×

সারাদেশ

পাবনা মানসিক হাসপাতাল এখন নিজেই অসুস্থ

Icon

পলাশ হোসেন, পাবনা

প্রকাশ: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:৪৮ পিএম

   

দেশের একমাত্র মানসিক চিকিৎসাসেবায় বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান পাবনা মানসিক হাসপাতাল। বর্তমানে হাসপাতালটি নানা সংকটে নিজেই রোগীতে পরিণত হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনবল সংকট, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় হাসপাতালটির রুগ্নদশা। সচেতন মহলের দাবি, হাসপাতালটি আধুনিকায়নের জন্য পুরো ঢেলে সাজানো দরকার।

১৯৫৭ সালে পাবনা শহরের হিমায়েতপুরের শীতলাই জমিদার বাড়িতে ১১১ একর জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় পাবনা মানসিক হাসপাতাল। শুরুতে ছিল মাত্র ৬০ শয্যাবিশিষ্ট, পরে ১৯৯৬ সালে শয্যাসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫০০-তে।  শুরুর দিকে হাসপাতালটিতে মোট ভবনের সংখ্যা ছিল ৫৩ টি। ভেঙ্গে চুরে সেটি এখন দাঁড়িয়েছে এক-তৃতীয়াংশে। সেই ভবনগুলোও জীর্ণদশা।

শুধু হাসপাতালটির ভবন নয়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনবল সংকট, খানাখন্দে ভরা রাস্তায় হাসপাতালটি রুগ্নদশায় পরিণত হয়েছে। এতে দূরদূরান্ত থেকে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনরা পড়ছেন বিপাকে। বর্তমানে হাসপাতালে একজন পরিচালকসহ ১২ জন চিকিৎসক, ২৮০ জন নার্স, ৪০ জন তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আছেন। আর চিকিৎসকের ৩১ পদের মধ্যে বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ১২ জন। এরমধ্যে বিশেষজ্ঞ মাত্র দুজন। সব মিলিয়ে ৬৪৩ পদের মধ্যে শূন্য আছে ১৮২টি। 

স্থানীয়দের দাবি, পুরো হাসপাতালটিকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে, তাহলেই দেশের একমাত্র বিশেষায়িত মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় ফিরবে স্বস্তি। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ডিজিটাল শেষে দেশবাসী যখন স্মার্ট যুগে প্রবেশ করছে, এমন সময়ে এ মানসিক হাসপাতালটি অ্যানালগ যুগেই পড়ে আছে। দুপুর ১টার মধ্যে রোগী দেখার কাজ শেষ হয়ে যায়। ফলে দূরদূরান্তের রোগীরা ডাক্তার দেখাতে এসে পড়ে নানা সমস্যায়। অনলাইনে সিরিয়াল নেওয়ার ব্যবস্থা থাকলে সমস্যার নিরসন সম্ভব বলে মনে করছে ভুক্তভোগীরা। বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে এনে কম্পিউটারে কাজ করানো হয়।

হাসপাতাল সূত্র জানান, প্রয়োজনের তুলনায় হাসপাতালে বরাদ্দ অনেক কম। ভর্তি রোগীর পুষ্টিকর ও নিজেদের পছন্দমতো খাবার নিশ্চিত করা যায় না।সব মিলিয়ে প্রতিষ্ঠার প্রায় ৬৬ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশের সবচেয়ে বড় মানসিক হাসপাতাল থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছে না মানুষ। এখানে জনবল সংকট নিরসনের উদ্যোগ নেই।

অনেক রোগী আসেন, যাদের নিয়মিত কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সারিয়ে তোলা সম্ভব। কিন্তু ঠিকমতো কাউন্সেলিং হয় না। এ ব্যাপারে কারও মনোযোগও নেই। সাধারণত এক মাসেই রোগীকে রিলিজ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। মাসের হিসাবে এখানে কেবিন ভাড়া ৯ হাজার ৭৫০ টাকা, অথচ চিকিৎসাসেবা ও খাবার নিম্নমানের। একমাত্র সিনেমা হলটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। খাবারের মান নিয়ে আছে বিস্তর অভিযোগ। গত বছর টেন্ডার জটিলতায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল খাবার সরবরাহ। পরে সে সংকট কাটিয়ে উঠলেও মান বাড়েনি খাবারের। প্রতিদিন চার বেলা খাবারের জন্য জনপ্রতি বরাদ্দ মাত্র ১৭৫ টাকা। 

রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, বাইরের খাবার দিতে না পারায় এখানকার নিম্নমানের খাবার গ্রহণে বাধ্য হয় রোগীরা। চিকিৎসা, ওষুধ, দালালসহ নানা বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সারাদেশ থেকে আসা রোগী ও স্বজনদের। দালালদের মাধ্যমে রোগী ভর্তি করা হয়, বিষয়টি নিত্যনৈমিত্তিক বলে রোগীর স্বজনদের অভিযোগ।

এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. শাফকাত ওয়াহিদ বলেন, ‘এখানে অনেক পদই দীর্ঘদিন ধরে পূরণ হয় না, আমরা সেগুলো পূরণের চেষ্টা করছি। এখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রয়োজন রয়েছে। খাবারের যে সংকট ছিল তা কেটে গেছে। প্রতিটি রোগীর জন্য সারা দিনের খাবারের বরাদ্দ মাত্র ১৭৫ টাকা, তার পরও আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি ভালো খাবার সরবরাহ করতে। আর রোগী হয়রানির বিষয়ে আমাদের হাসপাতালের কেউ এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত প্রমাণ পেলে তৎক্ষণাৎ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। ’

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App