২০২৪ ছিল প্রেম ও প্রতিবাদের গানের বছর

এ বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত গানের প্রকাশনা, স্টেজ শো, টিভি আয়োজন সবকিছুই বিগত বছরগুলোর ধারাবাহিকতা মেনে চলছিল। জুন-জুলাই থেকে বদলে যাওয়া শুরু করে সংগীতাঙ্গনের দৃশ্যপট। তবে যথারীতি গত দুই বছরের মতো চলতি বছরের প্রথমভাগে আলোচনায় ছিল সিনেমা ও বিভিন্ন শিল্পীর ফিউশনধর্মী গান। সুপারস্টার অভিনেতা শাকিব খানের ক্রেজ একদিকে যেমন দর্শকে হলমুখী করেছে, তেমনি তার সিনেমার গানগুলো পূরণ করেছেন দর্শক প্রত্যাশা। ‘রাজকুমার’ সিনেমার টাইটেল গান গেয়ে আরো একবার দর্শক-শ্রোতা হৃদয়ে কড়া নেড়েছেন বালাম-কোনাল কণ্ঠশিল্পী জুটি। আসিফ ইকবালের লেখা ও আকাশের সুর করা ‘রাজকুমার’ গানটি দারুণ সাড়া ফেলেছিল। একইভাবে শ্রোতার প্রশংসা কুড়িয়েছে এই সিনেমায় প্রিন্স মাহমুদের সুরে তরুণ শিল্পী আলিফের গাওয়া ‘বরবাদ’ গানটি। তবে বছরের সবচেয়ে আলোচিত ও সাড়া জাগানো গান ছিল শাকিব খান অভিনীত ‘তুফান’ সিনেমায় কনার গাওয়া ‘দুষ্টু কোকিল’।

গানটির কথা-সুর ও সংগীতায়োজনের পাশাপাশি সহশিল্পী হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন আকাশ। একইভাবে ফিউশন-রিমেক গান ‘লাগে উড়া ধুরা’ সমানতালে পাল্লা দিয়েছে অন্যান্য সিনেমার গানের রেডর্ক ভেঙে দেয়ার। প্রীতম হাসান ও দেবশ্রী অন্তরার গাওয়া এই গানের কথা লিখেছেন রাসেল মাহমুদ ও শরীফউদ্দিন; সুর-সংগীতায়োজন করেছেন প্রীতম হাসান ও রাজ্জাক দেওয়ান। শ্রোতা মনোযোগ বেড়েছে এই সিনেমায় আরাফাত মহসিনের সুরে হাবিব ওয়াহিদের গাওয়া ‘ফেঁসে যাই’ গানটিও।

অন্যদিকে তরুণ শিল্পী আহমেদ হাসান সানি প্রশংসা কুড়িয়েছেন ‘মানুষ কেন এ রকম’ গানে কণ্ঠ দিয়ে। গানটি রেকর্ড করা হয়েছি ওয়েব সিনেমা ‘লাস্ট ফিফেন্ডারস অব মনোগামী’-এর জন্য। এই সিনেমার জন্য প্রচলিত গান ‘কমলায় নৃত্য করে’ নতুন করে গেয়ে শ্রোতার মনোযোগ কেড়েছেন ফেজার রহমান। গানটি নতুন করে সংগীতায়োজন করেছেন চিরকুট ব্যান্ডের পাভেল আরীন। কবির বকুলের কথা ও শওকত আলী ইমনের সুরে ‘লিপস্টিক’ সিনেমায় স্নেহার গাওয়া ‘বেসামাল’ ছিল অনেকের মুখে মুখে। গত কয়েক বছর ধরে নাটকের জন্য আলাদা করে গান রেডর্ক করা হচ্ছে। যার মধ্য থেকে অসংখ্য গান জনপ্রিয়তাও পেয়েছে।

