শিক্ষার্থীদের অবরোধ: রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ

রাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৮ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
চট্টগ্রাম ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ ও কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রেললাইন অবরোধ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেশন বাজার সংলগ্ন রেললাইন অবরোধ করেন তারা। এতে রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
এসময় আন্দোলনরত ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ তামিম বলেন, সারাদেশের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে আমরা আন্দোলনে নেমেছি। এখন আমাদের এক দফা এক দাবি, বৈষম্যমূলক সব কোটা যৌক্তিকতার ভিত্তিতে সংস্কার করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনির জন্য কোনো কোটা রাখা যাবে না, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং ভিত্তিহীন। আমাদের দাবি না মেনে নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান বলেন, সরকার ২০১৮ এই বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা সংস্কার বাতিল করে। কিন্তু এই কোটা আবার চালু করা হয়েছে। তাই এখন আমদের এক দফা এক দাবি সংসদে নতুন আইন করে কোটা প্রথাকে সংস্কার করে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা।
রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী সাজেদ আহমেদ বলেন, এটা আমাদের যুক্তিক দাবি। যদি আমাদের এ দাবি আদায়ে কেউ বাধা দিতে আসে তাহলে আমরা তাকে শক্ত হাতে প্রতিহত করবো।
এসময় শিক্ষার্থীরা আরো জানান, গতকাল পুলিশ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়েছে এবং রাবিতে কোটা আন্দোলনে অংশ গ্রহন করায় ছাত্রলীগ এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে হল থেকে বাহির করে দিয়েছে ছাত্রলীগ। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই। আর আমাদের দাবিও যতক্ষণ না মানা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আন্দোলনে থাকবো।
এসময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের এক দফা দাবি পেশ করেন। দাবিটি হলো- সরকারি চাকরিতে সকল পর্যায়ে অযৌক্তিক ও বেষম্যমূলক কোটা বাতিল করে মুক্তিযোদ্ধা, উপজাতি ও প্রতিবন্ধীদের জন্য ন্যূনতম ৫ শতাংশ কোটা জাতীয় সংসদে বিল পাস করতে হবে। এক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা ২, উপজাতি ২ এবং প্রতিবন্ধী কোটা ১টি করে থাকবে।
এর আগে বিভিন্ন হল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে বিশাল মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক ও হল প্রদক্ষিণ করে স্টেশন বাজারের রেলপথে জড়ো হন তারা। এসময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার ভাইয়ের রক্ত কেন? প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার বোনের রক্ত কেন? চট্টগ্রাম-কুমিল্লায় রক্ত কেন? প্রশাসন জবাব চাই, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেব না,’ ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে,’ ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন।
এছাড়াও 'মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন বাজার।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন ম্যানেজার আবদুল করিম বলেন, শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করায় এখন পর্যন্ত দুটি ট্রেন আটকা পড়েছে। গোপালগঞ্জগামী টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস ও পাবনাগামী ঢালারচর এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি আটকে আছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ব্যাপক ছাত্র আন্দোলনের মুখে সরকার নবম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের চাকরি থেকে সব ধরনের কোটা বাতিল করেছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটাও বাতিল হয়। গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এর পর কোটা বাতিলের দাবিতে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়।