জাতীয় স্বার্থে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হোক

সম্পাদকীয়
প্রকাশ: ৩১ জুলাই ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের লোগো। ছবি : সংগৃহীত
ধর্মভিত্তিক দল জামায়াতের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধের দাবি দীর্ঘদিনের। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়ার পর এই দাবি আরো জোরালো হয়। তবে গত ১৫ বছরে কার্যকর কোনো উদ্যোগ সরকারের তরফে নেয়া হয়নি। এবার কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সহিংস রূপ দেয়ার পেছনে বিএনপি ও জামায়াতের বর্বরতা আমরা দেখেছি। এমন বাস্তবতায় জামায়াত ও শিবিরকে নিষিদ্ধের দাবি উঠছে নতুন করে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে ১৪ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক চলাকালেই প্রধানমন্ত্রী এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছেন। জাতীয় স্বার্থে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ হোক- এটা গণমানুষের দাবি।
২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করে এবং তার দাঁড়িপাল্লা প্রতীককে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এরপর থেকেই জামায়াত আসলে অনিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল এবং তাদের দলীয় কোনো প্রতীক নেই। কিন্তু তারপরও জামায়াত সারাদেশে সংঘটিত হচ্ছে এবং নতুনভাবে সন্ত্রাস এবং সহিংসতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। জামায়াত-শিবিরের কার্যক্রম দৃশ্যমান না হলেও গোপনে কার্যক্রম চালাচ্ছে সংগঠনটি। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকার পর নানা কৌশলে সংঘটিত হওয়ার চেষ্টা করছে স্বাধীনতাবিরোধী এ দলটি। ভেতরে ভেতরে তলা গোছানোর কাজ তারা করছে অতি বিচক্ষণতার সঙ্গে।
বিএনপির ডাকা আন্দোলনে জামায়াত-শিবির সক্রিয় হয়ে ওঠে। শাপলা চত্বরে হেফাজতের সমাবেশে তারা জড়িয়ে পুরো রাজধানীতে সহিংসতা চালিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনেও একই চিত্র দেখল দেশবাসী। সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যের পথে হাঁটা বিএনপিসহ রাজপথের বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে ‘যুগপৎ’ আন্দোলনে সক্রিয় দেখা যায় স্বাধীনতাবিরোধী দলটিকে। পাশাপাশি সদস্য সংগ্রহ, চাঁদা আদায়, ঝটিকা মিছিল থেকে শুরু করে নানা সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড গোপনে চালিয়ে যাচ্ছেন এ দলটির নেতাকর্মীরা।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে এলাকায় এলাকায় তারা করছেন গোপন বৈঠক। আলোচনার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন বসতবাড়ি, কোচিং সেন্টার ও ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সামাজিক গণমাধ্যমকে তারা প্রচারের নির্ভরযোগ্য জায়গা হিসেবে বেছে নিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কার্যক্রম চলছে- হোয়াটসঅ্যাপ, ভাইবার, মেসেঞ্জারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে। কর্মীদের সঙ্গে সাংগঠনিক যোগাযোগ রাখছেন নেতারা। যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত এই দলটির প্রথম সারির প্রায় সব নেতা দণ্ডিত হয়েছেন। তাদের কারো কারো ফাঁসিতে ঝুলে জীবনাবসান হয়েছে। কারো প্রাণদণ্ড হয়েছে। কেউ কেউ আজীবন দণ্ড নিয়ে কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে।
শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর সারাদেশে জামায়াতের রাজনীতিতে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হয়। এছাড়া ২০১৩ ও ২০১৫ সালে আগুন সন্ত্রাসের মামলায় দলটির নেতাকর্মীদের নিয়মিত হাজিরা দিতে হচ্ছে আদালতে। মোকাবিলা করতে হচ্ছে অসংখ্য মামলা। এরপরও তারা সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছেন। দলটিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। জামায়াত সত্যি নিষিদ্ধ হবে কিনা, নিষিদ্ধ হলে জামায়াত কী কৌশল নেবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। দেশবাসী চান, জামায়াতকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হোক। স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তিকে নির্মূলে সরকারকেই মূল ভূমিকায় নামতে হবে।