‘প্রলয়’ আসার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন ভোলে বাবা!

স্পোর্টস ডেস্ক
প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪, ০১:১৮ পিএম

স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলে বাবা। ছবি : সংগৃহীত
উত্তর প্রদেশের হাতরাশের আশ্রমে পদদলিত হয়ে ১২১ জন মারা যাওয়ার ঘটনার ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন মূল অভিযুক্ত স্বঘোষিত ধর্মগুরু ভোলে বাবা বা নারায়ণ সকার হরি ওরফে সুরাজ পাল। ভক্তদের দাবি, মঙ্গলবার হাতরাশে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল সে বিষয়ে ভোলে বাবা আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। মৃতদের জীবিত করারও অলৌকিক শক্তির অধিকারী তিনি এমন দাবিও করেছিলেন তিনি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ভোলে বাবার বিষয়ে তার ভক্ত ঊর্মিলা দেবী ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘বাবা (ভক্তদের কাছ থেকে) কিছু নেন না বা চান না। তার সৎসঙ্গে তিনি আমাদের বলতেন—মিথ্যা না বলতে এবং মাংস, মাছ, ডিম ও অ্যালকোহল সেবন না করতে।’ আরো মজার ব্যাপার হলো, ভক্তদের দাবি, মঙ্গলবার হাতরাশে যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছিল সে বিষয়ে ভোলে বাবা আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।
এ বিষয়ে ঊর্মিলার বোন তারামতি বলেন, ‘সৎসঙ্গ অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার আগেই ভোলে বাবা বলেছিলেন, “আজ প্রলয় আসবে” এবং এরপর ঠিকই প্রলয় চলে এসেছে।’ তারামতি মূলত হাতরাশে পদদলিত হয়ে ১২১ জনের মৃত্যুর ঘটনাকে ইঙ্গিত করে এ কথা বলেন।
ভোলে বাবা ২০০০ সালে একবার গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মৃতকে জীবিত করার চেষ্টার অভিযোগে। সে সময় তিনি ১৬ বছরের এক মৃত কিশোরীর মরদেহ তার পরিবারের কাছ থেকে জোর করে নিয়ে গিয়েছিলেন। যদিও তিনি কিশোরীটিকে জীবিত করতে পারেননি। এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। পরে সেই মামলা অবশ্য বন্ধ হয়ে যায়।
নারায়ণ সকার বিশ্ব হরি বা ভোলে বাবাকে তার ভক্তরা একজন নিরাময়কারী, অলৌকিক শক্তির অধিকারী, দুষ্টু আত্মা থেকে মুক্তি দানকারী ধর্মগুরু হিসেবে মনে করেন। ভক্তরা তাকে তাদের ইচ্ছাপূরণকারী হিসেবেও বিবেচনা করেন। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো-এই ভোলে বাবার অনুসারীদের প্রায় সবাই দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ। যাদের মধ্যে শিক্ষার হার খুবই অল্প।
আরো পড়ুন : মর্গের লাশের সারি দেখে হার্ট অ্যাটাকে পুলিশের মৃত্যু
ভোলে বাবার ভক্তদের মধ্যে বিশ্বাস তার পদধূলি নিয়ে তা গায়ে মাখলেই মানুষের সব ধরনের অসুস্থতা দূর হয়ে যাবে। এ বিষয়ে ভোলে বাবার ভক্ত ও অটোরিকশাচালক বিবেক ঠাকুর বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আপনি যদি তার (ভোলে বাবার) পায়ের ধুলো আপনার গায়ে এবং কপালে মাখান তাহলে আপনার সব অসুস্থতা দূর হয়ে যাবে।’
এদিকে, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সৎসঙ্গ অনুষ্ঠান শেষে ভোলে বাবার প্রস্থানের সময় তার পায়ের ধূলি নিতে গিয়ে ভক্তদের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। আর এতেই পদদলনের ঘটনা ত্বরান্বিত হয়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোলে বাবা প্রায় সময়ই অনুসারীদের কাছে ভারতের গোয়েন্দা শাখায় কাজ করেছেন বলে দাবি করতেন। ভক্তদের তিনি বলতেন, গোয়েন্দা সংস্থায় কাজ করা অবস্থায়ই তিনি আধ্যাত্মিকতার দিকে ঝুঁকে পড়েছিলেন। এর ফলে ১৯৯০-এর দশকে তিনি গোয়েন্দা সংস্থার চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।
উত্তর প্রদেশের ইটাহ জেলার বাহাদুর নাগরি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নারায়ণ সরকার। সেখানেই প্রাথমিক পড়াশোনা শেষ করেন। কলেজে পড়াশোনা করা অবস্থায়ই তিনি গোয়েন্দা শাখায় কাজ শুরু করেছিলেন করেছেন বলে দাবি করতেন।
ধর্মগুরু হিসেবে নারায়ণ সরকার হরির একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আছে। আর তা হলো ভারতীয় অন্য গুরুদের মতো তিনি গেরুয়া পোশাক পরেন না। তিনি সাধারণত সাদা স্যুট এবং টাই পরতে পছন্দ করেন। মাঝে মাঝে কুর্তা-পায়জামাও পরেন। ধর্মোপদেশের সময় ভক্তদের কাছে নারায়ণ সরকার প্রায় সময়ই উল্লেখ করতেন, উপহার হিসেবে তাকে যেসব দান করা হয়, তার কোনো কিছুই নিজের জন্য রাখেন না। বরং এসবের পুরোটাই তিনি ভক্তদের জন্য ব্যয় করেন।