×

সারাদেশ

সিংগাইরে গাজরে বদলেছে চাষিদের ভাগ্য

Icon

মাসুম বাদশাহ , সিংগাইর ( মানিকগঞ্জ)

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮:১৮ পিএম

সিংগাইরে গাজরে বদলেছে চাষিদের ভাগ্য

চলতি মৌসুমে সিংগাইরে গাজর চাষ হয়েছে ৯৬০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় ১০ হেক্টর বেশি।

   

অল্প সময়ে অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় নিজেদের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তনে মানিকগঞ্জের সিংগাইরের ব্যাপক হারে বেড়ে চলছে গাজরের আবাদ। এবার চাহিদা থাকায় ভালো দামও পাচ্ছেন কৃষকরা। আবার গাজরের পাতা ও উচ্ছিষ্ট অংশ যোগান দিচ্ছে গরু-ছাগলের খাবারের । বর্তমানে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে রপ্তানিও হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। বেলে দোঁআশ মাটিতে আশ্বিন-কার্তিক মাসে বীজ বপন করতে হয়। তিন মাসের মধ্যে পরিপক্ব হয় গাজর। 

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ এলাকায় গাজর চাষ শুরু হয়েছ প্রায় তিন যুগ ধরে। প্রথম দিকে শুধুমাত্র জয়মন্টপ ইউনিয়নের দেউলী-দশানী ও ধল্লা ইউনিয়নের নয়াপাড়ায় স্বল্প পরিসরে এর চাষাবাদ শুরু হয়। সময়ের পরিক্রমায় এখন উপজেলার দুর্গাপুর, চর দুর্গাপুর, ভাকুম, কিটিংচর, দেউলী, দশানী, নয়াপাড়া, মেদুলিয়া, গাজিন্দা, লক্ষ্মীপুর, নীলটেক, কানাইনগর, মোসলেমাবাদ, আজিমপুর, চালিতাপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রায় ৬ হাজারেরও বেশি কৃষক গাজর চাষের সঙ্গে জড়িত। এসব গ্রামের পরিচিতি এখন গাজরের গ্রাম হিসেবেই। সব মিলে সিংগাইর উপজেলা গাজরের ঝুড়ি হিসেবে খ্যাতি লাভ করেছে। 

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে সিংগাইরে গাজর চাষ হয়েছে ৯৬০ হেক্টর জমিতে। যা গত বছরের তুলনায় ১০ হেক্টর বেশি। উৎপাদনের  লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন যা বর্তমান বাজার মূল্য বিক্রি হবে অন্তত ৬৫ কোটি টাকার। তাদের দাবি, উপজেলায় উৎপাদিত গাজর দিয়ে দেশের চাহিদার ৪০ শতাংশই মেটানো যায়। 

কথা হয় চরদুর্গাপুরের কৃষক রহিম মিয়ার সঙ্গে । তিনি বলেন ,আমি দুই যুগ ধরে গাজর চাষ করি। নিজের জমির পাশাপাশি অন্যের জমিও দায়সিদা (ভাড়া) নেই। এ বছর আমি ১ একর ৮০০ শতাংশ জমিতে গাজর চাষ করছি । প্রতি বিঘায় (৩০ শতাংশ) খরচ হয়েছে নিজের জমিতে ৩০-৩৫ হাজার টাকা এবং ভাড়া জমিতে ৪০-৫০ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে গাজর মেলে ২৫০-৩০০ মণের মতো। প্রতি বিঘা বিক্রি হয় আনুমানিক আশি থেকে এক লাখ টাকায়। একসময় সংসারে অভাব থাকলেও এখন আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। 

নয়াডাঙ্গী গ্রামের কৃষক কাজী শাহাদাত হোসেন, চরদুর্গাপুরের জাহেদ আলী, চর আজিমপুরের সাইফুল ইসলাম ও সালাহউদ্দিনসহ কয়েকজন চাষীর সঙ্গে কথা হলে তারা অভিযোগ করে বলেন, গাজর চাষে সুবিধার পাশাপাশি বেশ কিছু অসুবিধাও রয়েছে। এরমধ্যে অন্যতম হলো– বীজ বিপণনকারী সিন্ডিকেট। প্রতি বছর কোনো কারণ ছাড়াই এই সিন্ডিকেট বীজের দাম বাড়িয়ে দেয়। 

