জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ
এবার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হোক

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : সংগৃহীত
জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন অনুযায়ী জামায়াত এবং এর সব অঙ্গ সংগঠনকে ‘সন্ত্রাসী সত্তা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধের দাবি দীর্ঘদিনের। ১৯৭২ সালে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহারের’ কারণে। পরে জিয়াউর রহমানের আমলে তারা রাজনীতি করার অধিকার ফিরে পায়।
আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়ার পর নিষিদ্ধের দাবি জোরালো হয়। তবে গত ১৫ বছরে কার্যকর কোনো উদ্যোগ সরকারের তরফ থেকে নেয়া হয়নি। এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সহিংস রূপ দেয়ার পেছনে বিএনপি ও জামায়াতের বর্বরতা আমরা দেখেছি। এমন বাস্তবতায় জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি উঠে নতুন করে। চার দশক পর সেই দাবি পূরণ হলো। এবার বিচার প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা এক দশক আগে প্রতিবেদন জমা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু সংগঠনের শাস্তি কী হবে, সেটি নির্দিষ্ট না হওয়ায় বিচার শুরু হচ্ছে না। এক দশকেও আইন সংশোধন হয়নি। বিচারের বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে এগোতে হবে।
২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে এবং তার দাঁড়িপাল্লা প্রতীককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকেই জামায়াত আসলে অনিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল এবং তাদের দলীয় কোনো প্রতীক নেই। কিন্তু তারপরও জামায়াত সারাদেশে সংগঠিত হচ্ছে এবং নতুনভাবে সন্ত্রাস এবং সহিংসতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম দৃশ্যমান না হলেও গোপনে কার্যক্রম চালাচ্ছে সংগঠনটি। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর নানা কৌশলে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে স্বাধীনতাবিরোধী এ দলটি। বিএনপির ডাকা আন্দোলনে জামায়াত-শিবির সক্রিয় হয়ে ওঠে। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে তারা জড়িয়ে পুরো রাজধানীতে সহিংসতা চালিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনেও একই চিত্র দেখল দেশবাসী।
সরকারবিরোধী পথে হাঁটা বিএনপিসহ রাজপথের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে আন্দোলনে সক্রিয় দেখা যায় স্বাধীনতাবিরোধী দলটিকে। পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহ, চাঁদা আদায়, ঝটিকা মিছিল থেকে শুরু করে নানা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গোপনে চালিয়ে যাচ্ছেন এ দলটির নেতাকর্মীরা। সামাজিক গণমাধ্যমকে তারা প্রধান প্রচারের নির্ভরযোগ্য জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত এই দলটির প্রথম সারির প্রায় সব নেতা দণ্ডিত হয়েছেন। তাদের কারো কারো ফাঁসিতে ঝুলে জীবনাবসান হয়েছে। কারো প্রাণদণ্ড হয়েছে। কেউ কেউ আজীবন দণ্ড নিয়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে।
শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর সারাদেশে জামায়াতের রাজনীতিতে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এরপরও দলটিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। জামায়াতে ইসলামীর বিচারের প্রসঙ্গটি আটকে আছে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে। সেটিও আটকে আছে একটি মাত্র কারণে, আর তা হলো সংগঠনের সাজা কী হবে, সেটি নির্দিষ্ট করে বলা নেই আইনে। আইন সংশোধনের বিষয়টি বারবার উঠে আসছে। কিন্তু অগ্রগতি নেই। যত দ্রুত সম্ভব আইনের সংশোধনী পাস করা উচিত। স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তিকে নির্মূলে সরকারকেই মূল ভূমিকায় নামতে হবে।