অতিবৃষ্টি ও বেড়িবাঁধ ভাঙন
সাতক্ষীরায় কৃষিখাতে ক্ষতি ৭০০ কোটি টাকা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:০৮ এএম

ছবি: ভোরের কাগজ
ভাদ্র ও আশ্বিন মুর্হুমুর্হু টানা বৃষ্টি ও বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে সাতক্ষীরায় মৎস্য ও কৃষি খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভেসে গেছে ৬ হাজার মৎস্য ঘের ও দেড় হাজার পুকুর। পানিতে তলিয়ে গেছে রোপা আমন, আউশ ও বিভিন্ন ধরনের শাকসবজির ক্ষেত।
অধিদপ্তর সুত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে ৫ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে ৪ দিন টানা ভারী বর্ষণে সদর উপজেলার বিনেরপোতা এলাকার শ্মশানঘাটের পাশে বেতনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকায় প্লাবিত হয়। এতে দুই উপজেলা ৩ ইউনিয়নের অন্তত ৪০/৫০টি গ্রাম লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। ভেসে যায় হাজার হাজার বিঘা জমির ঘের,পানিতে তলিয়ে যায় ফসলের ক্ষেত, পুকুর।
বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ড বেতনা নদীর ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার করতে পারেনি। ফলে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত বিনেরপোতা, খেজুরডাঙ্গা, গোপীনাথপুর, তালতলা, আহসাননগর, হরিণখোলা, গোয়ালপোতা, গাছা, দক্ষিণ নগরঘাটা, হাজরাতলা, পালপাড়া, গাবতলা, দোলুয়া, নগরঘাটা, রথখোলা, কাপাসডাঙ্গা, নিমতলাসহ ৫০টি গ্রামের মানুষ এখনো পানিবন্দি হয়ে আছে। বাড়িঘরে পানি ওঠায় অনেকেই ছেড়েছেন এলাকা। লোকলায় পানি ঢোকা অব্যাহত আছে।
এছাড়া বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পুরাতন সাতক্ষীরা এলাকার ঘুটেরডাঙ্গী, রামচন্দ্রপুর, লবণগোলা, পাথরঘাটা, দামারপোতা, জিয়ালা, ধুলিহর, বালুইগাছ, ফিংড়ি, ফয়জুল্লাহপুর, দরবেশতিয়া, কোমরপুর, তেঁতুলডাঙ্গী, মাছখোলা, শ্যালেসহ ৩০টি গ্রাম ও পৌর এলাকার অর্ধেক এলাকায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ২০—২৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার পুকুর, ঘের, আমন ধান ও শাক—সবজির ক্ষেত।
সদর উপজেলার বিনেরপাতার মৎস্য চাষী সবুজ,কামরুল, কবিরাজ বলেন, আমাদের ১৮০ বিঘা জমির তিনটি ঘের রয়েছে। সবকটায় সাদামাছ ও হাসের চাষ করা হয়েছিল। বৃষ্টি ও বেতনা নদী ভাঙনে আমাদের সবগুলো ঘের পানিতে ভেসে গেছে আর প্রায় এক কোটি টাকার হাঁস কোথায় চালে গেছে খুজে পাওয়া যায়নি। নদী ভাঙনে আমাদের প্রায় আড়াই কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
সদরের ধুলিহর ইউনিয়নের বালুইগাছা থেকে কৃষক চন্দন,তহিদ,কাদের বলেন আমরা ১৬ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করেছি। সব জমির ধানের উপরে এক ফুটের বেশি পানি। প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকা খরচ করেছি। পানি নিস্কাসনের ব্যাবস্থা নাথাকায় বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টিতে পুরো ক্ষেত তলিয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় পানির নিচে থাকায় ধান গাছগুলো পঁচে গেছে। দ্রুত পানি সরানো নাগেলে আর এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে সব শেষ হয়ে যাবে।
মাটিয়াডাঙ্গা থেকে হাবিবুর রহমান, মামুন, বিপুল, সালাউদ্দীন ও নাজমুল হুদা বলেন,আমাদের সমগ্র বিলে প্রায় ১২/১৩ হাজার বিঘা জমিতে সাদা ও চিংড়ি মাছ চাষ হয়। প্রতিটি ঘের সামান্য জেগে আছে।এভাবে বৃষ্টি হলে আমাদের এলাকার সমগ্র ঘের ভেসে যাবে। বৃষ্টির জমে থাকা পানি বের হওয়ার কোন ব্যাবস্থা নাই। মরা খুব বিপদে আছি। আমরা জেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আর্কষন করছি, ঘের ভেসে নিঃস্ব হওয়ার আগে আমাদের এলাকায় পানি সরানোর ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ—পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি আমন মৌসুমে অতিবৃষ্টিতে পাঁছ হাজার ৪৫২ হেক্টর জমি আক্রান্ত হয়েছে। এরমধ্যে ১৪৯ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এর বাজারমূল্য ৯ কোটির বেশি। এখনই জলবদ্ধতা নিরসন করতে না পারলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে।
জেলা মৎস্য অফিসার আনিছুর রহমান বলেন, অতিবৃষ্টিজনিত কারণে জেলার সাতটি উপজেলায় বিশেষ করে শ্যামনগর ও সাতক্ষীরা সদরে বেতনা নদীর একটা অংশ ভেঙে গেছে। আশপাশের ঘেরগুলো একেবারে পানির সাথে মিশে গেছে। এখানে ৫ হাজার ২৩০ হেক্টর এরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে মৎস্যচাষীদের প্রায় ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অবকাঠামোগত যে ক্ষতি হয়েছে, সেটিও চার কোটি টাকার অধিক। এ ক্ষতির হাত থেকে চাষীদের রক্ষা করতে সহজ শর্তে যদি ঋণের ব্যবস্থা করা যেত, অথবা তাদের প্রণোদনের আওতায় আনা গেলে চাষীরা আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।