গত বছর কেজিপ্রতি বীজ কিনেছেন ১৫ হাজার ৮০০ টাকায়। এবার কিনতে হয়েছে ২৪-২৬ হাজার টাকায়। অতিরিক্ত বৃষ্টি হলে গাজর পরিপক্ব হওয়ার আগেই নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া একমণ গাজর মাঠ থেকে বাজারজাত করতে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ হয় ১৪০ টাকা। হিমাগারে রাখলে ৮০ কেজি ওজনের এক বস্তা গাজরের জন্য গুনতে হয় এক হাজার টাকা। অপরদিকে চীন থেকেও গাজর আমদানি করেন অনেকে। আমদানি বন্ধ হলে কৃষকেরা আরো বেশি লাভবান হতেন।  

ভাকুম এলাকার কৃষক জয়নাল হোসেন বলেন, আগে গাজর নিজেরাই তুলে বিক্রি করতাম। এখন জমি থেকেই বিক্রি করে দেই। চলতি বছর সাত বিঘা জমিতে গাজর চাষ করছি। এতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো। গাজর পরিপক্ব হওয়ার আগেই ক্ষেত থেকে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছি। 

চর-আজিমপুরের কৃষক বাবুল হোসেন জানান, চলতি বছর সাত বিঘা জমিতে গাজরের চাষ করেছেন তিনি। এতে আমার খরচ হয়েছে সাড়ে তিন লাখ টাকা। বিক্রি করেছি সাত লাখ টাকায়। বিঘা প্রতি আমার লাভ হয়েছে ৪০ হাজার টাকার মতো। 

ভূমদক্ষিণ গ্রামের গাজর ব্যবসায়ী মোঃ আজমত আলী, আবেদ আলী ও মোহাম্মদ আলী জানান, তারা দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর যাবৎ গাজরের ব্যবসা করে আসছেন। আমরা চাষির জমি থেকে গাজর কিনে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারি বিক্রি করি। এতদিন দাম ভালো থাকায় আমাদের কিছু লাভ হয়েছে। এখন অনেক সময় ক্ষতি হয়। কৃষকের জমি থেকে আমাদের বেশ কিছু গাজর কেনা আছে। বৃষ্টিতে যদি ক্ষতি না করে তাহলে ব্যবসা ভালো হবে বলে আশা করছি। 

রাজশাহীর বাঘা থেকে আসা গাজর পরিষ্কার করা শ্রমিক সর্দার জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, আগে তারা পা দিয়ে ঘষে গাজর পরিষ্কার করছি। চলতি বছর মেশিন দিয়ে গাজর পরিষ্কার করি । পা দিয়ে যেখানে ৮০ কেজির ১২০ বস্তা গাজর পরিষ্কার করা যেত। একই পরিমাণ শ্রমিক মেশিনের সহায়তায় ৮০ কেজির ৩০০-৪০০ বস্তা পরিষ্কার করা যায়। আমার দলে ১২ জন লোক আছে। ৮০ কেজির এক বস্তা গাজর পরিষ্কার করে বস্তাবন্দি করা পর্যন্ত আমাদের মজুরি বর্তমান ৯০-১০০ টাকা। দিনে গড়ে ১০০-১২০ বস্তার পরিষ্কার করা যায়। আয় রোজগার বছরের অন্য সময়ের চেয়ে ভালো।  

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ হাবিবুল বাশার চৌধুরী বলেন, সিংগাইরে গাজর চাষ উপযোগী জমি থাকায় এবং অল্প সময়ে অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় দিন দিন গাজরের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা চাষীদেরকে গাজর চাষে সাধ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করার চেষ্টা করে আসছি। এবছর সিংগাইরে ৯৬০ হেক্টর জমিতে গাজর চাষ হয়েছে । টাকার অংকে প্রায় ৬৫ কোটি টাকার গাজর বিক্রি হবে বলেও আশা করছেন তিনি। 

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App