×

সারাদেশ

সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের কারণে খুন হন চেয়ারম্যান সেন্টু, দাবি পরিবারের

Icon

এস আর সেলিম, দৌলতপুর (কুষ্টিয়া)

প্রকাশ: ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০৭:০৪ পিএম

সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের কারণে খুন হন চেয়ারম্যান সেন্টু, দাবি পরিবারের

ছবি: সংগৃহীত

   

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার সন্ত্রাস অধ্যুষিত অন্যতম এলাকা চার ইউনিয়নের চরাঞ্চল। এসব ইউনিয়নের একটি ফিলিপনগরে সন্ত্রাসীদের তৎপরতা সবচেয়ে বেশি। গত সোমবার সেখানে আবারো ঘটে গেল নৃশংস হত্যাকাণ্ড। ওই দিন নিজ কার্যালয়ে দাপ্তরিক কাজ করার সময় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ইউপি চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু। দুর্গম চরাঞ্চলে সন্ত্রাসী বাহিনী দমনে সক্রিয় ভূমিকা রাখার কারণেই তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয় বলে দাবি করেছেন তার পরিবার। তারা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন। 

ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) নিজ এলাকায় চেয়ারম্যান সেন্টুর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। তার জানাজায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ঘটে। এ হত্যার ঘটনায় নিহত চেয়ারম্যানের ছেলে আহসান হাবিব বাদী হয়ে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। 

পুলিশ জানায়, নিহত ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টুর শরীরে দুটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে শর্টগান দিয়ে গুলি করে মারা হয়েছে। আরো তদন্ত সাপেক্ষে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

পরিবারের লোকজনের দাবি, চেয়ারম্যান সেন্টু সন্ত্রাস অধ্যুষিত ফিলিপনগর এলাকায় শান্তি ফেরাতে তার ভাই শিল্পপতি আব্দুর রাজ্জাকের মাধ্যমে তদবির করে ফিলিপনগরে একটি র‌্যাব ক্যাম্প স্থাপন করেন। এরপর র‌্যাবের সঙ্গে ক্রসফায়ারে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী মারা যায়। আটক হয় বিভিন্ন অপরাধে জড়িত সন্ত্রাসীরা। এছাড়া উদ্ধার হয় অস্ত্রসস্ত্র ও বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। পরে র‌্যাব ক্যাম্পটি অনত্র স্থানান্তর করা হলে সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানের কারণে প্রতিশোধ নিতেই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যান সেন্টুকে হত্যা করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী জানান, উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলে সন্ত্রাস দমনে চেয়ারম্যান সেন্টু অনেক দৌড়াদৌড়ি করেছেন। নিজের অর্থ খরচ করেছেন বলে তিনি নিজেই বিভিন্ন জায়গায় এসব কথা বলতেন। সন্ত্রাস দমনে সোচ্চার ভূমিকা পালন করায় সন্ত্রাসীরা হয়তো তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। 

নিহত চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আরমা গ্রুপের চেয়ারম্যান শিল্পপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোনো হত্যাকাণ্ডই স্বাভাবিকভাবে দেখার সুযোগ নেই। আমার ভাইকে কারা হত্যা করেছে, কারা ইন্ধন দিয়েছে সেটা এলাকার সবার জানা। প্রশাসনের কাছে প্রত্যাশা তারা যেন প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করেন।  

দৌলতপুর-ভেড়ামারা সার্কেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল খালেক জানান, হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা মাঠে কাজ করছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে এরই মধ্যে মোটামুটি চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তদন্তের স্বার্থে কাদের মামলার আসামি করা হয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। দুয়েকদিনের মধ্যই এ বিষয়টি খোলাসা করা হবে। 

ঘটনার দিন চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাড়িঘরে আগুন, ভাঙচুর ও লুটতরাজের ঘটনা ঘটে। উদ্ভুত পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে প্রচণ্ড বেগ পেতে হয়। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ইউনিয়ন পরিষদ ঘিরে রেখে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এতে সুরতহাল রিপোর্ট করে চেয়ারম্যানের মরদেহ উদ্ধারে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। দীর্ঘ সময় পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় ইউপি চেয়ারম্যান সেন্টুর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার রাতেই তিনবারের এই নির্বাচিত চেয়ারম্যানের মরদেহ নিজ বাড়ি ফিলিপনগরের বাজারপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। 

েএদিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফিলিপনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নিহতের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাজি আলতাফ হোসেন, নিহতের ছোট ভাই আরমা গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। 

চেয়ারম্যান সেন্টু ফিলিপনগর এলাকার মৃত মোতালেব সরদারের ছেলে। সন্ত্রাসীদের বুলেটে তাকে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খুনিদের শাস্তির দাবিতে ফুঁসে উঠেছেন শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসী। 

প্রসঙ্গত, উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়ন পরিষদের তিনবারের চেয়ারম্যান নঈম উদ্দিন সেন্টু অন্যান্য দিনের মতো সোমবার সকাল ১০টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদে তার কার্যালয়ে যান। অফিসে বসে দাপ্তরিক কাজ করার একপর্যায়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সন্ত্রাসীরা এসে জানালা দিয়ে মাথায় গুলি করলে তিনি ফ্লোরে লুটিয়ে পড়েন। এরপর সন্ত্রাসীরা সরাসরি অফিসে ঢুকে চেয়ারম্যান সেন্টুর ওপর আবারো গুলি চালিয়ে হত্যা নিশ্চিত করে। এ সময় পরপর কয়েক রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে সন্ত্রাসীরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর টহল তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App