মহারশি থেকে বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে পরিবেশ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ আগস্ট ২০২১, ০৩:৪৫ পিএম

অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে সামাজিক বনায়নের বাগান ধ্বসে পরতে শুরু করেছে। ছবি: ভোরের কাগজ
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মহারশি নদী থেকে বেপরোয়াভাবে চলছে বালু উত্তোলন। বালু মহালের ইজারাদার শাহজাহান স্বপনের লোকজন নদীর পাড় কেটে ও গভীর গর্ত করে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে।
নদীর পাড় ঘেঁষে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলনের ফলে বনবিভাগের সন্ধ্যাকুড়া বিটের গোমড়া সামাজিক বনায়নের বাগান ধ্বসে পরতে শুরু করেছে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখিন হয়ে পরেছে।
নালিতাবাড়ি উপজেলার মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, মহারশি নদীর গোমড়া মৌজায় তাদের সামাজিক বনের পাশে এক একর জমি থেকে বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ইজারা দেয়া হয়। জানা গেছে, এক একর জমিতে ৫/৬ টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু ইজারাদারের লোকজন নদীর ৭/১০ একর জমিতে ১৫/২০ টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু লুটপাট করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় গোমড়া মৌজার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রায় জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত বসানো হয়েছে বালু উত্তোলন যন্ত্র।
বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলন করায় একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য হুমকির সম্মুখিন হয়ে পরেছে। অপর দিকে সরকার বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল পরিমানের রাজস্ব আয় থেকে। তবে হলদীগ্রাম সীমান্ত ফাঁড়ির বিজিবিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সীমান্তের ১৫০ ফুটের মধ্যে বালু উত্তোলন না করার জন্য।
জানা গেছে, ওইসব বালু উত্তোলন যন্ত্রের সাহায্যে দিনে রাতে অবাধে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করা হচ্ছে। সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা গেছে, নদীটি বালু সংকটে পড়ায় বালু উত্তোলনকারীরা নদীর পাড় ও নদীর বুকে জেঁগে উঠা চরে গভীর গর্ত করে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করে আসছেন।
এতে গোমড়া সামাজিক বন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। প্রতিদিন ভেঙ্গে পরছে বনের গাছ। অবাধে বালু উত্তোলন ও পরিবহন করায় ও অতিরিক্ত বালু বোঝাই ট্রাক অবাধে যাতায়াতের কারণে দু’ পাশে এলজিইডির রাস্তা-ঘাট ভেঙ্গে লোকচলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। ফলে দুর্ভোগে পরেছে এলাকার শতশত মানুষ।
উপজেলা প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক বলেন, অতিরিক্ত বালু বোঝাই ট্রাক অবাধে যাতায়াতের কারনে রাস্তা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে রাস্তা নির্মানের ব্যবস্থা করা হবে।
বন বিভাগের শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক ড. প্রান্তোষ চন্দ্র রায় বলেন, গোমড়া সামাজিক বন ঘেঁষে নদীতে জেলা প্রশাসনের ১ একর জমি রয়েছে। প্রতিবছর ওই জমি থেকে বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা দেয়া হয়। আর ইজারাদারের লোকজন নিয়ম নিতি উপেক্ষা করে গায়ের জোরে নদীর পাড় ঘেঁষে বালু উত্তোলন করে সামাজিক বনায়ন ধ্বংস করে চলছে। বাঁধা নিষেধ করেও কোন কাজে আসছে না।
তিনি বলেন, সামাজিক বনায়ন ধ্বংস ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে বালু মহালটি ইজারা না দিতে জেলা প্রশাসনকে বহুবার আবেদন নিবেদন করলেও কোন কাজে আসেনি। তবে বন ধ্বংস করে বালু উত্তোলনের বিষয়ে উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইজারাদার শাহজাহান স্বপনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ঢাকায় আছি। ফিরলে আপনার সাথে কথা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আল মাসুদ বলেন, এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।