আর্থিক তথ্য প্রকাশ আরো সীমিত করল বাংলাদেশ ব্যাংক

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ জুলাই ২০২৪, ০৩:১২ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
আর্থিক খাতের নিয়মিত তথ্য প্রকাশ বন্ধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাপ্তাহিক ভিত্তিতে যেসব তথ্য প্রকাশ হতো, সেগুলো মাসে একবার প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। সর্বশেষ সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশে ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় গণমাধ্যমও যথাযথভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে না।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রধান কাজে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূল্যস্ফীতির কারণে ভোগান্তিতে আছেন দেশের মানুষ। এর প্রভাবে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম আকাশ ছোঁয়া। জীবনযাপনের স্বাভাবিক চাহিদা মেটাতে হিমসিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, জোর করে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ ও সুদের হার দীর্ঘদিন আটকে রাখার কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে না। অবশ্য সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি ডলারের দামও কিছুটা বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। কিন্তু এই পদক্ষেপ সময়মতো না নেয়ায় সংকট কাটছে না, এমন অভিমত অর্থনীতিবিদদের।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা অর্থবছরওয়ারি হিসাবে অন্তত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। পুরো বছরে কোনো মাসেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। গত ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। গত বছরের আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল। বিদায়ী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্য ছিল সরকারের। বছর শেষে দেখা গেছে, সেই লক্ষ্যের ধারেকাছেও নেই। নতুন বছরেও মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ নেই, উল্টো বাড়ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র সাইফুল ইসলাম জানান, অনেক তথ্য নিয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে। নতুন তথ্যের সঙ্গে পুরোনো তথ্য মিলিয়ে গণমাধ্যমে আসছে। এ কারণেই নিয়মিত ভিত্তিতে অনেক তথ্য প্রকাশ বন্ধ রাখা হয়েছে।
আরো পড়ুন : আইএমএফের হিসাবে দেশের রিজার্ভ এখন কত, জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ আগে থেকেই তাদের ওয়েবসাইটে সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন আর্থিক সূচকের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে আসছিল। তবে ২০২২ সালের জুলাইয়ে বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিতে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার প্রথমে সীমিত করেন। পরে তা একেবারে বন্ধ করে দেয়া হয়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ বন্ধ করে দেয়া হয়। অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পণ্যভিত্তিক ঋণপত্র (এলসি) খোলার তথ্য সাপ্তাহিক ভিত্তিতে প্রকাশ করে আসছিল। তা দুই বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (সিএমএসএমই) যে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে, আগে তা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশ করা হতো, যা এখন বন্ধ রয়েছে। ব্যাংকভিত্তিক ঋণ ও আমানতের সুদহারসহ বিভিন্ন তথ্য প্রকাশও নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে চলতি সপ্তাহ থেকে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ বন্ধ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আইএমএফ–স্বীকৃত বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী ৪ জুলাই রিজার্ভের স্থিতি ছিল ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকুতে) আমদানি দায় শোধের পর তা কমে হয়েছে ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৬ কোটি ডলার। তবে প্রকৃত রিজার্ভ আরো ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলার কম।
৪ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে মোট রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৮১ কোটি ডলার, যা থেকে আকুতে আমদানি দায় শোধ করা হয়। এরপর রিজার্ভ কমে হয়েছে ২৬ দশমিক ১৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬১৭ কোটি ডলার। দুই বছর আগে দেশে প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৮৫ টাকা, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৯ টাকা। এদিকে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে হয়েছে ১৬ শতাংশ।