রপ্তানিতে হিমশিম খাচ্ছে পোশাক খাত

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ জুন ২০২৪, ০৭:২৪ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
ডলার সংকট, ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ার সঙ্গে বছরজুড়ে রয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হয়রানি। এমন নানা কারণে রপ্তানি বাজারে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে দাবি করেছেন তৈরি পোশাক শিল্প মালিকরা।
বৈদেশিক মুদ্রা সংকট কাটিয়ে দেশের রিজার্ভ বৃদ্ধির যে কয়টি উপায় রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার রপ্তানি আয়। আর বছরের পর বছর এই রপ্তানি আয়ের ৮০ ভাগের বেশি যোগান দিচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। জ্বালানি ও ডলার সংকট, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উন্নত দেশগুলোর ব্যয় সংকোচন নীতি, ব্যাংক ঋণের লাগামহীন সুদহার বৃদ্ধি ও কর আদায়ের নামে এনবিআরের বৈরি আচরণে হিমশিম খাচ্ছে এই খাত। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে অসহায়ের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে সেই চিত্রও তুলে ধরেছেন পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতারা।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত অর্থনৈতিক সাংবাদিকদের সঙ্গে বিজিএমইএ-এর পরিচালনা পর্ষদ এক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নানর (কচি) সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মূর্শেদী এমপি, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, বর্তমান বোর্ডের সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল (দীপু), সহ-সভাপতি (অর্থ) মো. নাসির উদ্দিন, সহ-সভাপতি মিরান আলী, সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল সাদাত, পরিচালক আশিকুর রহমান (তুহিন), পরিচালক আনোয়ার হোসেন (মানিক), পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন খান, পরিচালক শামস মাহমুদ, পরিচালক রাজীব চৌধুরী, পরিচালক মো. শাহাদাত হোসেন, পরিচালক নুসরাত বারী আশা, পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল, পরিচালক মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী সাগর, পরিচালক মো. রেজাউল আলম (মিরু) এবং পরিচালক গাজী মো. শহীদুল্লাহ।
আরো পড়ুন: আন্তর্জাতিক ট্যুরিজম অ্যাওয়ার্ড পেল ইউএস-বাংলা
সভায় বিজিএমইএ সভাপতি এস এম মান্নান কচি বলেন, আমরা ২০৩০ সাল নাগাদ পোশাকশিল্প হতে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানির লক্ষ্য নিয়েছি। এ লক্ষ্য অর্জনে সরকারের নীতি সহায়তা আমাদের অত্যন্ত প্রয়োজন। এ সহায়তা না পেলে লক্ষ্যে পৌঁছানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। সরকার অত্যন্ত বিচক্ষণতার সঙ্গে অর্থনীতিকে পরিচালনা করছে, যার প্রশংসা আন্তর্জাতিকভাবে আমরা পাচ্ছি। আমাদের একান্ত প্রত্যাশা, সরকার শিল্পের জন্য সব সহযোগিতা অব্যাহত রাখবেন। মনে রাখা জরুরি, সহযোগিতা কোনো কারণে বন্ধ হলে আমরা প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাব, বিনিয়ােগ বাধাগ্রস্ত হবে।
তিনি বলেন, এরই মধ্যে আমাদের সরাসরি রপ্তানিকারী কারখানার সংখ্যা পাঁচ হাজার থেকে দুই হাজার ২০০-তে নেমে এসেছে। আমরা যদি কারখানাগুলো টিকিয়ে রাখতে পারতাম, তাহলে রপ্তানি আরো বাড়তো এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতো। তবে সর্ববৃহৎ কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত হিসেবে পোশাকশিল্পের সন্তাবনা ও সক্ষমতা রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানাের এবং আরো কর্মসংস্থান তৈরি করার। বিশ্ববাজারে আমাদের শেয়ার মাত্র ৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ। অর্থাৎ আমাদের সামনে সুযোগ অপরিসীম। সরকারের সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে তৈরি পোশাকখাত দারিদ্র্যমুক্ত সােনার বাংলা এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
এস এম মান্নান কচি বলেন, আমাদের রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের মতো শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ করে আগামী ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকর করা হোক। একই সঙ্গে প্রণোদনার জন্য দেয়া নগদ অর্থ সহায়তার ওপর আয়কর কর্তনের হার ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার দাবি জানাই। আমরা চাই ২০২৯ সাল পর্যন্ত ইনসেনটিভ অব্যাহত রাখা হোক, পোশাক খাতের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য ও সেবা ভ্যাটমুক্ত রাখা হোক।
আরো পড়ুন: ভারত থেকে এলো ১২০ টন কাঁচামরিচ
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আসন্ন বাজেটে রপ্তানির স্বার্থে অগ্নি ও নিরাপত্তা সরঞ্জাম আমদানির ওপর কর রেয়াত এবং এসব পণ্য বিকল বা নষ্ট হলে প্রতিস্থাপনর জন্য রেয়াতি হারে আমদানির সুযোগ দেয়া যুক্তিযুক্ত। শ্রমিকদের জন্য ফুড রেশনিং বাবদ বিশেষ তহবিল বরাদ্দ ও নন-কটন পোশাক রপ্তানি ও বিনিয়োগে সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।
বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে দেশের পোশাক শিল্পের জন্য প্রস্তাবিত এসব সুবিধা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলেও জানান তিনি।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, কমপ্লাইন্সে আমাদের অনেক অর্থ ব্যবহার করতে হয়। তবে দেশের পোশাক খাতের জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে, সেই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। বিদেশীরা এখানে বিনিয়োগ করতে পারে। এখন ডলার ক্রাইসিস রয়েছে। প্রতিযোগি দেশ ভারত, পাকিস্তান কম্বোডিয়ায় ডলার রেট কতো, আমরা কতো পাচ্ছি; তা ভাবতে হবে। খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে আমরা প্রত্যেক্যেই স্ট্রাগল করছি।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘পোশাক খাতে শুধু পজেটিভ নিউজ নয়, আপনারা গঠনমূলক সমালোচনা করবেন। আশেপাশের দেশের সঙ্গে তুলনা করে পোশাক খাতকে এগিয়ে যেতে যে ধরণের সমালোচনা করতে হয়, তাই করবেন।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘রফতানিতে পোশাকের সমান্তরালে দেশের আর কোনো সেক্টর নেই। দেশের পণ্য কোথায় কোথায় যাচ্ছে, কোথায় যেতে পারে, তা আমাদের ভাবতে হবে। বাস্তব কম্পিটিশনের মাধ্যমে গ্লোবাল মার্কেটে আমাদের টিকে থাকতে হয়, টিকে থাকতে হবে।’