গলায় জুতার মালা ও বিবস্ত্র করা নিয়ে যা বললেন সেই মুক্তিযোদ্ধা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:২৬ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বাতিসা ইউনিয়নের কুলিয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানুকে নৃশংসভাবে হেনস্তা করা হয়। রবিবার (২২ ডিসেম্বর) এ ঘটনা ঘটে।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু অভিযোগ করেছেন, স্থানীয় জামায়াতের সমর্থক আবুল হাশেম মজুমদার ও তার সহযোগীরা তাকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছে। ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) ফেনী শহরের ছেলের বাসায় আশ্রয় নিয়ে গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমার দোষ একটাই, তা হলো আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করি। তাদের সঙ্গে আমার কোনো দ্বন্দ্বের কারণ নেই। তিনি আরো বলেন, আমাকে বিবস্ত্র করে ছবি তোলার জন্য লুঙ্গি ধরে টানাটানি করেছে। আমার সঙ্গে এসব করে দেশের সব মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এ বিচার সরকারের কাছে চাইব।
ঘটনার দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু জানান, তিনি শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ অনুভব করলে বাজারে গিয়ে ফার্মেসিতে বসেছিলেন। সেখানে ডায়াবেটিস ও প্রেসারের পরীক্ষা করানোর সময় হঠাৎ আবুল হাশেম মজুমদার তাকে আক্রমণ করেন। তিনি বলেন, হাশেম আমাকে গলা ধরে টান দেয় এবং বলে, তোরে আজকে ছাড়া যাবে না, জীবনের শিক্ষা দিমু। তুই এই এলাকা থেকে তাড়াতাড়ি চলে যা। এরপর আমাকে কুলিয়ারা স্কুল মাঠের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
কানু বলেন, কেন চলে যাব? গত ৯ বছর তো এলাকায় ছিলাম না। তারা আমাকে ৫টার মধ্যে বাড়ি থেকে বের হতে বলেছে। হাশেম বলেছে, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দে, না হলে তোরে টুকরো টুকরো করব। তখন সে আমার উপর ছুরি তো বসিয়েই দিয়েছিল। ওই ভিডিও এখনো পাওনি, হয়তো কোনোদিন পাবা। সাংবাদিকদের কাছে এই সত্য উদঘাটনের দাবি জানাচ্ছি।
এ ঘটনায় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু পুলিশের কাছে বিচার চেয়ে বলেন, আমি বিচার চাই, কিন্তু ভালো লোক ক্ষতিগ্রস্ত হোক, এমন আমি চাই না। লুটতরাজের বিচার চাই। এ সরকারের সময়ে যদি ভালো লোকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তারা কোথায় দাঁড়াবে? আমি কোথায় দাঁড়াব?
তিনি আরো বলেন, আমার মতো বয়সের একজন ব্যক্তিকে কেন মাঠে এমনভাবে নির্যাতন করা হলো? কেন আমাকে লাথি-ঘুষি দেয়া হলো? কেন আমাকে পানিতে চুবাতে বলা হলো? কেন গলায় জুতার মালা দিল?
এ সময় তিনি জানায়, হাশেমের সঙ্গে আরো কয়েকজন ছিলেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ওহিদুর রহমান মজুমদার, রাসেল, নয়ন মজুমদারসহ বেশ কয়েকজন।
ঘটনার পর নিরাপত্তার কারণে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু তার বাড়ি ছেড়ে ফেনী চলে আসেন। সেখানে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে তিনি ছেলের বাসায় বিশ্রামে আছেন। তিনি বলেছেন, পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে তিনি চৌদ্দগ্রামের নিজ বাড়িতে ফিরতে চান।
উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তবে সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের রোষানলে পড়ে তিনি ৮ বছর এলাকায় ছিলেন না।