এ বছর তার ব্যতিক্রম ছিল না। ইমরান-কনা শিল্পী জুটির ‘প্রেম এসেছিলো একবার’ নাটকের ‘মেঘলা মনে’, ‘এক নজর না দেখলে তার’র ‘পরাণ’, ‘তাহার নামটি মায়া’র ‘জীবন সাথী’, ‘নূরজাহানর’র ‘মায়া’, কোনাল-আভরাল সাহির জুটির ‘মনের আকাশে তুমি’ নাটকের ‘শুধু তোরই থাকবো’, গানের দল কাকতালের ‘সন্ধ্যা ৭টা’র ‘মায়া’, মাহতিম শাকিবের টাইটেল গান ‘একটাই তুমি’, ইমরান-পড়শীর ‘এতটা আপন’সহ আরো বেশ কিছু গান দর্শক-শ্রোতার পছন্দের তালিকায় স্থান পেয়েছে। সিনেমা, নাটকের গানের বাইরে শ্রোতাদের মনোযোগ কেড়ে নেয়ার গানের অন্যতম একটি আয়োজন ছিল ‘কোক স্টুডিও বাংলা’-এর ফিউশনধর্মী আয়োজন ‘মা লো মা’। সাগর দেওয়ান, প্রীতম হাসান, আরিফ দেওয়ান, আলি হাসানের গাওয়া এই গানে আমাদের সংগীতের শিকড় ও লোক সংস্কৃতির ইতিহাসকে নতুনভাবে তুলে আনা হয়েছে। একইভাবে ‘তাঁতী’ গানেও ছিল ঐহিত্য তুলে আনার প্রয়াস। এ আয়োজনে সঙ্গে ছিলেন শিল্পী ও সংগীতায়োজক অর্ণব, গঞ্জের আলী, অলি বয় ও অভিনেত্রী জয়া আহসান। পুরনো গানকে কতটা অভিনব ও সময়োপযোগী করে তোলা যায় তার আরেকটি প্রচেষ্টা ছিল ওয়ারফেজ ব্যান্ডের রিমেক আয়োজন ‘অবাক ভালোবাসা’। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত এই গানের আবেদন ৩০ বছর পরেও এতটুকু কমেনি তার প্রমাণ করেছে ব্যান্ড ওয়ারফেজ ও কোক স্টুডিও বাংলা অনুষ্ঠান আয়োজকরা। গানের বিভিন্ন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম ও ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত একক ও দ্বৈত গানের আয়োজন নিয়ে সারা বছর শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণ করে গেছেন ফাহমিদা নবী, আসিফ আকবর, বাপ্পা মজুমদার, হাবিব ওয়াহিদ, ইমরান, তাহসান, হৃদয় খান, সালমা, লিজা, কর্ণিয়া, বেলাল খান, পড়শী, মাহতিম শাকিব, অবন্তি সিঁথি, আতিয়া আনিসা, তোসিবা, জেফার, জয় শাহরিয়ার, এলিটা করিম, লিমন, জয়িতা, তাসনিম আনিকা, মুজা, সঞ্জয়, আলি হাসান, জিসান খান শুভ, শেখ সাদী, অন্তরা কথা, ব্যান্ড সোলস, ওয়ারফেজ, ব্ল্যাক, আর্টসেল, শিরোনামহীন, ইএফ, চিরকুটসহ আরো বেশ কিছু শিল্পী ও ব্যান্ড। তাদের গাওয়া শ্রোতাপ্রিয় গানের তালিকাও বেশ বড়। তরুণদের অভিনব ও প্রতিবাদী গানের আয়োজনও ছিল বছরজুড়ে। হান্নান নামের এক তরুণ র‌্যাপার আমরা দেখেছি প্রতিবাদী শিল্পীদের সামনের সারিতে। তার গাওয়া ‘আওয়াজ উডা’ গানটিকে সবাই উল্লেখ করছেন সময়ের সাহসী উচ্চারণ হিসাবে। একইভাবে রাজপথে আওয়াজ তুলে গেছেন কণ্ঠশিল্পী সায়ান। তরুণ অভিনেত্রী ও কণ্ঠশিল্পী পারসা মাহজাবীনের গাওয়া ‘চলো ভুলে যাই’ গানটিও হৃদয় আন্দোলিত করেছে কয়েক লাখ শ্রোতার। র‌্যাপ শিল্পী সেজানের গাওয়া ‘কথা ক’ গানটিও আন্দোলনকারীদের মুখে মুখে ফিরছে।