আমার জামার মাপ নিতে চান প্রযোজক নিজেই

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৭ জুন ২০২০, ১১:০২ পিএম

দেবলীনা দত্ত।

দেবলীনা দত্ত।

দেবলীনা দত্ত।

দেবলীনা দত্ত।

দেবলীনা দত্ত।


দেবলীনা বলেন, আমি নিজের চোখে দেখেছি, ভাল এক জন অভিনেতা, তাঁকে এক জন নামকরা পরিচালক প্রমোট করবেন। শুধু তাঁর ছবি নয়, তাঁর চেয়েও বড় পরিচালকের ছবিতে কাস্ট করাবেন। তো সেই কারণে অভিনেতা সারা ক্ষণ পরিচালকের পেছন পেছন ঘুরছে। তাঁর ব্যাগ বয়ে দিচ্ছে, তাঁর মোবাইল পার্সের দায়িত্ব নিচ্ছে। আমরা পার্সোনাল অ্যাটেন্ড্যান্ট দিয়ে যা করাই সে তাই করছে। বাজার করছে। বেড়াতে যাচ্ছে। পরিচালকের বাড়ি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছে। সে নিঃসন্দেহে ভাল অভিনেতা, কিন্তু তার মতো আরও দশটা ভাল অভিনেতা আছে। তারা কিন্তু ওই বৃত্তে কোনও দিন ঢুকতে পারবে না। শুধু অভিনেতা নয়, পরিচালকও এক কাজ করছে। প্রযোজকের অফিসে বসেই আছে। আর নায়িকাদের কথা তো বাদ দিলাম। তারা এন্টারটেন না করলে তো কিছুই হবে না। আমাকে যেমন ‘শ্যাওলা’র প্রযোজক বলেছিলেন সেই রকম আর কি! এই আমিই তো কোনও দিন বড় প্রযোজক, পরিচালকের বৃত্তে ঢুকতে পারিনি। ওরা এত দিনে জেনে গিয়েছে, আমি কী পারব আর পারব না। তাই ওরা আমায় ডাকেও না।
তিনি বলেন, এক বন্ধু পরিচালক বলল, ‘‘দেবু, ডিসেম্বরে একটা নতুন ছবির কাজ হবে। ফাঁকা থাকিস। ডেট নেব।’’ এর বেশ কিছু দিন পর ওই পরিচালকের যে ছবিতে আগে কাজ করেছিলাম তার প্রেস মিট ছিল। সেখানে দেখলাম ও নতুন ছবির নাম আর চরিত্রদের কথা ঘোষণা করল। কিন্তু আমার নাম নেই। বড় ব্যানারে প্রচুর মহিলা চরিত্র নিয়ে ছবি, যে ছবিতে আমারও অভিনয় করার কথা ছিল। আমি বন্ধু পরিচালকের কাছে জানতে চাইলাম, ‘‘আমার চরিত্র কোনটা রে?’’ ও বলল, ‘‘তুই তো নেই এই ছবিতে।’’ আমি বললাম, ‘‘ডিসেম্বরে ডেট নিতে বললি, হবে না যে কাজটা জানাবি তো!’’ [caption id="attachment_228410" align="aligncenter" width="1000"]
আর এক জন পরিচালকের প্রসঙ্গ এখানে না আনলেই নয়। আমার খুব কাছের এক জুনিয়র বান্ধবীর মুখে শুনেছি ঘটনা। এক নাম করা পরিচালক কয়েক জন নতুন মুখকে নির্বাচন করে ছবি শুরুর আগে ওয়ার্কশপ করান। তো আমার সেই বান্ধবী তাঁর এক ছবিতে কাজ করার সুযোগ পাওয়ার পরে তাঁকে পরিচালক ওয়ার্কশপে ডেকে পাঠান। ওমা! সে সেই ওয়ার্কশপে গিয়ে শোনে, পরিচালক প্রত্যেক নতুন মেয়েকেই বলছেন, ধরে নাও আমি একটা গাছ, এ বার তোমরা আলাদা করে আমায় ক্রিপার হয়ে দেখাও। আমার বান্ধবী আপত্তি জানায়। ফলে পরিচালক যে তাঁর পরের ছবিতে আমার বান্ধবীকে আরও ভাল চরিত্রের প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন তা আর হয় না। অন্য যারা ক্রিপার হতে পারে তারা কাজ পায়।
[caption id="attachment_228411" align="aligncenter" width="1000"]
আমার বান্ধবীর প্রথম ছবি, যে জন্য সে ওই পরিচালকের ওয়ার্কশপ করতে গিয়েছিল, সেখানে একটা চুম্বন দৃশ্য ছিল। এই বিষয়টা আরও শকিং। ওয়ার্কশপে তিনি চুম্বনদৃশ্য অভ্যেস করতে করতে বান্ধবীর খুব কাছে চলে এসে বলেন, ‘‘এ বার তা হলে চুমুটা খাই?’’ ও তখন শক্ড হয়ে দূরে সরে যায়। পরিচালকের চুমু খাওয়া হয়নি। তখন যে মেয়ে বলবে, হ্যাঁ, চুমুটা আমি খেতে পারি সে নেক্সাসে ঢুকে যায়। তার একের পর ছবির কাজ আসে। আসলে সিস্টেমটা এ রকমই। কোনও এক জন পরিচালক বা অভিনেতাকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। আমি নিজে দেখেছি, এই চুমু খাওয়ার জায়গায় এক জন অভিনেত্রী বলবে, আমি চুমুটা পরিচালকের সঙ্গেই অভ্যাস করব। সবাই মিলে যদি এই সব ক্ষেত্রে না বলা যেত তা হলে কাজ বন্ধ হত। তবেই একটা শিক্ষা দেওয়া যেত। যদিও তা হওয়ার নয়।
যা হয়েছে সেটা হল, বার বার আমার কাজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রযোজক চেয়েছেন, আমি না, ঠিকমতো কথা বলতে না পারা স্টার কিড ছবিতে কাজ করবে। আমার কস্টিউমের মাপ নেওয়া হয়ে গিয়েছিল! তাতে কী?
৯৯ শতাংশ এক হলেও এই বৃত্তে এক শতাংশ ব্যতিক্রম আছেন। তাঁদের জন্য দেবলীনা দত্ত বেঁচে আছে। তাঁরা ব্যতিক্রম বলে মাফিয়া হাউজে তাঁরা ঢুকতে পারবেন না। ওই হাউজগুলোয় ঢুকতে গেলে এক ধরনের কথা বলা, পোশাকে চাকচিক্য থাকতেই হবে। আমরা কারও সঙ্গে দেখা হলে বলি, ‘কেমন আছো’, ওরা বলবে, ‘হ্যালোউ’। হ্যালো-র মধ্যেও ইঙ্গিত থাকে। ওটার মধ্যে না ঢুকে আমরা নন রুলিং পার্টি হিসেবে কাজ করেছি। যাঁরা কাজ করিয়েছেন তাঁদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।