লিঙ্গবৈষম্যের অবসানে তিন দাবি পূরণের আহ্বান ঢাবি ছাত্রীদের

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২১, ১১:৪০ এএম

পূর্বে পেশকৃত চার দফা দাবির তিন দফায় অনড় ঢাবি ছাত্রীরা। ছবি : সংগৃহীত
লিঙ্গবৈষম্যের অবসানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী সব আবাসিক হলে অভিন্ন নিয়ম চালুর দাবি উঠেছে। সমালোচনার মুখে ছাত্রী হলে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বাদের না থাকার নিয়ম বাতিলের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় বিভিন্ন হলের এক দল ছাত্রী।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের মধ্যে পাঁচটি ছাত্রী হলে ওঠার সময় ২৭টি ধারার একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। এসব নিয়ম শুধু পাঁচটি ছাত্রী হলে কার্যকর, বাকি ১৩টি ছাত্র হলে ওঠার সময় কোনো অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয় না।
ছাত্রীদের হলে অঙ্গীকারনামার একটি ধারায় উল্লেখ আছে, কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তার সিট বাতিল হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।
বিবাহিত হওয়ায় সম্প্রতি বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল ও সামসুন নাহার হলের দুই শিক্ষার্থীর সিট হল প্রশাসন বাতিল করে বলে অভিযোগ ছাত্রীদের।
এরপর তারা এ নিয়ম বাতিলসহ চার দফা দাবিতে সোচ্চার হলে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটি সভা ডেকে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের ক্ষেত্রে থাকা ওই নিয়ম বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়।
বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে সব হলে নিয়মের ক্ষেত্রে লিঙ্গ বৈষম্যের অবসান ঘটানোর দাবি তোলা হয়।
শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ বলেন, আমরা বরাবরই চেয়েছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলগুলোতে যে বৈষম্যমূলক আচরণ প্রশাসন করছে, তার অবসান। এরই পরিপ্রেক্ষিতেই উপাচার্যের কাছে আমরা চার দফা দাবি পেশ করেছিলাম, যার প্রতিটিই আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম দাবিটি প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় মেনে নেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাকি তিনটি মানা হয়নি। আমরা প্রতিটি দাবির বাস্তবায়ন চাই।
১৩ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান বরাবর ছাত্রীরা যে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন, সেখানে হলে ওঠার শর্তে ‘স্থানীয় অভিভাবকের’ পরিবর্তে ‘জরুরি যোগাযোগ’ শব্দটি দিয়ে প্রতিস্থাপন; আবাসিক শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দ্বারা যে কোনো ধরনের হয়রানি ও অসহযোগিতামূলক আচরণ বন্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা সাপেক্ষে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুনর্বহাল ও জরুরি প্রয়োজনে তাদের হলে অবস্থান করতে দেওয়ার দাবির উল্লেখ ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় একেক হলে কেন একেক নিয়ম থাকবে- এ প্রশ্ন তুলে তাসনিম বলেন, ‘আমরা প্রতিটি আবাসিক হলে একই নিয়ম চাই। লিঙ্গভেদে কোনো ধরনের বৈষম্যমূলক নিয়ম করা যাবে না। এর জন্য ছাত্র ও ছাত্রীদের মোট ১৮টি হলের নিয়মাবলি জরুরি ভিত্তিতে নতুন করে সংশোধন করে সব হলের জন্য শিক্ষার্থীবান্ধব ও যুগোপযোগী অভিন্ন নিয়ম প্রণয়নের জোর দাবি জানাচ্ছি। আশা করছি, আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে লিঙ্গবৈষম্য অবসানের পাশাপাশি কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রী এলমা চৌধুরী হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।