×

অর্থনীতি

অতিবৃষ্টি-খরায় উৎপাদন কম, বাড়ছে চায়ের দাম

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৫ অক্টোবর ২০২০, ১১:১০ এএম

   

চলতি বছর চায়ের উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না। অতিবৃষ্টি-খরায় গত বছরের চেয়ে চলতি বছর পিছিয়ে রয়েছে চায়ের উৎপাদন। আবহাওয়াজনিত কারণে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা অনেকটাই অসম্ভব বলে ধারণা করছেন চা সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদন কম হওয়ায় বাজারে চায়ের দাম বাড়ছে। প্রতিটি নিলামে চায়ের দাম বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। প্রাকৃতিক কারণে চায়ের উৎপাদন কমে যাওয়া এবং করোনাজনিত কারণে প্রতিটি নিলামে চা পাতা কম বিক্রি হওয়া। সবমিলিয়ে বড় ধরনের চাপের মুখে রয়েছে দেশের চা শিল্প।

বাংলাদেশ চা বোর্ড সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে দেশে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮ কোটি কেজি। কিন্তু উৎপাদন হয় সাড়ে ৯ কোটি কেজি। এর মধ্য দিয়ে চা শিল্পের ইতিহাসে সর্বকালের সেরা রেকর্ড করেছিল বাংলাদেশ। ২০২০ সালে চায়ের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ কোটি ৭০ লাখ কেজি। কিন্তু এ বছর জুলাই পর্যন্ত চায়ের উৎপাদন পরিমাণ দাঁড়ায় ৩ কোটি ৩৯ লাখ ৯০ হাজার কেজি। দেশীয় বাগানে উৎপাদিত চা বিক্রি হয় চট্টগ্রাম ও শ্রীমঙ্গলের দুটি নিলামকেন্দ্রে। উৎপাদন কম হওয়ায় এবার নিলাম বাজারে চায়ের দাম বাড়ছে। তাতে খুচরা বাজারেও দাম বাড়া অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশীয় চা সংসদ সিলেট ভ্যালি সভাপতি গোলাম শিবলী বলেন, চলতি বছর লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকের চেয়েও কম চায়ের উৎপাদন হবে। এর প্রধান কারণ, শুধু জুন মাসে ৩০ দিনের মধ্যে ২৫ দিন বৃষ্টিপাত হয়েছে। চায়ের জন্য উপযোগী পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায়নি। দিনের বেলা বৃষ্টি হলে চায়ের জন্য ক্ষতি। চায়ের জন্য দিনের বৃষ্টিপাতের চেয়ে রাতে বৃষ্টিপাত সবচেয়ে বড় উপকারী। দিনে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকলে চা গাছগুলো সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য প্রস্তুত করতে পারে না। ফলে চা গাছের দ্রুত কুঁড়ি ছাড়ানোয় ব্যাঘাত ঘটে।

শ্রীমঙ্গল নাহার চা বাগানের ব্যবস্থাপক পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য বলেন, গত বছর আবহাওয়া ভালো ছিল। রাতে বৃষ্টি, দিনে রৌদ্র থাকায় চা উৎপাদন ভালো হয়েছে। এবার তার তুলনায় অনেক কম উৎপাদন হয়েছে। কারণ চা মৌসুমের প্রথম দিকে অধিক খরা, তারপর দিনে ও রাতে অতিবৃষ্টির কারণে সূর্যতাপ না পাওয়ায় চা উৎপাদন কমেছে। গত বছরের চেয়ে এখন পর্যন্ত ১৩ শতাংশ চা কম উৎপাদন হয়েছে বলে জানান তিনি।

কুলাউড়ার গাজীপুর চা বাগানের সিনিয়র ম্যানেজার শেখ কাজল মাহমুদ জানান, মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত প্রচণ্ড খরার কারণে নতুন পাতা গজাতে পারেনি। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে ব্যাপক বৃষ্টিপাত শুরু হলে প্রয়োজন মতো সার ও কীটনাশক দেয়া যায়নি। এ ছাড়া প্রায় সারাদিনই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় চা গাছ খাদ্য প্রস্তুত করতে পারেনি। ফলে চা গাছের নতুন কুঁড়ি ছাড়ানোয় ব্যাঘাত ঘটে। যার কারণে এ বছর এখন পর্যন্ত গত বছরের চেয়ে ১৪ শতাংশ চা উৎপাদন কম হয়েছে।

