চাচি-ভাতিজার পরকীয়ার জেরে সাংবাদিককে হুমকি

রায়পুরা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:৩৬ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
নরসিংদীর রায়পুরায় স্বামীর মৃত্যুর পর ভাতিজার সঙ্গে স্ত্রীর পরকীয়া। এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এমন এক অভিযোগ উঠেছে উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের গৌরীপুর এলাকার মৃত মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী ফেরদৌসী বেগমের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে দুটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। চাচি-ভাতিজার এমন পরকীয়ার ঘটনায় স্থানীয় বখাটেরা সাংবাদিককে হুমকিও দিচ্ছেন।
ফেরদৌসী বেগম ও ভাতিজা দুলাল মিয়ার পরকীয়ার খবর জানাজানি হলে গৌরীপুর এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়। এলাকাবাসীর হাতেনাতে ধরা পড়ার পর পরকীয়ার কথা স্বীকার করেন অভিযুক্ত ফেরদৌসী।
রায়পুরা উপজেলার গৌরীপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে ১৩ বছর আগে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় একই উপজেলার মহেশপুর ইউনিয়নের মহেশপুর গ্রামের ইউনুছ মিয়ার মেয়ে ফেরদৌসীর। এই দম্পতির ১ কন্যা ও ১ পুত্র সন্তান রয়েছে। তাদের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ ২০১৭ সালে স্বামী মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর হয়।
এরপর থেকে দুই সন্তানের মা ফেরদৌসী অনেকটা একাকিত্বে ভোগেন। চাচার মৃত্যুর পর ভাতিজা বাড়িতে যাওয়া-আসা শুরু করেন। ওই সময় ভাসুরের ছেলে দুলালের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন ফেরদৌসী। চাচি ও ভাতিজার মধ্যে তৈরি হয় পরকীয়া। দুলাল নিজেও বিবাহিত, তারও রয়েছে ৪ সন্তান। ৩ মাস আগে পরকীয়া করতে গিয়ে একসঙ্গে এক রুমে ধরা পড়েন ফেরদৌসী ও দুলাল। তখন স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের আটক করলে বিয়ের কাবিননামা দেখিয়ে বলেন তারা স্বামী স্ত্রী।
দুলাল মিয়ার প্রথম স্ত্রী হাসি বেগম ভিডিও বক্তব্যে বলেন, ২০১৭ সালে দুই সন্তানের মা ফেরদৌসীর স্বামী মোহাম্মদ আলীর মৃত্যুর পর আমার স্বামীর সঙ্গে নিয়মিত পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। আমাদের দাম্পত্য জীবনে ৪ সন্তান রয়েছে। প্রায় ৩ মাস পূর্বে পরকীয়া করতে গিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীর হাতেনাতে ধরা পড়ে। ওই ঘটনায় তাদের বিচারের দাবি উঠলে এলাকাবাসী একটি সালিসি দরবারে লিখিত স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারবদ্ধ নেয়। এতে একে অপরকে তালাক দিয়ে দেবে বলে ফেরদৌসীকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
তিনি আরো বলেন, ফেরদৌসী কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তি কামাল পাঠান, বিপ্লব ও ওয়াসিমসহ আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় আবার তার মৃত স্বামী মোহাম্মদ আলীর ঘরের তালা ভেঙে উঠে। এখন আমার স্বামী দুলাল মিয়া সংসারে অশান্তি ও অত্যাচার করতে থাকে প্রতিনিয়তই।
দুলাল মিয়ার চাচা আবু বক্কর জানান, বেশ কিছুদিন পূর্বে আবার হঠাৎ কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সহযোগিতায় আমার ভাই মৃত মোহাম্মদ আলীর ঘরের তালা ভেঙে ফেরদৌসী বাড়িতে উঠে। তার ফিরে আসা মেনে নিতে না পারায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় অফিসার ইনচার্জের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করি। এ নিয়ে আমাদের গ্রামে উত্তেজনা ও অশান্তি বিরাজমান করছে। এছাড়া ফেরদৌসী আমাকে মিথ্যা বানোয়াট মামলা ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে প্রশাসনের সহযোগিতায় দ্রুত বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ফেরদৌসী বেগম বলেন, আমি কিছু বলতে পারবো না। আপনারা কামাল পাঠান, মুসা পাঠান ও মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি নই।
এরপর একে একে কামাল পাঠান, মামুন ও মুসা পাঠান মুঠোফোনে বলেন, এলাকার শান্তি বজায় রাখার জন্য আমরা স্থানীয় একটি সালিসি দরবারে লিখিত স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারবদ্ধভাবে সমাধান করে দিছি। এখন এই বিষয়ে আমরা নাই।
কামাল পাঠান বলেন, তুমি কত বড় সাংবাদিক হয়েছো, আমি এটা দেখে নিবো। পারলে আমার সামনে আসো বলে আরও হুমকিস্বরূপ মন্তব্য করেন।
দুলাল মিয়া বলেন, এ বিষয়ে স্থানীয় সালিসি দরবারে লিখিত স্বাক্ষরিত অঙ্গীকারবদ্ধভাবে সমস্যা সমাধান হয়েছে। যদি ফেরদৌসীর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক প্রমাণিত হয়, তাহলে আমার জরিমানা দিতে হবে। এখন আমি আমার সংসার নিয়ে ব্যস্ত আছি। আর এসবের মধ্যে নাই। আমার প্রথম স্ত্রী হাসি বেগম আমার বিরুদ্ধে অযথা মিথ্যা বানোয়াট লিখিত অভিযোগ দায়ের করছে।
রায়পুরা থানা পুলিশ উপ-পরিদর্শক আল-মামুন বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনগত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। সাংবাদিককে হুমকির বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সাংবাদিকদের রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি।