তামাক নিয়ন্ত্রণে ৯ সুপারিশ মানসের

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২২, ০৫:৩৮ পিএম

মঙ্গলবার বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের আলোচনা ড. অরূপ রতন চৌধুরী, জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানসহ অন্যরা। ছবি: ভোরের কাগজ
তামাক পাতা রপ্তানিতে ২৫ শতাংশ শুল্ক পুনরায় আরোপ, কৃষি জমি ও পরিবেশ সুরক্ষায় দ্রুত ‘তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি’ পাস করা সহ ৯টি সুপারিশ করেছেন মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)।
মঙ্গলবার (৩১ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস ২০২২ উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় এ দাবি জানানো হয়।
অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ডায়াবেটিস সমিতির সভাপতি ও জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান। এবারের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘তামাকমুক্ত পরিবেশ, সুস্বাস্থের বাংলাদেশ’। সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী।
প্রবন্ধে বলা হয়, তামাক কোম্পানিগুলোতে সরকারি শেয়ার থাকায় জনস্বাস্থ্য ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই তামাক কোম্পানিগুলো এমন কৌশলে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করছে। বাংলাদেশেও তামাক কোম্পানিগুলোর অনৈতিক হস্তেক্ষেপের কারণে জনস্বাস্থ্য ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর নেপথ্যে কাজ করছে তামাক কোম্পানিতে সরকারি শেয়ার। তামাকের ক্ষতি তুলে ধরে প্রবন্ধে বলা হয়, তামাক চাষে প্রচুর সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয়, যা মাটি ও পানি দূষণ করে এবং মাছসহ জলাশয়ের উদ্ভিদ চক্রের মারাত্মক ক্ষতি করে। এ ছাড়া দেশে ৩১ ভাগ বন নিধনের ক্ষেত্রে তামাক চাষ দায়ী। এ জন্য দ্রুত সময়ের মধ্যে তামাক চাষ সম্পূর্ণ বন্ধ করা জরুরি।
প্রবন্ধে আরও বলা হয়, তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে চুল্লিতে প্রচুর পরিমাণে কাঠ পোড়ানো হয়। এ সময় ৩০০ সিগারেট তৈরি করতে প্রায় একটি সম্পূর্ণ গাছের প্রয়োজন হয়। একটি সিগারেট তৈরি করতে ১৪ গ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি হয়। তামাক উৎপাদনে বছরে প্রায় ৮৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হয়, যা মহাকাশে উৎপেণ করা ২ লাখ ৮০ হাজার রকেটের সমতুল্য।
প্রবন্ধে বলা হয়, দেশের ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ পাবলিক প্লেসে ও পরিবহনে পরোক্ষভাবে ধূমপানের শিকার। যার মধ্যে ৩০ শতাংশ নারী কর্মস্থলে ও ২১ শতাংশ নারী পাবলিক প্লেসে শিকার। অর্থাৎ ধূমপান না করেও পরোক্ষ ধূমপানের শিকার বাংলাদেশের প্রায় ১ কোটি নারী । বিশ্বে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে ৮০ লাখের বেশি মানুষ মারা যায়।
তামাককে অর্থকরী ফসলের তালিকা থেকে বাদ দেয়া জরুরি উল্লেখ করে প্রবন্ধে বলা হয়, কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮তে অর্থকরী ফসলের মধ্যে ‘তামাকের’ উল্লেখ রয়েছে। এ কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকেও তামাককে অর্থকরী ফসল হিসেবে পড়ানো হচ্ছে, যা পক্ষান্তরে তামাক চাষকে উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশে তামাকজনিত কারণে বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বছরে প্রায় ১ লাখ ৬২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে। প্রধান অতিথি এ কে আজাদ খান বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এদিকে বিশ্বের শীর্ষ ১০টির মধ্যে ১টি অধিক তামাক ব্যবহারকারী জনগণের দেশও ‘বাংলাদেশ’। সুতরাং জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবিলায় কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। তামাক কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির আওতায় আনার সময় এসেছে।