বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ সদস্যের পদত্যাগ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮:৫২ পিএম

ছবি সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরা জেলা কমিটি নিয়ে নানান অভিযোগ উঠেছে। তার মধ্যে রয়েছে, ছাত্র-জনতার জুলাই বিপ্লবের প্রথম সারিতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের বাদ দিয়ে আন্দোলনে যাদের কোনো ভূমিকাই ছিল না তাদের নিয়ে গঠন করা হয়েছে কমিটি। এই অভিযোগ তুলে কমিটি বাতিলের দাবিতে ঘোষিত নতুন কমিটির ৯ জন শিক্ষার্থী পদত্যাগ করেছেন।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) দুপুরে খুলনা রোড মোড়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বখতিয়ার হোসেন।
এ সময় লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রথম থেকেই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বোমা-বন্দুকের সামনে বুক পেতে দিতে দ্বিধাবোধ করেনি। বর্তমানে সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনের যে কমিটি দেয়া হয়েছে, সেটি একটি ভিত্তিহীন বিল্ডিং মাত্র। স্বজন প্রীতির মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রকৃত ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন করা হয়নি। এটি একটি পকেট কমিটি। যারা সামনের সারিতে থেকে এই আন্দলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের অধিকাংশকে বাদ দিয়ে এই কমিটি দেয়া হয়েছে। তাই আমরা এই পকেট কমিটিকে প্রতাখ্যান করছি।
এ সময় তিনি আরো বলেন, এই সংবাদ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নতুন এই কমিটি থেকে ৯ জনের পদত্যাগের কথা জানাচ্ছি। পদত্যাগকারীরা হলেন- অন্যতম যুগ্ম আহবায়ক ইখতিয়ার উদ্দিন, সায়েম রহমান সিয়াম, সদস্য এএইচ রিফাত, মুশফিকুর রহমান, মেহেদী হাসানসহ ৯ জন। পরবর্তীতে অন্যরাও পদত্যাগ করবেন বলে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, সাতক্ষীরা জেলার এই কমিটি বাতিল করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের সবাইকে নিয়ে একটি নিরপেক্ষ কমিটির করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরার প্রধান সমন্বয়ক ইমরান হোসেন বলেন, সাতক্ষীরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, সেই কমিটিতে স্বজনপ্রীতি, আর্থিক লেনদেন এবং যোগ্য ব্যক্তিদেরকে কমিটিতে না নিয়ে বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা এই কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি। দলছুট, অনুপ্রবেশকারী, বহিরাগত ও আন্দোলনে যাদের কোনো ভূমিকা ছিল না, তাদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটির প্রতি সম্মান রেখে আমরা তাদেরকে হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই, আপনারা ঢাকায় বসে কমিটি করেছেন, আপনাদের উচিত ছিল সাতক্ষীরায় যারা নেতৃত্ব পর্যায়ে ছিল তারাসহ সবার সঙ্গে কথা বলে সবার সঙ্গে সমন্বয় করে একটি বৈষম্যহীন কমিটি করা। আমরা চাইবো নতুন করে সবার সঙ্গে আলোচনা করে সংযোজন বিয়োজন করে এই কমিটির সংস্কার করা হোক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক মুশফিকুর রহমান বলেন, সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরার যে কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে, এই কমিটিতে ত্যাগী এবং যোগ্য অনেককে রাখা হয়নি। বরং বৈষম্যবিরোধী কমিটিতে বৈষম্য করা হয়েছে। সাতক্ষীরায় যারা এই আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল তাদেরকে বাদ দিয়ে এই কমিটি করা হয়েছে। তাই এই কমিটি বাতিল করে সাতক্ষীরার আন্দোলনের সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলে পুনরায় যাচাই-বাছাই করে নতুন করে কমিটি ঘোষণা করুন।
এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এএইচ রিফাত, সায়েম রহমান সিয়াম, মাসকুরা পারভীন মৌস প্রমুখ। এ সময় সেখানে আরো উপস্থিত ছিলেন ইখতিয়ার উদ্দিন, মোল্লা মোহাম্মদ সাহাজুদ্দিন, তানজিদুর রহমান, সাকিব হাসান, রাকিব হাসান, মোমিনুর রহমান, তুহিন হোসেন রিয়াদ, মিজান রহমান, আনারুল ইসলাম সান, সামিউজ্জামান শ্রাবণ, মোস্তাফিজুর রহমান, ইব্রাহিম খলিল, মেহেদী হাসান, তারিক ইসলামসহ অন্যান্যরা।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সদস্যসচিব আরিফ সোহেল সই করা পত্রে সাতক্ষীরার জেলার একটি কমিটি দেয়া হয়। কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন আরাফাত হোসাইন ও সদস্যসচিব হিসেবে হয়েছেন সুহাইল মাহদীন। মুখ্য সংগঠক আল শাহরিয়ার এবং মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মোহেনী পারভীনকে। কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন মুজাহিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমান, মাসুম বিল্লাহ, সোহেলী তামান্না, মইনুল ইসলাম দীপু, আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ আরো আটজন। যুগ্ম-সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন নাজমুল হোসেন, রেজওয়ান আহমেদ, ওমর তাসনিম রাহাতসহ আরো সাতজন। সংগঠক হিসেবে মনোনীত হয়েছেন- হাসিবুল হাসান, আমিনুর রহমান রাতুল, শেখ ওমর ফারুকসহ মোট সাতজন। এছাড়াও ১২২ জন সদস্য হিসেবে কমিটিতে স্থান পেয়েছেন।