সনাতন জাগরণ মঞ্চের গণসমাবেশ
নির্যাতনের বিচারসহ ৮ দফা দাবিতে প্রতি জেলায় মহাসমাবেশের ঘোষণা

চট্টগ্রাম অফিস
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১১:৩৮ পিএম

হাজারো নারী-পুরুষ মিছিল করে ও দল বেঁধে এই সমাবেশে যোগ দেন। ছবি: সংগৃহীত
দেশব্যাপী মন্দির, হিন্দুদের বাড়িঘরে হামলা, শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানোর প্রতিবাদে এবং ৮ দফা দাবিতে দেশের প্রতিটি জেলায় মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে সনাতন জাগরণ মঞ্চ।
শুক্রবার বিকালে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে আয়োজিত বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের গণসমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচির এ ঘোষণা দেয়া হয়। চট্টগ্রাম শহর ও বিভিন্ন উপজেলা, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলা থেকে সনাতনীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন। এতে লালদীঘির মাঠ হয়ে ওঠে লোকে লোকারণ্য।
সনাতনীরা ‘এক দফা এক দাবি ৮ দফা মানতে হবে’, ‘প্রশাসন নীরব কেন? জবাব চাই দিতে হবে’, ‘আমার মায়ের কান্না... বৃথা যেতে দেব না’, ‘আমার দেশ সবার দেশ, বাংলাদেশ বাংলাদেশ’, ‘আমার মাটি আমার মা, এই দেশ আমরা ছাড়ব না’, ‘রক্তে আগুন লেগেছে, সনাতনীরা জেগেছে’, ‘আমার ঘরে আগুন কেন, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘আমার মন্দিরে হামলা কেন, জবাব চাই দিতে হবে’, ‘হিন্দুদের ওপর হামলা কেন? জবাব চাই, দিতে হবে’, ‘বৈষম্যহীন বাংলায়, সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নাই’ স্লোগান দিতে থাকেন।
সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও পুন্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর সভাপতিত্বে এবং স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাস ব্রহ্মচারীর সঞ্চালনায় গণসমাবেশে বক্তব্য রাখেন শংকর মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ তপনান্দ গিরি মহারাজ, পটিয়া পাঁচরিয়া তপোবন আশ্রমের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ রবীশ্বরানন্দ পুরী মহারাজ, ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, বাঁশখালী ঋষিধামের মোহন্ত সচিদানন্দ পুরী মহারাজ, শ্রীমৎ মুরারী দাস বাবাজী, তপোবন আশ্রমনের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রাঞ্জলানন্দ পুরী মহারাজসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও সনাতনীরা শুধু অবহেলিত, নির্যাতিত-নিপীড়িত হয়ে আসছে। সরকার আসে সরকার যায়; কিন্তু সনাতনীদের ভাগ্য বদলায় না। যে সরকার ক্ষমতায় থাকে তারা সনাতনীদের দুঃখ-দুর্দশাকে লুকানোর চেষ্টা করে। সনাতনীদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়, নির্যাতন লুকিয়ে স্বাভাবিকতার কথা বলে। গত ৫৩ বছরে এদেশে হওয়া হিন্দু নির্যাতন, খুনের কোনো বিচার হয়নি। বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে অপরাধীরা বারবার এই ধরনের ঘটনায় উৎসাহিত হয়েছে। প্রতিবার ভোট পরবর্তী সময়ে বা ক্ষমতার পালাবদলের সময় নির্যাতনের খড়গ নেমে আসে হিন্দুদের ওপর। সেটা কেন হবে? কারা দোষী? কারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত? তাদের আইনের আওতায় আনা হলে তো বেরিয়ে আসবে কারা সাম্প্রদায়িক ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কেন সরকার সাম্প্রদায়িক ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করছে না?
বক্তারা আরো বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারকে আমরা বলতে চাই- আমরা চেয়েছি ৫ দিনের ছুটি, সেখানে ২ দিন ছুটি কেন? যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়তে গিয়ে এদেশের ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছে সেখানে আবার বৈষম্য হবে কেন? ক্ষতিগ্রস্ত সনাতনীদের ক্ষতিপূরণ এবং রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সংস্কার করার কথা বলেছে সরকার। এটি খুবই ইতিবাচক। খুব দ্রæত এই বিষয়ে কার্যকর প্রদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
তারা আরো বলেন, ৮ দফা দাবি মেনে নেয়া কঠিন কিছু নয়। এই সরকার যদি সনাতনীদের ৮ দফা মেনে নেয় তাহলে তারা আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবে। তবে সনাতনীরা আন্দোলন সংগ্রাম করতে জানে, অধিকার আদায়ও করতে জানে। প্রধান উপদেষ্টা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি যেন সনাতনীদের জন্য শান্তির একটি দেশ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, সেই আশা করব আমরা।
সমাবেশে উত্থাপিত ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিচারের জন্য দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দোষীদের দ্রুততম সময়ে উপযুক্ত শান্তি প্রদান, ক্ষতিগ্রস্তদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। অনতিবিলম্বে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রনয়ন করতে হবে। সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। হিন্দুধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকে হিন্দু ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে। পাশাপাশি বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টানধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টকেও ফাউন্ডেশনে উন্নীত করতে হবে।
‘দেবোত্তর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ আইন প্রণয়ন এবং অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পন আইন’ যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংখ্যালঘুদের জন্য উপাসনালয় নির্মাণ এবং প্রতিটি হোস্টেলে প্রার্থনা রুম বরাদ্দ করতে হবে। এছাড়া সংস্কৃত ও পালি শিক্ষা বোর্ড আধুনিকায়ন করতে হবে। শারদীয় দুর্গাপূজায় ৫ দিন ছুটি দিতে হবে।