ফারাক্কা-তিস্তা চুক্তি: মমতার অভিযোগ নিয়ে যা বলল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ০৫:০৩ পিএম

শেখ হাসিনা-নরেন্দ্র মোদি-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
ফারাক্কা চুক্তির নবায়ন ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সম্পর্কে বাংলাদেশ ও নয়াদিল্লির মধ্যে সমঝোতার ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গকে এড়িয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলেছেন, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই ফারাক্কা ও তিস্তা ইস্যুতে লিখিতভাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে লিখিতভাবে অবহিত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই চিঠিতে ফারাক্কা চুক্তি নবায়ন ও এই সংক্রান্ত পর্যালোচনায় অংশ নেয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে প্রতিনিধি পাঠাতে বলা হয়েছিল।
অতি সম্প্রতি নয়াদিল্লি সফর করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ সফরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তির নবায়ন ও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, আন্তঃরাষ্ট্রীয় এ দুই ইস্যুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে উপেক্ষা করে ঢাকার সঙ্গে সমঝোতা করেছে নয়াদিল্লি। এই নিয়ে ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘‘আমি বুঝতে পেরেছি, ভারত সরকার ভারত-বাংলাদেশ ফারাক্কা চুক্তি (১৯৯৬) পুনর্নবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে; যার মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হতে চলেছে। আপনি জানেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টনের পরিমাণ নির্ধারণের এই চুক্তির পশ্চিমবঙ্গের মানুষের ওপর বিশাল প্রভাব রয়েছে।” পশ্চিমবঙ্গের জনগণ এই ধরনের চুক্তিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।
তিস্তা প্রসঙ্গে চিঠিতে তিনি লেখেন, গত কয়েক বছর ধরে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে গেছে এবং ধারণা করা হচ্ছে— যদি বাংলাদেশের সাথে পানি ভাগাভাগি করা হয়, তাহলে উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষ সেচের পানির অপ্রতুলতার কারণে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়া উত্তরবঙ্গের বাসিন্দাদের পানীয় জলের চাহিদা মেটাতেও তিস্তার পানির প্রয়োজন। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি করা সম্ভব নয়,” ২৪ জুনের চিঠিতে লিখেছেন মমতা।
এর আগে মমতার দল ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসও এ বিষয়ে অভিযোগ তুলে বলেছে- রাজ্যসরকারকে এড়িয়ে কেন্দ্রের এই পদক্ষেপ পশ্চিমবঙ্গকে ‘বিক্রি করার পরিকল্পনা’। ফারাক্কা-গঙ্গা চুক্তিতে রাজ্যসরকারও একটি পক্ষ। কিন্তু নবায়নের বিষয়ে রাজ্যসরকারকে কিছুই জানানো হয়নি। তাছাড়া গঙ্গা পানিবণ্টন চুক্তি বাবদ রাজ্যসরকারের পাওনা টাকা কেন্দ্র এখনো মেটায়নি। গঙ্গার ড্রেজিংয়ের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে, যে কারণে ভাঙন ও বন্যা দেখা দিয়েছে। তবে বিজেপির দাবি, তৃণমূলের এই বিরোধিতা অযৌক্তিক।
১৯৯৬ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে গঙ্গা-ফারাক্কা পানিবণ্টন চুক্তি হয়েছিল; যে চুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গসহ একাধিক রাজ্যসরকার শরিক ছিল। আগামী ২০২৬ সালে এই চুক্তির মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূল বলছে, ২০১৭ সালে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও ফারাক্কা বাঁধের বিরোধিতা করেছিলেন। বন্যা রুখতে ফারাক্কা বাঁধ ‘ডিকমশন’ করার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।