নেপালের বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি বৃহস্পতিবার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪৮ এএম

পাঁচ বছরের জন্য ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। ছবি : সংগৃহীত
নেপালের দুটি জলবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে নেপাল, ভারত ও বাংলাদেশ যুগান্তকারী একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার। ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে নেপাল ইলেকট্রিসিটি অথোরিটি (এনইএ), ভারতের এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেড এবং বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) স্বাক্ষর করবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎ সচিবের নেতৃত্বে আট সদস্যের উচ্চপর্যায়ের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল এখন কাঠমান্ডুতে অবস্থান করছে। চুক্তির আগের দিন বুধবার প্রতিনিধিদল নেপালের সঙ্গে ষষ্ঠ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি) এবং জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির (জেএসসি) বৈঠক করবে।
এদিকে, নেপালের গণমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, নেপাল সরকার বছরের পাঁচ মাস (১৫ জুন থেকে ১৫ নভেম্বর) বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি করবে। এই পাঁচ মাসে নেপাল বিদ্যুৎ রপ্তানি করে ৯ দশমিক ২১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করবে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান বলেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বৃহস্পতিবার বহুল প্রতীক্ষিত নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনার চুক্তি স্বাক্ষর হবে। এর আগে আমরা নেপালের সঙ্গে দুটি বৈঠকে অংশ নেব। বৈঠকে নেপাল থেকে আরো বেশি বিদ্যুৎ আমদানি ও নেপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বাংলাদেশি বিনিয়োগ বিষয়ে আলোচনা হবে।
ভারতের মুজাফফরপুরের মিটারিং পয়েন্টসহ ধলকেবর-মুজাফফরপুর ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে নেপালের বিদ্যুৎ রপ্তানি করা হবে। ধলকেবার থেকে মুজাফফরপুর পর্যন্ত ট্রান্সমিশন লাইনে কোনো প্রযুক্তিগত ক্ষতি হলে তার ক্ষতিপূরণ বা মেরামতের খরচ এনইএ বহন করবে।
নেপালের বিদ্যুৎ বেহারামপুর (ভারত) থেকে ভেড়ামারা (বাংলাদেশ) পর্যন্ত ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে পৌঁছাবে। এনইএ ২৫ মেগাওয়াটের ত্রিশূলি প্রকল্প এবং ২২ মেগাওয়াটের চিলিম প্রকল্প থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রপ্তানি করতে চায়। উভয় বিদ্যুৎকেন্দ্রই ভারত থেকে বিদ্যুৎ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে।
বাংলাদেশের মন্ত্রিসভার অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটি (একনেক) ২০২৩ সালের ৬ ডিসেম্বর নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির জন্য নীতিগত অনুমোদন দেয়। পরবর্তীকালে বিপিডিবি, নেপাল, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুসারে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পাঁচ বছরের জন্য বিদ্যুৎ কেনার জন্য একটি দরপত্র জারি করে।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় এনইএর একটি দল বিপিডিবির দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে। নেপাল প্রাথমিকভাবে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ৬ দশমিক ৭০ মার্কিন ডলার প্রস্তাব করেছিল। যা হোক, নেপাল ভারতকে ধার্যকৃত মূল্যের চেয়ে কম দাম না দেওয়ার বিষয়ে জোর দিলে ওই সময় চুক্তিটি হয়নি। সিঙ্গাপুরে বিশ্বব্যাংক আয়োজিত সার্ক এনার্জি সেক্রেটারি পর্যায়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর বাংলাদেশ ৬ দশমিক ৪০ ডলার দাম দিতে সম্মত হয়।
দামের বিষয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানো হলেও বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট কমিটি অনেক পরে গত ১১ জুন আমদানিমূল্য অনুমোদন করে। জমা দেওয়া দরপত্রের নথি মূল্যায়ন করার পর বিপিডিবি ৭ জুলাই এনইএকে দরপত্র গ্রহণের অভিপ্রায়ের কথা জানায়।
এনইএ দরপত্রের গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করেছে এবং অবিলম্বে বিপিডিবি থেকে বিদ্যুৎ বিক্রয় চুক্তির খসড়া পেয়েছে। এনইএ তারপর চুক্তির তারিখ নির্ধারণ করে এবং বিপিডিবিকে গত ১০ জুলাই আমন্ত্রণ জানায়।
গত ২৮ জুলাই কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় এই চুক্তি স্বাক্ষরের কথা ছিল। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে সে সময় দেশে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ছিল। তাই তৎকালীন সরকারের পক্ষ থেকে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ায় অপারগতা জানালে কার্যক্রম স্থগিত করে ভারত ও নেপাল। গত ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইডলাইনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির মধ্যে বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে জ্বালানি, বাণিজ্য ও দুই দেশের জনগণের যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা করেন দুই নেতা।
গত ১১ জুন ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ভারতের জাতীয় গ্রিড ব্যবহার করে নেপাল থেকে পাঁচ বছরের জন্য ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি অনুমোদন দেয়।
আরো পড়ুন : আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আগুন, একই পরিবারের ৬ জনের মৃত্যু