চলতি বছর জানুয়ারি শুরুতে সন্দেশখালির শাহজাহান শেখের বাড়িতে রেশন মামলার তদন্তে গিয়ে হামলার শিকার হন হন ইডির গোয়েন্দারা। এরপর বহু ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী থেকেছে সন্দেশখালি। শাহজাহান শেখের গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে আন্দোলন সম্প্রতি সন্দেশখালি সংক্রান্ত স্টিং ভিডিওতে প্রকাশ্যে আসে। 

গত ৪ মাসে একবারও সন্দেশখালি বা বসিরহাটে আসেননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ১ জুন শুরু হবে বসিরহাটের ভোট। এর আগে তৃণমূলের প্রার্থী হাজি শেখ নুরুল ইসলামের সমর্থনে সভা করতে সেখানে যান মমতা।

এসময় মমতা বললেন- ‘শুনুন যেটা আমি বুঝি না, আপনি বোঝেন না, সেটা দেশ বোঝে। দেশ বোঝে বলেই আমাদের কাছে খবর আসছে। আর খবরটা জেনুইন, যে বিজেপি হারছে, ওরা দেশ থেকে যাচ্ছে। এদের কাজ হচ্ছে মিথ্যে প্রচার করা। চারিদিকে বলে গেল তৃণমূল চোর হ্যায়। সবচেয়ে বড় চোরেদের, ডাকাতের সবচেয়ে বড় ডাকাত কে? বিজেপি দল।’

মুখ্যমন্ত্রী আরো বললেন- ‘যদি আপনাদের মনে হয়, কারো উপরে রাগ আছে, আপনাদের বলার অধিকার আছে। আপনারা একটা চিঠি আমার বাড়িতে পৌঁছে দেবেন। আমি একদিন হোক দু’দিন হোক, ঠিক দেখে নেব। চিঠিটা আর্জেন্ট হলে আগে করে দেব। সব করতে পারি তা তো নয়। কিন্তু ৯৯.৯ শতাংশ ক্ষেত্রে যতটা করতে পারি, করে দিই।’

২৬ হাজার চাকরি বাতিল  নিয়ে বসিরহাটেও সরব মমতা। শুভেন্দু অধিকারী নাম উচ্চারণ না করে কটাক্ষের সুরে বললেন- ‘একজন বোমা ফাটিয়ে ধিন তাক ধিন তাক তা নেচে ২৬ হাজার চাকরি খেয়েছে।

তিনি আরো বলেন- ‘ভোটের আগে কাউকে ২ হাজার, কাউকে ৫ হাজার টাকা দিচ্ছে। পার্টি অফিস থেকে কোটি কোটি টাকা বের হচ্ছে। আর যে সেটা ধরল, তাকেই নির্বাচন কমিশন সাসপেন্ড করে দিল। কিভাবে চলছে আমাদের দেশটা।’  

সন্দেশখালির স্টিং ভিডিয়ো কাণ্ডে ইঙ্গিত করে মমতা বলেন- ‘বিজেপি চক্রান্ত করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে কিন্তু ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয় না।’

মোদীবাবু খবরের কাগজে বড় বড় বিজ্ঞাপন দিয়েছিল মোদীর গ্যারান্টি বলে। আমাদের আক্রমণ করছিল, এটা বেআইনি। আমরা বারবার বিচার চেয়েও পাচ্ছিলাম না। অবশেষে হাই কোর্ট কাল বলে দিয়েছে, হ্যাঁ এটা বেআইনি।  

বসিরহাটের মাছের ভেড়ি প্রসঙ্গে মমতা বললেন- ‘অনেক মাছের ভেড়ি আছে। অনেকে অনেকের ভেড়ি দখল করে নেয়। আমরা তাই একটা পলিসি তৈরি করছি। জোর করে ভেড়ি কেড়ে নেয়া যাবে না। যার ভেড়ি সে চাষ করুক। না হলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলো চালাক। কিন্তু সরকারের রেকর্ডে নাম রাখতে হবে।  সরকারকেও তার জন্য একটা শুল্ক দিতে হবে। তাতে ভেড়িতে অধিকার বজায় থাকবে।’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কটাক্ষ করে মমতা বললেন- ‘আপনার আমলে ভারতবর্ষে সবচেয়ে বেশি মেয়েদের উপর অত্যাচার হয়েছে। উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের উপর অত্যাচার হয়েছে। দলিতদের উপর অত্যাচার হয়েছে। আমাদের এখানে হয় না। আমাদের এখানে যে দু’একটা ঘটনা হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নিই। রাম হোক বা রহিম কেষ্ট হোক বা বিষ্টু। সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, কাউকে ছাড়া হয় না।’ 

নির্বাচনের প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন- ‘২০২১ সালের ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভান্ডার করে দেব বলেছিলাম, করেছি। কৃষকদের সাহায্য করার কথা বলেছিলাম করেছি। যা যা বলেছিলাম সব করেছি। বিনা পয়সায় আপনারা রেশন পাচ্ছেন। ১০০ দিনের কাজের টাকাও আমরা দিয়ে দিয়েছি। যেটা মোদীর দেয়ার কথা ছিল।’ 

এর পাশাপাশি ৫০ দিনের কাজ এবং বাংলার বাড়ি প্রসঙ্গেও ঘোষণা করলেন মমতা। দেড় বছরের মধ্যে বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে যাবেন বলেও ঘোষণা করলেন মমতা। 

মমতা ঘোষণা করেন- ‘সুন্দরবন নিয়ে নতুন মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছি, আপনাদের জেলা নতুন জেলা হবে বসিরহাটের বেশির ভাগ অঞ্চলগুলি নিয়ে একটা জেলা হবে। ওই দিকে বকখালি সাগরদ্বীপ নিয়ে আরো একটা জেলা হবে।’

মমতা বললেন- ‘ভোটের আগে বিজেপির প্ল্যানে ছিল সন্দেশখালি, বাতিল হয়ে গিয়েছে। মা-বোনরাই বাতিল করে দিয়েছেন। সন্দেশখালির মা-বোনদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তার জন্য হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখিত। মা-বোনেদের নিয়ে যেন অসম্মানের খেলা কেউ না খেলে।’