×

অপরাধ

সক্রিয় হচ্ছে চাঁদাবাজরা, আতঙ্কে পরিবহন মালিকরা

Icon

এমএম সালাহউদ্দিন

প্রকাশ: ২৩ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৪০ এএম

সক্রিয় হচ্ছে চাঁদাবাজরা, আতঙ্কে পরিবহন মালিকরা

আতঙ্কে পরিবহন মালিকরা

   

দেশের পরিবহন খাতে চাঁদাবাজদের আতঙ্কে বর্তমানে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সরকার আসে, সরকার যায়- কিন্তু চাাঁদাবাজদের হাত থেকে রেহাই পান না পরিবহন মালিকরা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণও পাল্টে গেছে। এক দিনেই দখল হয়ে গেছে বেশিরভাগ টার্মিনাল আর রুট, বাকিগুলোও দখল হওয়ার পথে।

ক্ষমতায় থাকাকালে টানা সাড়ে ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সমর্থক ও অনুসারীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল আন্তঃজেলা ও নগর পরিবহনের বিভিন্ন রুট, শেখ হাসিনার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেই নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে বিএনপির অনুসারীরা।

আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখে পরিবহন খাতে প্রভাব তৈরি করে আলোচনায় আসা খন্দকার এনায়েত উল্লাহ দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন, তার এনা পরিবহনের রুট বেদখল হয়ে যাচ্ছে, তার ব্যক্তিগত বাসগুলো চলতে পারছে না, এখন তিনি ‘আল্লাহর কাছে’ বিচার দিচ্ছেন।

এই সুযোগে রাতারাতি মো. সাইফুল নামে এক পরিবহন নেতা নিজেকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির নতুন মহাসচিব বলে ঘোষণা দিয়ে সাবেক মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহর অফিস দখল করেছেন। তার সব গাড়িও এখন সাইফুল বাহিনীর দখলে।

নিজেকে মহাসচিব ঘোষণার পরই রাজধানী থেকে চলাচলকারী প্রতিটি পরিবহনের মালিককে সাইফুল এবং তার বাহিনী চাঁদা দেওয়ার জন্য নিয়মিত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক পরিবহন মালিক অভিযোগ করেছে।

পরিবহন মালিকদের দাবি, পরিবহন মালিক সমিতির নামে শত শত কোটি চাঁদাবাজি করলেও করোনা মহামারির সময় কোন পরিবহন শ্রমিককে তার এক টাকা দিয়েও সহায়তা করেনি। দেশে কোন আন্দোলন হলেই চলে গাড়ির ওপর হামলা-ভাঙচুর, কিন্তু মালিকরা কোন ক্ষতিপূরণ পান না।  

রাজধানী থেকে আশপাশের জেলায় চলাচলকারী গাড়ি থেকে আগে সর্বনিম্ন ১৩০ টাকা করে চাঁদা নিতেন এনায়েত উল্লাহ।  আর দূর পাল্লার বাস থেকে ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা চাঁদা নেওয়ারও অভিযোগ আছে। এছাড়াও নানা অজুহাতে ভিন্ন সময় পরিবহন মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়া হয়েছে।

গুলিস্থান থেকে নারায়ণগঞ্জ ও সোনারগাঁওয়ে চলাচলকারী উৎসব, বন্ধন, আনন্দ, বোরাক, স্বদেশ ও দোয়েল পরিবহনসহ বিভিন্ন পরিবহন মালিককে সাইফুল, জাহাঙ্গির শিকদার, খোকা, আলমগীরসহ আরো অর্ধশতাধিক পরিবহন চাঁদাবাজ নিজেদেরকে বিএনপিপন্থি পরিবহন নেতা পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজি শুরু করে দিয়েছে।

গুলিস্তান ছাড়াও রাজধানীর ফুলবাড়িয়া, যাত্রাবাড়ী, সায়দাবাদ ও মহাখালী রাস টার্মিনালে চাঁদাবাজি করছে গোপনে। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনালে ক্রসফায়ারে নিহত বিএনপির সন্ত্রাসী ডেভিডের ভাই তপন বন্ধন পরিবহন এবং ছাত্রদল নেতা যোসেফ উৎসব পরিবহনের মালিকানা তাদের নামে লিখে দেয়ার জন্য বর্তমান চেয়ারম্যান ও এমডিকে হুমকি দিচ্ছে বলেও তারা আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন।

