গতকাল (রবিবার ১২ মে) প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সর্বোচ্চ জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী। 

উত্তীর্ণ সবার মধ্যে এখন ভালো কলেজে ভর্তি হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু আসন সংখ্যা সীমিত থাকায় ভালো কলেজগুলোতে ভর্তির সুযোগ পাবেন না বহু জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে দেশের সব কলেজ তাদের নির্ধারিত সংখ্যক আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থীও পাবে না। কারণ, আসনের তুলনায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কম। সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কলেজে আসন আছে ৩৩ লাখের বেশি। এসএসসি পাস করা সব শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরও প্রায় ১৬ লাখ আসন ফাঁকা থাকবে।

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েও সাড়ে আট হাজার শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত কলেজ পাননি। পরে তারা অন্যত্র ভর্তি হন। এবারো একই অবস্থা হবে। কারণ, রাজধানীসহ সারা দেশে আড়াইশর মতো কলেজে ভর্তির আগ্রহ থাকে বেশি। এই আড়াইশ কলেজের মধ্যে রাজধানীর ৩০ থেকে ৩৫টি কলেজে সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়বে। এই কলেজগুলোতে সর্বসাকুল্যে আসন আছে ৩০ হাজারের মতো। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখা আছে। ফলে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখার শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাবেন। তাই বাইরের প্রতিষ্ঠানের জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী এসব কলেজে ভর্তির সুযোগই পাবেন না।

আরো পড়ুন: ১৩ শিক্ষকের স্কুলে ১৪ শিক্ষার্থী সবাই ফেল

শিক্ষা বোর্ডগুলোর মতে, সারা দেশে ভালো বা মোটামুটি ভালো মানের কলেজ আছে ২৪০-২৫০টি। যেগুলোতে সবমিলিয়ে আসন আছে এক লাখের মতো। বিপরীতে এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। তাই ভালো কলেজগুলো যদি কেবল জিপিএ-৫ পাওয়াদেরই ভর্তি করে তারপরও সব প্রার্থী এসব কলেজে ভর্তি হতে পারবেন না। অন্তত ৮০ হাজার শিক্ষার্থীকে ভর্তি হতে হবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় গ্রেডের কলেজে।

বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের তথ্য বলছে, সারা দেশে নয় হাজার ১৮১টি কলেজ ও মাদ্রাসায় একাদশ শ্রেণিতে পাঠদান করানোর অনুমতি রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য আসন আছে প্রায় ২২ লাখের মতো। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পলিটেকনিকে আছে প্রায় দুই লাখ ৪৩ হাজারের বেশি আসন। আর কারিগরি বোর্ডের অধীনে এইচএসসি পর্যায়ে প্রায় নয় লাখ আসন রয়েছে। সবমিলিয়ে আসন রয়েছে প্রায় সাড়ে ৩৩ লাখ। এবার পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার। অর্থাৎ সব শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরও আসন শূন্য থাকবে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ।

একাধিক শিক্ষা বোর্ড সূত্র থেকে জানা যায়, দেশে সাড়ে ১১ হাজার প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণিতে পাঠদান হলেও মূলত আড়াইশ কলেজে ভর্তির আগ্রহ থাকে সবার। এর মধ্যে রয়েছে- প্রায় ২০০টি হলো কলেজ ও মাদ্রাসা, ৪৭টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, একটি গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউট ও একটি গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস ইনস্টিটিউট।

৫১৫টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থাকলেও ডজনখানেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। ডিপ্লোমা ইন কমার্সের সাত প্রতিষ্ঠান ও বিএমটি এবং ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানেও কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়।

আরো পড়ুন: জবি শিক্ষার্থী তিথি সরকারের কারাদণ্ড

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবার একাদশের আসন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। পর্যাপ্ত ভর্তিযোগ্য আসন থাকলেও ভালো কলেজে ভর্তির জন্য যুদ্ধ হবে। শিক্ষার্থীরা যদি নিজ ফল ও নম্বরের দিকে নজর রেখে আবেদন করে তাহলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

প্রতি বছরের মতো এবারো একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। সোমবার শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে এ নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। নীতিমালায় বড় কোনো পরিবর্তন না এলেও কলেজ ফিতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ ব্যাপারে তপন কুমার সরকার বলেন, একাদশে ভর্তির নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী আগামী ২৬ মে থেকে ভর্তির আবেদন শুরু হবে।

এবার তিন ধাপে চলবে আবেদন প্রক্রিয়া। সব প্রক্রিয়া শেষ করে ১ জুলাই থেকে একাদশ শ্রেণিতে ক্লাস শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এসএসসি, দাখিল ও এসএসসি ভোকেশনালে প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে (জিপিএ নয়) ভর্তির মেধাক্রম তৈরি করা হবে। প্রার্থী যেনো তার প্রাপ্ত নম্বর মাথায় রেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পছন্দের তালিকা দেন। নয়তো জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও অনেকে প্রথম ও দ্বিতীয় তালিকায় জায়গা পাবে না।

আরো পড়ুন: ২৬ মে শুরু একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির আবেদন

এবার একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে মোট শূন্য আসনের ৯৩ শতাংশ মেধা কোটা হিসেবে বিবেচিত হবে। এসব শূন্য আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য এবং দুই শতাংশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীন দপ্তর/সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য রাখা হয়েছে। এসব আসনে শিক্ষার্থী না থাকলে তা মেধা কোটায় বিবেচিত হবে। কোটার ক্ষেত্রে আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হলে মেধার ভিত্তিতে তালিকা করা হবে।

হলিক্রস, সেন্ট যোসেফ ও নটর ডেম কলেজ নিজেদের মতো করে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করে। জানা গেছে প্রতি বছরের মতো এবারো এই তিন কলেজ নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি করাবে।

নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ হেমন্ত পিউস রোজারিওর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাইকোর্ট থেকে অনুমতি নিয়ে প্রতি বছর আমরা নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ছাত্র নির্বাচন করি। এবারো একই পদ্ধতিতে ভর্তি করানো হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়।