×

অপরাধ

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাতের নতুন অপকর্ম প্রকাশ্যে

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৩ পিএম

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাতের নতুন অপকর্ম প্রকাশ্যে

সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ছবি : সংগৃহীত

   

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসা’ তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন মোহাম্মদ আলী আরাফাত। চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী শওকত আলী চৌধুরীকে নিয়ে কোম্পানি খুলে নিয়েছেন ব্যবসায়িক সুবিধা। ক্ষমতার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তিনজনের সখ্য এবং যৌথ নামে খোলা কোম্পানির নথিপত্রসহ দালিলিক বেশকিছু তথ্যপ্রমাণসহ পাওয়া গেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শওকত আলী চৌধুরী বেসরকারি খাতের ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হওয়ার সুবাদে আরাফাত ও সরাফাতকে নানা সুবিধা দিয়েছেন। জামানত ছাড়া পার্সোনাল গ্যারান্টিতে দেয়া হয়েছে অঢেল টাকার ঋণ। বিনিময়ে বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দাপট দেখিয়েছেন শওকত। বিশেষ করে পুঁজিবাজার, জাহাজ ভাঙা শিল্প, ব্যাংক ও বিভিন্ন চা বাগানে নিজের ব্যবসা বিস্তৃত করেছেন অস্বাভাবিক গতিতে। বাগিয়ে নিয়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদনও। জাহাজ ভাঙা শিল্পে অব্যবস্থাপনার জেরে একের পর এক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও থেকেছেন অধরা।

এক্ষেত্রে আরাফাত ও সরাফাতকে নিজের ‘রক্ষাকবজ’ হিসাবে ব্যবহার করেছেন শওকত। আরাফাত ও সরাফাতের দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদের অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুদক কর্মকর্তারা এই তিনজনের যোগসাজশের তথ্য পেয়েছে। সংগ্রহ করছে তিনজনের যৌথ কোম্পানির নথিপত্র। 

দুদকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তাদের কাছে তথ্য আছে-শওকতকে নানা সরকারি সুবিধা পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে পুঁজি বিনিয়োগ ছাড়াই যৌথ কোম্পানির শেয়ার হাতিয়ে নেন আরাফাত ও সরাফাত। এরপর সজীব ওয়াজেদ জয়ের নাম ভাঙিয়ে আইটি খাতের ওই কোম্পানিতে বিপুল অঙ্কের টাকার কাজ নেয়ার ছক আঁটেন। কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর তারা সরকারি কোন কোন প্রকল্পের কাজ নিয়েছেন, সেই নথিপত্র সংগ্রহ করবে দুদক।

সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী চৌধুরী নাফিজ সরাফাতের ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রাথমিক অনুসন্ধানেই দুদক কর্মকর্তারা শওকতের সঙ্গে প্রতিষ্ঠা করা কোম্পানির আড়ালে নানা দুর্নীতি ও অর্থ লোপাটের তথ্য পেয়েছেন। তবে বিস্ময়কর তথ্য হচ্ছে, দুর্নীতির অনুসন্ধান চলমান অবস্থায়ই ২৩ সেপ্টেম্বর দেশ ছেড়ে সপরিবারে পালিয়ে গেছেন নাফিজ সরাফাত। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৩৭৩ ফ্লাইটে তার দেশত্যাগের ছবিও পাওয়া গেছে।

সরাফাতের পালিয়ে যাওয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া গেলেও আরাফাতের অবস্থান নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে গুঞ্জন আছে, তিনিও অতিগোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। পলাতক থাকায় তাদের বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। তাদের মোবাইল ফোনে কল করেও বন্ধ পাওয়া গেছে। 

আরো পড়ুন : শেখ হাসিনা-হানিফ-আরাফাতসহ ৪৫২ জনের নামে মামলা

তথ্য-উপাত্ত ও নথিপত্রে দেখা যায়, সিডিনেট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড নামের কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার মোহাম্মদ আলী আরাফাত, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও শওকত আলী চৌধুরী। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সিডিনেটের অফিসে হামলা চালায়। প্রাপ্ত নথিতে দেখা যায়, ২০২২ সালের ৪ এপ্রিল প্রতিষ্ঠা করা হয় সিডিনেট কমিউনিকেশন্স লিমিটেড। শুরুতে এ কোম্পানির ৮০ শতাংশ শেয়ারের মালিক ছিলেন চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। তার মালিকানাধীন স্ট্রেটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং এবি হাইটেক কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে তিনি এ শেয়ার ধারণ করেন।

আর ওয়েব ইন্টেলিজেন্স লিমিটেডের মাধ্যমে মোহাম্মদ এ আরাফাত ধারণ করেছেন ২০ শতাংশ শেয়ার। রহস্যজনক কারণে চলতি বছরের মার্চে নিজেদের মধ্যে শেয়ার পুনর্বণ্টন করা হয়। ২৪ মার্চ নাফিজ সরাফাত তার হাতে থাকা শেয়ারের ৩০ শতাংশ শওকত আলী চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করেন। তার মালিকানাধীন জারান অব ডক লিমিটেড এই ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে।

হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, সিডিনেটের মোট শেয়ারের সংখ্যা ১০ লাখ। এর মধ্যে ওয়েব ইন্টিলিজেন্সের শেয়ারের পরিমাণ দুই লাখ। কোম্পানিটিতে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতের স্ত্রীকে পরিচালক হিসাবে দেখানো হয়েছে। কোম্পানিটির চার লাখ শেয়ার রয়েছে স্ট্র্যাটেজিক ফিনান্স লিমিটেডের হাতে। সিডিনেটে এ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসাবে আছেন মো. শরীফুল ইসলাম, নাফিজ সরাফাত ও এহসানুল কবির। অপরদিকে জারা অফডক লিমিটেড সিডিনেটের তিন লাখ শেয়ার ধারণ করে। কোম্পানিটির প্রতিনিধি হচ্ছেন শওকত আলী চৌধুরী ও জারান আলী চৌধুরী। এছাড়া রাহিব সাফওয়ান ও সরাফাত চৌধুরীর নামে সিডিনেটের এক লাখ শেয়ার রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ব্যবসা নির্বিঘ্ন করতে শওকত আলী চৌধুরী নিজেকে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আরাফাত এবং সরাফাতের বলয়ে যুক্ত করেন। এতে নিজে যেমন সুবিধা নিয়েছেন, তেমনই ওই দুইজনকে সুবিধা দিয়েছেন। আরাফাত ও সরাফাতের তদবিরে ২০২২ সালেই ‘নামরীন পাওয়ার লিমিটেড’ নামের বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদনও পেয়ে যান শওকত। বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিকানায় শওকত আলী চৌধুরী, তার স্ত্রী তাসমিয়া আম্বেরিন ও মেয়ে জারা নামরীনের নাম রয়েছে।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App