বাজেটের অর্থায়ন দায়-দেনার ওপর নির্ভরশীল: ফাহমিদা খাতুন

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৪, ০৯:৪৫ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
এখন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংক কিনে ফেলা হচ্ছে। ব্যাংকিং খাতে চলমান দৈন্যতা ও ভঙ্গুরতায় ধীরে ধীরে খাদের কিনারে চলে এসেছে। তা দূর করতে খাতটির ব্যাপক সংস্কারের প্রয়োজন হলেও বাজেটে এই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। এই ব্যাংকখাত নিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া সম্ভব কিনা সেই বিষয়েও প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা। এমন বাস্তবতা স্লোগান দিয়ে মানুষকে বোকা না বানিয়ে সত্যিকার অর্থে দেশের মানুষকে মুক্তি দেয়া দরকার।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনোমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘অর্থনৈতিক অস্থিরতার সময়ে আগামী অর্থবছরের বাজেট’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ইআরএফ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, স্লোগান দিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়ে কোনো লাভ নাই। এখন সত্যিকার অর্থে দেশের মানুষকে স্বস্তি দেয়া দরকার। যদিও বাজেটে সেই বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেই। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আগামী ছয় মাস পর মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। সেজন্য সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত রাখার কথা জানিয়েছেন তিনি। যদিও সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কমানো সম্ভব নয়। কেননা আমাদের মূল সমস্যা চাহিদা জনিত নয়। সরবরাহ জনিত।
বাজেট বাস্তবায়নে ৭টি বিষয়ের উপর জোর দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে রয়েছে- বাজেট ব্যয় যৌক্তিক করতে হবে। কর ব্যবস্থার ব্যাপক সংস্কার না করলে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না, সরকারের আশ্বাসের সঙ্গে বরাদ্দের মিল থাকতে হবে, যদিও বাজেটে সেটা নেই। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা যদি না আসে, সার্বিকভাবে কোনো উন্নয়ন হবে না। স্বচ্চতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত না করলে কিছুই হবে না। এজন্য সরকারের সদিচ্চার কোনো বিকল্প নেই। বাজেটে বরাদ্দ দিলেও খরচ করতে না পারা বড় ব্যর্থতা। অর্থাৎ বাজেট বাস্তবায়নের সক্ষমতা আমাদের নেই। যা বাজেটের বড় দুর্বলতা।
আরো পড়ুন: দুই সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ যত বাড়ল
এ সময় অধ্যাপক এ কে এনামুল হক বলেন, ব্যাংকখাত এখন আর দেশের মানুষের জন্য কাজ করছে না। ব্যাংক এখন কয়েকজন মানুষের হাতের মুঠোয়। ব্যাংক খেলাপি নামের যে শব্দগুলো শুনছেন এগুলো গৎবাঁধা শব্দ। এগুলোর কোনো পরিবর্তন হবে না, যতক্ষণ না ব্যাংকিংখাতে সংস্কার না হয়। ব্যাংক থেকে টাকা নেয়া হয় ব্যবসা করার জন্য। এখন যেটা হচ্ছে, ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে ব্যাংক কিনে ফেলছে। এই অবস্থায় বিনিয়োগ আশা করা যায় না। নতুন অর্থমন্ত্রী হয়েছেন, আশা করেছিলাম এই বিষয়গুলো সম্পর্কে দিক-নির্দেশনা থাকবে। কিন্তু সেটা পাওয়া যায়নি।
কালো টাকা সাদা করার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেন, এটা না দিলে দেশের অনেক টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাবে। এই পাচার ঠেকানোর জন্যই এটা দরকার।
বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক ড. মনজুর হোসেন বলেন, জ্বালানি পণ্যের দাম এবং রিজার্ভ না বাড়াতে পারলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। কর কাঠামোতে বড় পরিবর্তন বা সংস্কার না করলে কর আদায় বাড়ানো সম্ভব না। ব্যাংকিং খাতে যে সমস্যা চলছে- এই ব্যাংকিং খাত নিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে যাওয়া সম্ভব কিনা সেই বিষয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, অবশ্যই এই খাতের বড় সংস্কার দরকার। তিনি আরো বলেন, চলতি বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধির চেয়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ব্যাংকগুলো যদি ১ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকায় সরকারের বন্ড ও বিল কিনে নেয় তাহলে বেসরকারি খাত ঋণ পাবে কিভাবে? তারচেয়েও বড় কথা হচ্ছে, বিনিয়োগের পর্যাপ্ত পরিবেশ নেই। অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার কথা বলা হলেও সেখানে পানি দিচ্ছে না। বলছে পানি ছাড়া যেসব শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে, সেসব প্রতিষ্ঠানই সেখানে বিনিয়োগ করবে। যদিও পানি ছাড়া কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠানই চলে না। তিনি আরো বলেন, বর্তমান রিজার্ভে অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। তার বড় কারণ হচ্ছে, সরকার ডলার দিয়ে বিদ্যুৎ ও এলএনজি কিনে তা টাকায় বিক্রি করছে। তাহলে রিজার্ভ থাকবে কিভাবে?