নারায়ণগঞ্জের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ছাড়াও সাইনবোর্ড, শিমরাইল মোড় ও কাঁচপুর এলাকায়ও বিএনপিপন্থি পরিবহন নেতা পরিচয়ে শুরু হয়েছে চাঁদাবাজি।  তপন ও যোসেফ ছাড়াও নারায়ণগঞ্জে কাসেম, হাসান, আক্রাম প্রধান ও জাকির খানের লোকজন ব্যাপক চাঁদাবাজি শুরু করেছে।  

এদিকে, চাঁদা দিতে রাজি না হওয়ায় গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) রাজধানীর বাইতুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে উৎসব পরিবহনের কাউন্টারে এসে প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তাকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের স্বেচ্ছাসেবক দলে নেতা মো. রানা। এ সময় আশপাশের লোকজন এসে ওই পরিবহন মালিক ও প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন।    

সারাদেশেই পরিবহন খাতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে।  এমতাবস্থায় এ সব পরিবহন চাঁদাবাজদের নির্মূলের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন পরিবহন মালিকরা।      

সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে শুরু হওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের জেরে জুলাইয়ের শুরু থেকেই ব্লকেড নামে কর্মসূচির কারণে পরিবহন খাতে মন্দা দেখা দেয়। ১৬ জুলাই থেকে সংঘাত শুরু হলে যান চলাচলে আরও ব্যাঘাত ঘটে। ১৯ জুলাই মধ্যরাত থেকে কারফিউ জারির পর থেকে পরিস্থিতি চলে যায় নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আন্দোলনে কত শত গাড়ি পোড়ানো হয়েছে, সেই হিসাবও নেই।

৫ অগাস্ট সরকার পতনের পরও টানা কয়েকদিন সরকারি বেসরকারি স্থাপনা, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, বাসে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ চলতে থাকে। হামলার শিকার মানুষরা চলে যান আত্মগোপনে, এর মধ্যে পরিবহন খাতের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে বিএনপির নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে থেকেই সড়ক পরিবহন খাতের প্রভাবশালী নেতা খন্দকার এনায়েত উল্লাহকে দেখা যায়নি।  ১৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ওই কমিটির মহাসচিব ছিলেন এনায়েত।

এম এ বাতেনের নেতৃত্বে ৩২ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেন এলাকায় ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির অফিসেরও দখল নিয়েছেন বিএনপি সমর্থক পরিবহন নেতারা।

৫ অগাস্টের পর খন্দকার এনায়েত উল্লাহর মালিকানাধীন এনা পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ ছিল বেশিরভাগ রুটে। মাঝে কয়েকদিন কিছু রুটে বাস চলাচল করেছে।

তবে গত ১৬ আগস্ট (শুক্রবার) থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে এনায়েতউল্লাহ বাদে এনার অন্য মালিকদের বাসগুলো ইউনাইটেড নামে চলাচল শুরু হয়।

অন্যান্য রুটে এখন যেসব বাস চলছে সেগুলোও বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন খন্দকার এনায়েত উল্লাহ।  গত ১৭ (শনিবার) সিঙ্গাপুর থেকে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ময়মনসিংহ রুটে এনা পরিবহনের সবগুলো কাউন্টার দখল করে ফেলা হয়েছে।  বাস চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না। এভাবে সবগুলো রুটই হয়ত তারা দখল করে নেবে।

সরকার পতনের বিষয়টি আঁচ করতে পেরে পরিবহন খাতের শীর্ষ চাঁদাবাজ খন্দকার এনায়েত উল্লাহ আগেই সিঙ্গাপুরে পাড়ি জমান।  চিকিৎসার কথা বলে তিনি এখন ওই দেশটিতে অবস্থান করছেন।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App