তিন্নির রহস্যজনক মৃত্যুতে স্লোগানে উত্তাল ইবি

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২০, ০৫:৪০ পিএম

ইবি শিক্ষার্থীদের মানবন্ধন/ছবি: ইবি প্রতিনিধি

তিন্নি হত্যার জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীদের মানবন্ধন

তিন্নি হত্যার জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীদের মানবন্ধন

ছাত্র ইউনিয়নের সংবাদ বিবৃতি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) সাবেক ছাত্রী উলফাত আরা তিন্নির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে তার সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন তারা। শনিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এসব দাবি নিয়ে মানববন্ধন করে তারা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শতাধিক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধনে অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘আমরা এক মহাসংকটময় ও মর্মান্তিক বিষয় নিয়ে দাঁড়িয়েছি। আমাদের সবার ঘরেই মা-বোন আছে। আমার পরিবার নিরাপদ তো? মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক সেনা সদস্যের পরিবার যদি এভাবে লাঞ্ছিত হয়ে মৃতুবরণ করে। যেদেশে নারী ক্ষমতায়নের কথা শুনি, সেদেশে আমার বোন নিরাপদ নয় কেন? এটা জাতির জন্য কলঙ্ক। তিন্নির সাবেক দুলাভাই সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে নরকীয়ভাবে তিন্নিকে হত্যা করেছে। আমরা তাদের বিচার চাই'।
তাদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে তিন্নি হত্যার বিচার দ্রুত নিশ্চিতকরণে ও সারাদেশে নারীর উপর সহিংসতা বন্ধের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদ। শনিবার (০৩ অক্টোবর) দুপুরে সংসদের দফতর সম্পাদক পিয়াস পান্ডে স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে সভাপতি নুরুন্নবী ইসলাম সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক জি কে সাদিক এসব দাবি জানান।
[caption id="attachment_245246" align="aligncenter" width="921"]
গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ক্যাম্পাস পার্শবর্তী শেখাপাড়া এলাকায় নিজেদের দোতলা বাড়ির নিজ কক্ষ থেকে তিন্নিকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পারিবারিক ঝামেলার জের ধরে সাবেক দুলাভাই জামিরুল ইসলাম বাড়িতে এসে দুই দফায় হামলা চালিয়ে তাঁকে নির্যাতন করেন। পরে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। তিন্নি ঝিনাইদহের জেলার শৈলকুপার শেখপাড়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত ইউসুফ আলীর মেয়ে। তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য পদ্ধতি বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর শেষ করে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন এ মেধাবী ছাত্রী।
[caption id="attachment_245247" align="aligncenter" width="921"]
তিন্নির স্বজনরাও এ ঘটনাকে পরিকল্পিত হত্যাকা- বলে দাবি করেছেন। নিহতের চাচা হেলাল উদ্দিন জানান, তিন্নির বড় বোন মিন্নির একই গ্রামের নুরুদ্দীনের ছেলে শেখপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী জামিরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়। সংসারে অশান্তি থাকায় প্রায় এক বছর হলো তাঁদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে। এ নিয়ে তিন্নির পরিবারের সাথে জামিরুলের ঝামেলা চলছিল। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জামিরুল ১০-১২ জনকে নিয়ে তিন্নিদের বাড়িতে প্রবেশ করে ভাঙচুর চালায়। একপর্যায়ে তাঁরা ফিরে যান। প্রায় দুই ঘণ্টা পর আবারও এসে সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় থাকা তিন্নির ঘরে প্রবেশ করে তার উপর নির্যাতন চালিয়ে তাঁকে হত্যা করেন। পরে হত্যাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য ঘরের সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে যান তাঁরা।
হেলালের দাবি, তাঁর পা খাটের সঙ্গে লাগানো ছিল। এভাবে ঝুললে কেউ মারা যাবে না। তাঁকে হত্যার পর ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। এদিকে তিন্নির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় আটজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার (২ অক্টোবর) রাতে নিহতের মা হালিমা বেগম বাদি হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এ মামলা করেন বলে জানিয়েছেন শৈলকুপা থানার ওসি (তদন্ত) মহসিন হোসেন।
[caption id="attachment_245249" align="aligncenter" width="662"]
তিনি বলেন, তিন্নির মৃত্যু একটা রহস্যজনক ঘটনা। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ পেলে সঠিক ঘটনা জানা যাবে। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ অভিযান চালিয়ে শেখপাড়া গ্রামের কনুর উদ্দীনের ছেলে আমিরুল, খলিলের ছেলে নাঈম ও লাবিবসহ এ পর্যন্ত চার জনকে আটক করেছে। তবে মামলার প্রধান আসামী জামিরুল এখনও পলাতক রয়েছেন। তাকে সহ বাকিদেরকে আটকের চেষ্টা চলছে।