করোনার চেয়েও দুর্নীতি ভয়াবহ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২০, ০১:১১ এএম

কবরী

কবরী

রাজ্জাক-কবরী

কবরী
বিশেষ সাক্ষাৎকার কবরী সারওয়ার চলচ্চিত্র তারকাকবরী সারওয়ার। ষাটের দশকের বাংলা চলচ্চিত্রের একজন জীবন্ত কিংবদন্তি তারকা। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবেও খ্যাতি পেয়েছেন। রাজনীতির অঙ্গনেও সুনাম কুড়িয়েছেন। তার অভিনয় যে একবার দেখেছে, চিনে নিয়েছে বাঙালির রুচির শ্রেষ্ঠ একটি স্থিরচিত্রকে, যিনি চলচ্চিত্রে তার স্থায়ী স্বাক্ষর রেখেছেন। বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়েখ্যাত এই শিল্পী বহু জনপ্রিয় গানে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন। কখনোবা সাত ভাইয়ের এক বোন চম্পা কিংবা কিরণমালা হয়ে তরুণদের স্বপ্নে এসেছেন। কবরী ১৯৬৪ সালে সুভাষ দত্ত পরিচালিত ‘সুতরাং’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীকালে তিনি শতাধিক চলচ্চিত্রে মূল নায়িকা হিসেবে অভিনয় করে জয় করেছেন বাঙালির হৃদয়। ২০০৮ সালে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননাও। জনপ্রিয় এই তারকার করোনাকাল কেমন কাটছে? ভোরের কাগজের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনা যখন শুরু হয়, তখন গেল ১৭ মার্চ আমরা ‘এই তুমি সেই তুমি’র শুটিং শুরু করেছিলাম। অর্থাৎ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন যেদিন ছিল সেদিনই। তখনও ভাবিনি যে এভাবে ডিজাস্টার হবে। এতে করে যে মাপের কাজ করি সেভাবে করতেও পারছিলাম না। আমি যা করি একটু গুছিয়ে করার চেষ্টা করি। শেষে তা একেবারে বন্ধই হয়ে গেল। যে কারণে এতো মন খারাপ হয়ে গেল, তা আর বলে বোঝানো যাবে না। এখনও সে ডিপ্রেশান কাটিয়ে উঠতে পারছি না। আমি তো কাজ পাগল মানুষ। একটা মুড নিয়ে কাজ শুরু করলাম, সে কাজটা যখন ঠিকমতো হলো না, তখন মন ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। অনেক কষ্ট করেছি এই ছবি অনুদানের জন্য। মন আরো খারাপ এই কারণে- এর খরচ বেড়ে গেছে, অনুদানের টাকা দিয়েছে কম। অথচ যারা পারে না তাদের অনুদানের টাকা দিল বেশি! [caption id="attachment_233801" align="aligncenter" width="700"]


