সবচেয়ে শক্তিশালী নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর ফ্রান্সের জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সংযুক্ত

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৫ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
ফ্রান্স তার সবচেয়ে শক্তিশালী নিউক্লিয়ার পাওয়ার রিয়্যাক্টরকে সফলভাবে জাতীয় বিদ্যুৎ গ্রিডে সংযুক্ত করেছে। এটি দেশটির জন্য একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, বিশেষ করে অতিরিক্ত বাজেট ও প্রযুক্তিগত সমস্যার পর এই প্রকল্পটি সফল হয়েছে। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সৌদি আরবের প্রভাবশালী গণমাধ্যম আরব নিউজের এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ফরাসি বিদ্যুৎ কোম্পানি ইডিএফ-এর প্রধান নির্বাহী লুক রেমন্ট এক বিবৃতিতে জানান, রিয়্যাক্টরটি ফরাসি জনগণের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে। তিনি বলেন, এই রিয়্যাক্টরটি ফ্রান্সের শক্তির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রো এ বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, এটি দেশের জন্য একটি বড় মুহূর্ত। তিনি এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর হিসেবে অভিহিত করেছেন। ম্যাক্রো আরো জানান, এটি ফ্রান্সের পরিবেশবিদ্যা এবং জলবায়ু রক্ষায় সহায়ক হবে, কারণ এটি নিম্ন কার্বন শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করবে এবং ফ্রান্সের প্রতিযোগিতাকে বৃদ্ধি করবে।
ফরাসি-উন্নত ইউরোপীয় প্রেসারাইজড রিয়্যাক্টর প্রকল্পটি ১৯৯২ সালে শুরু হয়েছিল, যা ১৯৮৬ সালের চেরনোবিল বিপর্যয়ের পর ইউরোপে নিউক্লিয়ার শক্তির পুনরুজ্জীবন ঘটানোর লক্ষ্যে শুরু হয়েছিল। এই রিয়্যাক্টরটি কার্যকরী শক্তি উৎপাদন এবং উন্নত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। বর্তমানে এটি বিশ্বের চতুর্থ প্রজন্মের প্রেসারাইজড ওয়াটার রিয়্যাক্টর হিসেবে পরিচিত। একই ডিজাইনের রিয়্যাক্টরগুলো চীন ও ফিনল্যান্ডে আগে চালু হয়েছে।
এই প্রকল্পটি ইডিএফ কোম্পানির জন্য একটি স্বস্তির খবর, কারণ এটি দীর্ঘ সময় ধরে চলমান সমস্যা এবং বিলম্বের পর শেষ হয়েছে। ইডিএফ-এর প্রধান নির্বাহী লুক রেমন্ট এই ইভেন্টটিকে "ঐতিহাসিক" হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরো বলেন, ফ্রান্সে শেষ রিয়্যাক্টরটি ২৫ বছর আগে সিভাও ২ প্লান্টে চালু হয়েছিল।
ফ্লামানভিল রিয়্যাক্টরটি ফ্রান্সের সবচেয়ে শক্তিশালী রিয়্যাক্টর, যার ক্ষমতা ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। এটি প্রায় দুই মিলিয়ন বাড়ির বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সক্ষম। তবে, রিয়্যাক্টরটি গ্রিডে সংযুক্ত হলেও, এটি আগামী ২০২৫ সালের গ্রীষ্ম পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানো হবে।
ফ্লামানভিল রিয়্যাক্টরের নির্মাণ কাজ ২০০৭ সালে শুরু হয়েছিল, তবে এটি নানা প্রযুক্তিগত সমস্যা ও বিলম্বের মুখোমুখি হয়েছে। প্রকল্পটির নির্মাণকাল ১৭ বছর স্থায়ী হয়েছে। এর মোট খরচ ১৩ দশমিক ২ বিলিয়ন ইউরো (১৩ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার) ছাড়িয়েছে, যা শুরুতে ছিল ৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইউরো।
ফ্রান্সের পরমাণু শক্তি উৎপাদন প্রায় ৬০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ করে এবং দেশটি পৃথিবীর অন্যতম বৃহত্তম নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্রোগ্রামের অধিকারী। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রো পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রে পুনরায় এক উত্তরণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন, যার আওতায় ছয়টি নতুন প্রজন্মের রিয়্যাক্টর নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। ২০২২ সালে তিনি ফ্রান্সের পরমাণু শিল্পের পুনর্জীবন সম্পর্কে ঘোষণা করেছিলেন, যা দেশকে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুক্ত করতে সহায়তা করবে।