ইস্পাহানি টি কোম্পানি শ্রীমঙ্গল জেরিন চা বাগানের ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা জানান, খরার কারণে শুধু মার্চ মাসেই পঞ্চাশ শতাংশ চা উৎপাদন কম হয়েছে। তিনি জানান, অনেক চা বাগানে সেচের ব্যবস্থা নেই। আধুনিক পদ্ধতিতে সেচ দেয়ার পরও তার বাগানে বছর শেষে ১২ শতাংশ চা উৎপাদন কম হওয়ার সম্ভাবনা থাকছে। তবে বর্তমান আবহাওয়া কিছুটা অনুকূল বলেও তিনি জানান।

চা ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে দেশে লকডাউন থাকায় এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত চা ব্যবসায় মন্দা অবস্থা বিরাজ করছিল। বর্তমানে চায়ের বাজারে আগুন। চায়ের চাহিদার বড় অংশ টং দোকান, হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো। এখানে অধিক পরিমাণে চা ব্যবহার হয়। করোনার পর মার্চ থেকে টং দোকান ও হোটেল রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ থাকায় চা ব্যবসা হয়নি। এখন সীমিত আকারে খুলে ব্যবসা অনেক কমলেও চাহিদা বাড়ায় বেড়েছে চায়ের মূল্য।

শ্রীমঙ্গল স্টেশন রোডের সেলিম টি হাউসের স্বত্বাধিকারী সেলিম আহমেদ জানান, সর্বনিম্ন ১৭০ টাকা কেজির চা পাতা দাম বেড়ে ২২০ টাকা হয়েছে। আগামীতে চায়ের দাম আরো বাড়বে। শ্রীমঙ্গলের বাজারে ক্লোন টি প্রতি কেজি ২৬০ থেকে বেড়ে ২৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৩৫০ টাকার চা ৩৮০ টাকায় এখন বিক্রি হচ্ছে। বিটি-২ গ্রেডের চা ৪০০ থেকে বেড়ে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে উন্নত চা বিটি-গোল্ড বা টি-গোল্ড ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় এবং গ্রিন টি ৬৫০-৭০০ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে শ্রীমঙ্গল স্টেশন রোডের ব্যবসায়ী গুপ্ত টি হাউসের স্বত্বাধিকারী পীযুষ ভট্টাচার্য ও পপুলার টি হাউসের শহীদ আহমেদ বলেন, লকডাউন শিথিল হওয়ায় চায়ের চাহিদা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে বিভিন্ন চা প্যাকেটজাত কোম্পানি চা পাতা ক্রয় করে স্টক করার কারণে চায়ের দাম বাড়ছে। তারা আরো বলেন, ভারতীয় চা দেশে না আসা, দেশে চায়ের বাজারের জন্য মঙ্গল।

শ্রীমঙ্গল চা নিলাম কেন্দ্রের সদস্য সচিব জহর তরফদার ভোরের কাগজকে বলেন, আবহাওয়াজনিত কারণে চা উৎপাদন কম হচ্ছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ চায়ের ভোগ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ ছাড়াও গত ৫ বছরের মধ্যে বেশি চা বিদেশে রপ্তানির কারণে চায়ের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, যে হারে চা উৎপাদন হচ্ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে গত বছরের চেয়ে প্রায় ২ কোটি কেজি চা উৎপাদন কম হবে এবার।

বিদেশি কোম্পানি, সরকারি ও ব্যক্তিমালিকাধীন ছোট-বড় মিলিয়ে দেশে মোট ১৬৭টি চা বাগান রয়েছে। তারমধ্যে মৌলভীবাজার জেলাতেই ৯৩টি। এদিকে ২০২৫ সালে ১৪ কোটি কেজি চা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে চা বোর্ডের।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App