শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল, তবু কীভাবে ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০৫:৩৫ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ভারতে চলে যাওয়ার পর তাকে ফেরত আনার বিষয়ে তোড়জোড় শুরু করেছে ঢাকা। তবে বিষয়টি আরো জটিল করে তুলেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা, যেখানে ৮ জানুয়ারি শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের কথা জানানো হয়। এর প্রেক্ষিতে, ভারত সরকার শেখ হাসিনার ভারতে বসবাসের বৈধতা বাড়িয়ে দিয়েছেন।
ভারতে উদ্বাস্তু আইন না থাকায় ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও) এর মাধ্যমে শেখ হাসিনার রেসিডেন্ট পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল হলেও, আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে পাসপোর্টটি তৃতীয় দেশ বা ভারতের জন্য বৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্ট হিসেবে বিবেচিত।
রেসিডেন্ট পারমিট কী এবং এটি পেতে যেসব শর্ত প্রযোজ্য
১. কোনো বিদেশি নাগরিক ভারতে ১৮০ দিনের বেশি অবস্থান করতে চাইলে রেসিডেন্ট পারমিট প্রয়োজন। ২. ভারতে প্রবেশের ১৪ দিনের মধ্যে এটি আবেদন করতে হয়। ৩. আবেদনটি সংশ্লিষ্ট শহরের এফআরআরও অফিসে জমা দিতে হয়। ৪. আবেদনকারীকে পাসপোর্ট, ভিসা, চার কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং ভারতে অবস্থানের বৈধ ঠিকানাসহ নথি জমা দিতে হয়। ৫. রেসিডেন্ট পারমিটের মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার দুই মাস আগে আবেদন করতে হয়। ৬. ১৬ বছরের নিচে থাকা বিদেশি নাগরিক বা ওভারসিজ সিটিজেনশিপ কার্ডধারীদের জন্য রেসিডেন্ট পারমিট প্রয়োজন হয় না। তসলিমা নাসরিনের মতো শেখ হাসিনার রেসিডেন্ট পারমিটও ভারত সরকার নিয়মিতভাবে নবায়ন করছে।
পাসপোর্ট বাতিল এবং আন্তর্জাতিক আইনের জটিলতা
বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল ঘোষণা করলেও আন্তর্জাতিকভাবে এটি এখনো বৈধ। একটি পাসপোর্ট আন্তর্জাতিকভাবে বাতিল করতে হলে ইন্টারপোলের মাধ্যমে প্রমাণসহ জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। ইন্টারপোলের চূড়ান্ত নোটিশ ছাড়া কোনো পাসপোর্টকে বৈধতা থেকে সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা সম্ভব নয়।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কূটনীতিকের মতে, পাসপোর্ট বাতিলের ঘোষণা শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কার্যকর। তবে তৃতীয় দেশ বা ভারতের জন্য এই পাসপোর্ট এখনো কার্যকর একটি ডকুমেন্ট।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং পরবর্তী পদক্ষেপ
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাকে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ভারতে অবস্থানকালে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের মৌখিক প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সরকার ভারতকে লিখিতভাবে কোনো প্রত্যাবাসনের আবেদন জানায়নি। সাউথ ব্লক জানিয়েছে, আইনি প্রক্রিয়া পর্যালোচনা করতে আরো কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।
আওয়ামি লীগ সরকারের সময়ে অভিযোগ
আওয়ামি লীগ শাসনামলে গুম ও হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২ জন গুম এবং ৭৫ জন জুলাই গণআন্দোলনে হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে এখন অপেক্ষা আইনি জটিলতা এবং আন্তর্জাতিক কূটনীতির ওপর।
আরো পড়ুন: জানুয়ারিতে দেশে আসবেন শেখ হাসিনা, যা জানা যাচ্ছে
আরো পড়ুন: থানা থেকে ওসির ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার, যা জানালেন পুলিশ সুপার
আরো পড়ুন: ইলিয়াসকে উপদেষ্টা বানানোর দাবি সারজিসের, যা জানা গেলো