×

সারাদেশ

মেঘনার তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণে ধীরগতি, নিম্নমানের কাজের অভিযোগ

Icon

মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখাালী

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৮ পিএম

মেঘনার তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণে ধীরগতি, নিম্নমানের কাজের অভিযোগ

ছবি: ভোরের কাগজ

   

সঠিক তদারকির অভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে মেঘনা নদীর তীররক্ষা বাঁধ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ। এছাড়া জিওব্যাগে ভরাট করা বালু, জিওব্যাগ ডাম্পিং, প্লেসিংসহ বাঁধ রক্ষা কাজের মান নিয়েও উঠেছে অভিযোগ। বাঁধের কাজের ধীরগতির ফলে বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ তীব্র ভাঙনের শঙ্কা প্রকাশ করছেন উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, কাজে ধীরগতি থাকলেও নিয়মমাফিক টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সম্পন্ন হবে তীররক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের নলের চরে মেঘনা নদীর বাম তীরে দীর্ঘ ২০ বছরের অব্যাহত ভাঙনে প্রায় ২০ বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর তীররক্ষা বাঁধ না থাকায় প্রতিনিয়ত ভাঙনের কবলে পড়ছে নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। এতে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে হাজারো মানুষ। ভাঙনের মুখে প্রতিদিনই কোনো না কোনো মানুষ হারাচ্ছেন তাদের ভিটেমাটি। ভাঙন ঠেকাতে ও নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবিতে নানা সময়ে আন্দোলন করে আসছিল উপকূলীয় এ উপজেলার বাসিন্দারা। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩টি প্যাকেজে মেঘনা নদীর ৩৭৭ মিটার তীররক্ষা প্রকল্পের কাজের টেন্ডার দেয় বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী বিভাগ। টেন্ডার শেষে চলতি বছরের ৮ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে আশার আলো দেখতে শুরু করেন নদীর তীরের বাসিন্দারা। 

স্থানীয় বাসিন্দা ও  চানন্দী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান, ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা শাহারাজ হোসেন, মো. সামছুদ্দিন, মো. বাহার উদ্দিন ও মো. জহিরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ২০২৩ সালে কাজের বরাদ্দ পাস হলেও কাজ শেষের মেয়াদ রয়েছে আর মাত্র ৬ মাস। এই সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ। বর্ষার আগেই প্রকল্পের কাজ শেষ না করলে বর্ষার মৌসুমে এই বাঁধ নির্মাণ কাজ করা যাবে না। ফলে যেটুকু কাজ হবে তা পুনরায় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, প্রকল্পের ২২, ২১ ও ১৭ নং প্যাকেজের ঠিকাদার মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ার্স যেটুকু কাজ করেছেন, তাতে জিওব্যাগে ৮০ প্লাস এফ.এম বালু ব্যবহারের কথা থাকলেও কমমূল্যের ৬৫ থেকে ৭০ এফ.এম বালু দিয়ে অদক্ষ শ্রমিকের মাধ্যমে নদীর তীরে জিওব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত নদীর যেখান থেকে জিওব্যাগ ডাম্পিং করার কথা সেই গভীরে কোনো জিওব্যাগ প্লেসিং করা হয়নি, যার কারণে বর্ষা মৌসুমের আগেই জিওব্যাগের চিকন বালু বেরিয়ে ব্যাগগুলোর প্লেসিং ডিসপ্লেসিং হয়ে যাচ্ছে। এতে টেকসই তীররক্ষা বাঁধ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করছেন তারা। 

বাঁধ নির্মাণ কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকির অভাব রয়েছে দাবি করে স্থানীয় মোস্তফা মাহমুদ বলেন, ঠিকাদারের কাছ থেকে কাজের মান ও সময়মতো কাজ বুঝে নেয়ার কথা থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা আসেন ১৫-২০দিন পর। তাও সরেজমিনে কাজ না দেখেই ঠিকাদারের অফিসে বসে গল্প করে সময় কাটিয়ে চলে যান তারা। এই সুযোগে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ার্স ৮০ প্লাস এফ.এম বালুর স্থলে মাত্র ৬৫ থেকে ৭০ এফ.এম চিকন ও ভিজা বালু দিয়ে জিওব্যাগ ভরাট করছে। নিম্নমানের বালু দিয়ে ভরাট করা জিওব্যাগ নদীর তীরের অংশে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে স্রোতের পানিতে ব্যাগ থেকে চিকন বালু বের হয়ে ডাম্পিং ডিসপ্লেসিং হয়ে যাচ্ছে। এভাবে কাজ করলে এই তীররক্ষা বাঁধ বর্ষার শুরুতেই ভেঙে নদীতে ভেসে যাবে বলেও মনে করছেন নদীর তীরের বাসিন্দারা।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রহমান ইঞ্জিনিয়ার্সের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার মোস্তাফিজুর রহমান কাজের মান সঠিক হচ্ছে দাবি করে বলেন, বালু পরীক্ষার মিশিনারি দিয়ে পরীক্ষা করে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কাজ বুঝে নিচ্ছেন। লোকাল মানুষ না বুঝেই এমন মিথ্যা অভিযোগ করছেন।

সরেজমিনে প্রকল্পের কাজ পর্যবেক্ষণে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালীর কার্য-সহকারী নুরুল আফসারের সঙ্গে কাজের অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ছটকে পড়েন। পরে মুঠোফোনে তিনি জানান, আসলে সরকার পতনের পর ওই এলাকার বিএনপির কিছু লোকজন ঠিকাদারের পেছনে লাগছে। তারা চাচ্ছেন সেখানে তারাই বালুগুলো সরবরাহ করবে। কিন্তু যিনি বর্তমানে বালুগুলো সরবরাহ করছেন, তার বালুগুলো ভালো, মানসম্মত। তাই আমরা এই বালুগুলোই রিসিভ করছি। এতে বালু সরবরাহের অনুমতি না পেয়ে ওই বিএনপি নেতাকর্মীরাই এসব মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।

মেঘনা নদীর তীররক্ষা বাঁধ প্রকল্পের নির্মাণ কাজে নিম্নমানের বালু ব্যবহার ও অনিয়মের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড নোয়াখালী নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হালিম সালেহী। তিনি বলেন, এবারর নোয়াখালীতে ভয়াবহ বন্যার কারণে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করতে একটু দেরি হওয়ায় ইতিমধ্যে ৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নিয়মমাফিক টিকসই বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করা হবে বলে আশা করছি।

উপকূলীয় এলাকার অবশিষ্ট অবকাঠামো রক্ষায় কাজের সঠিক মান বজায় রেখে চলতি শীত মৌসুমের মধ্যেই টেকসই নদীর তীররক্ষা বাঁধ প্রকল্পের কাজ শেষ করার দাবি জানিয়েছেন ভিটামাটি হারানো মেঘনা তীরের বাসিন্দারা।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App