়ে ওঠেন দক্ষিণ-পূর্ব ইংল্যান্ডের সারে-তে। তাকে শ্রমজীবী শ্রেণির সঙ্গে জীবনের যোগের কথা প্রায়শই বলতে শোনা যায়। তার বাবা একটা কারখানার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক হিসাবে কাজ করতেন এবং মা ছিলেন নার্স। স্টারমারের পরিবারও কট্টর লেবার পার্টির সমর্থক ছিল। যার প্রতিফলন পাওয়া যায় তার নামে। স্কটিশ খনি শ্রমিক কিয়ের হার্ডির নাম অনুসারে তার নাম রাখা হয়েছিল। তিনি লেবার পার্টির প্রথম নেতা ছিলেন।
বড় হয়ে ওঠার সময় স্টারমারের পারিবারিক জীবন খুব সুখকর ছিল না। দূরত্ব রেখে চলতেন তার বাবা। মা জীবনের দীর্ঘকাল 'স্টিল'স ডিজিজ' নামক এক ধরনের অটো-ইমিউন ডিজিজে ভুগেছেন। রোগের কারণে ধীরে ধীরে হাঁটার এবং কথা বলার ক্ষমতা হারান তার মা। একসময় তার মায়ের পা কেটে বাদ দিতে হয়েছিল।
১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির স্থানীয় যুব শাখায় যোগ দেন স্টারমার। কিছু সময়ের জন্য তিনি উগ্র বামপন্থী একটি পত্রিকার সম্পাদনাও করেছিলেন। স্টারমার পরিবারের প্রথম সদস্য যিনি শিক্ষা লাভ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছেন। লিডস ও অক্সফোর্ডে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি। ব্যারিস্টার হিসাবে মানবাধিকার নিয়ে কাজও করেছেন তিনি। সেই সময় ক্যারিবিয়ান ও আফ্রিকার দেশগুলিতে মৃত্যুদণ্ড বিলুপ্তির জন্য তিনি কাজ করেন।
স্টারমার প্রথমবার সংসদে যান ২০১৫ সালে। লন্ডনের হবর্ন অ্যান্ড সেন্ট প্যানক্রাসের সাংসদ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। কট্টর বাম রাজনীতিবিদ জেরেমি করবিনের নেতৃত্বে লেবার পার্টি তখন বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে। অভিবাসনের মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকলাপ নজরে রাখার জন্য স্টারমারকে 'শ্যাডো হোম সেক্রেটারি' অর্থাৎ (ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেওয়ার পরে স্টারমারকে 'শ্যাডো ব্রেক্সিট মন্ত্রী' হিসাবে নিয়োগ করা হয়। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর লেবার পার্টির নেতা হওয়ার সুযোগ পান তিনি।
১৯৩৫ সালের পর সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতিতে হেরেছিল লেবার পার্টি। যা জেরেমি করবিনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল। সমর্থকদের চোখে স্টারমার একজন বাস্তববাদী মানুষ। যদিও বহু সমালোচকদের মতে, তিনি খুব একটা চৌকস নন। বরং তিনি অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়া একজন রাজনীতিক।