তবে ইদানিং একটা কাজ করি, সকালে ঘুম থেকে উঠে দরজা জানালা সব খুলে দিয়ে বারান্দায় একটা সোফায় গিয়ে বসে বসে ভাবি। আমার পাশে সাবেক মন্ত্রী আবুল হোসেন সাহেবের বাসা। সেই বাসার বিশাল ছাদে অনেক গাছ আছে। আমার বারান্দা থেকে দেখা যায় সেই বাগানে সাদা সাদা জবাসহ অজস্র ফুল ফুটে আছে। দেখে মন জুড়িয়ে যায়। অবশ্য আমার বাগানেও আছে। কিন্তু আমার বাগানের সৌন্দর্য দেখতে গেলে ছাদে উঠতে হবে। তাই বারান্দায় দাঁড়িয়ে ওই বাগানটাই দেখি আর ভাবি- কেন এরকম সর্বনাশা সাজা হলো আমাদের? আমরা তো চুরি করিনি, ডাকাতি করিনি, মানুষকে মেরেও খাইনি। তারপরও কেন সৃষ্টিকর্তা এরকম শাস্তি দিচ্ছে। এসব ভাবতে ভাবতে মন কেমন করে ওঠে।এর মাঝে নিউইয়র্কে যে ফাহিম নামে ছেলেটা মারা গেল; সেই মৃত্যুটায় আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। এতো কষ্ট পেয়েছি যে একরাত ঘুমাতেই পারি নি। মনে হচ্ছিল সিনেমার কোনো দৃশ্য চোখের মধ্যে ভাসছে। আফসোস হচ্ছিল, ইস্ কেন একবার ছেলেটা পেছনে তাকালো না! একবার পেছনে তাকালেই তো বেঁচে যেত! এখন আরেকটা দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে- করোনা শেষ হওয়ার পর কাজ করতে পারব কী না। মনমানসিকতা থাকবে কী না। কাজ করতে আর ইচ্ছে করবে? সব মিলে যেমন করেই হোক আমাদের দিন চলে যাচ্ছে। যারা একদম অসহায় তাদের কী হবে? কষ্টের জায়গাটা এতো বিস্তার লাভ করেছে। শান্তি পাচ্ছি না। খুব পীড়িত বোধ করছি। পেটের ক্ষিধে আছে বলেই খেতে হয়। এখন মাঝে মাঝে ভাবি ক্ষিধেটা যদি সৃষ্টিকর্তা না দিত তাহলে বোধহয় মানুষের এতো কষ্ট হতো না। ক্ষিধেটাই মানুষকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। অথচ আমি কিচ্ছু করতে পারছি না। এটা এমন নয় যে, আমার ক্ষিধে আছে অন্যের নেই, তা নয়। এটা আমজনতার সবারই। যাপিত জীবনে এখন এটা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছি যে, এখন আমরা সবাই এক কাতারের হয়ে গেছি। যেখানে উঁচু নীচু ধনী গরীবের কোনো ভেদাভেদ নেই। যা এতো দিন বুঝিনি। বুঝতে পেরে কিছু করতে না পারার যে কষ্ট তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। সব মিলিয়ে ভাষাহীন হয়ে আছি। [caption id="attachment_233803" align="aligncenter" width="600"]

অসুখ ইনফ্লুয়েঞ্জা কিংবা ফ্লু আগেও হয়েছে। এর ওষুধ ছিল। ডাক্তার ডাকলে ডাক্তার আসতেন। এখন প্রতিনিয়তই মনে হচ্ছে- আজকে যদি অসুস্থ হই কোনো ডাক্তার পাবো না। যদি মরে যাই কোনো প্রিয়জন কাছে আসবে না। আমি যদি না-ও দেখি তারপরও প্রাণ যাওয়ার আগে কাউকে না কাউকে থাকতে হয়। সেটাও মনে হয় থাকতে পারবে না। এখন মনে হচ্ছে -করোনার আগে যারা মারা গেছে তারা অনেক ভাগ্যবান। কতো কাজ করার ইচ্ছে ছিল। দেশের জন্য আরো কাজ করবো। কিন্তু সব পরিকল্পনা এভাবে ধূলিসাৎ হয়ে যাবে কল্পনাও করতে পারছি না।বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কী না জানতে চাইলে এই অভিনেত্রী বলেন, করোনার চেয়েও ভয়াবহ হুমকি দুর্নীতি। দুর্নীতির জন্য করোনা বন্ধ হয়েও হলো না। যেখানে মানুষের জীবন বাঁচানো ফরজ, সেখানে জীবন হরণ করার জন্য যে শাহেদের মতো লোকগুলো তৈরি হয়েছে এসব তো একদিনে হয়নি। আরও কতো শাহেদ আছে সেসবের কি সাজা হচ্ছে? এসব দুর্নীতিবাজের কারণে আমাদের দেশটা এক হাত আগালে দশ হাত পেছাচ্ছে। করোনা যা করতে পারেনি দুর্নীতিবাজরা তারচে বেশি করছে। মানুষের খাবার এবং প্রণোদনা থেকে চুরি করছে। আমর তো মনে হয় করোনার চেয়েও ভয়াবহ দুর্নীতি। যা তা অবস্থা। এর থেকে রেহাই পেলেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।