পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা হোক

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : সংগৃহীত
গত ১৫ বছরে পাচার হওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা ফেরত আনতে উদ্যোগ নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কয়েক বছর ধরেই দেশের অর্থ বিদেশে পাচার নিয়ে সরগরম আলোচনা চলে আসছে। পূর্ববর্তী সরকার অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখানোর জোর আওয়াজ তুললেও সেই আওয়াজ ছিল দলের নির্বাচনী ইশতেহার কিংবা মঞ্চে নেতা-নেত্রীদের বক্তব্য পর্যন্ত। দেখা যায়নি অর্থ পাচার বন্ধে কার্যকর ও টেকসই কোনো পদক্ষেপ।
আর্থিকসহ সব ধরনের অপরাধ লুকানো, কর ফাঁকি, বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার আইন ও বিনিয়োগ নীতি লঙ্ঘন, অন্য দেশে নিরাপদ বিনিয়োগ এবং উন্নত দেশের উঁচু মানের জীবনযাত্রার লোভে সেখানকার নাগরিকত্ব লাভ- এসব উদ্দেশ্যে অর্থ পাচার হয়ে থাকে। কিন্তু জোরালো উদ্যোগের পর এবার বিদেশে পাচার হওয়া এসব অর্থ ফেরত আনতে দুদককে সাহায্য করছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা। তারই অংশ হিসেবে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে যৌথ টাস্কফোর্স গঠনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (এফবিআই) একটি প্রতিনিধি দল গত সোমবার দুপুরে দুদকের সঙ্গে বৈঠক করে।
এফবিআই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংস্থাটির লিগ্যাল অ্যাটাচে রবার্ট ক্যামেরুন। বৈঠকে দুদকের পক্ষে মানি লন্ডারিং ও লিগ্যাল শাখার কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। ইতোমধ্যে তিন শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে গোপন ও প্রকাশ্যে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। যার মধ্যে রয়েছে তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সাবেক এমপি, ব্যবসায়ী, পুলিশ ও আমলাদের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, এফবিআইয়ের সঙ্গে আলোচনার প্রধান বিষয় হচ্ছে যৌথ টাস্কফোর্স গঠন। ওই টাস্কফোর্স কীভাবে কাজ করলে পাচার করা অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে, আমরা এ বিষয়ে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। দুদকের সঙ্গে এফবিআইয়ের সভা নতুন নয়।
তবে এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। এফবিআইয়ের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করার জোর প্রচেষ্টাও রয়েছে জানিয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, যৌথ টাস্কফোর্সে তাদের সরাসরি সংযুক্তি থাকবে কিনা, সে বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে তারা পরামর্শক হিসেবেও থাকতে পারে। এদিকে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্থিক খাতের গবেষণা সংস্থা গেøাবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) তথ্যানুসারে, বাংলাদেশ থেকে গড়ে প্রতি বছর ৭৫৩ কোটি ৩৭ লাখ ডলার বা ৮০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে। জিএফআইয়ের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বৈদেশিক বাণিজ্যের আড়ালেই বাংলাদেশ থেকে ৪ হাজার ৯৬৫ কোটি ডলার বা সোয়া ৪ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে।
দুর্নীতিবাজদের ধরতে ও পাচার করা অর্থ ফিরিয়ে আনতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। গত রবিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সভা শেষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, টাস্কফোর্সের কর্মপদ্ধতি কী হবে, কারা থাকবে, এর প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ চলছে। একমাত্র রাজনৈতিক সদিচ্ছা ফিরিয়ে আনতে পারে পাচার করা অর্থ। পাশাপাশি আর যেন এক টাকাও পাচার না হয় সেই দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকে, সঙ্গে পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর ব্যবস্থা।