উত্তাল রাজশাহী
রাজপথ দখলে নিয়ে আ.লীগের ফেস্টুন-ব্যানার-নৌকা অপসারণ

কাগজ প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ: ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে রাজশাহী। শনিবার বৃষ্টি উপেক্ষা করেই নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সব সড়কে অবস্থান নেয়ার পাশাপাশি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল করেন কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। ৯ দফার পর এদিন এক দফা দাবিতে দেয়ালে লিখন ও স্লোগান দেন। এ সময় নগরীর তালাইমারি মোড়ে টাঙানো আওয়ামী লীগের ফেস্টুন, ব্যানার ও নৌকা ভেঙে ফেলে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বিজয়োল্লাস করেন তারা।
জানা গেছে, শনিবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থবেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী কলেজ, সিটি কলেজ ও নিউ ডিগ্রি কলেজসহ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মিছিলে নামেন। সকাল সাড়ে ১০টার সময় নগরীর তালাইমারি এলাকায় মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এরইমধ্যে রাবির প্রধান ফটকে জড়ো হন সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। ভদ্রা ও নর্দান মোড় থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল যোগ দেয়।
এ সময় ‘এক দুই তিন চার, স্বৈরাচার তুই গদি ছাড়’, ‘শিবির ট্যাগের ছলচাতুরী, বুইজা গেছে জনগণ’, ‘দফা এক দাবি এক, স্বৈরাচারের পদত্যাগ’, ‘নয়-ছয় বুঝি না, কবে যাবি হাসিনা’, ‘আবু সাঈদ মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’- এমন স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
মিছিলের সময় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হলেও তারা মহাসড়ক ছাড়েননি। একপর্যায়ে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কে অবরোধ করা হলে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় তালাইমারি এলাকায় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার ব্যানার ফেস্টুন ও নৌকা টেনে-হিঁচড়ে নামিয়ে ভেঙে ফেলেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। পিলারের ওপর দাঁড়িয়ে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে তারা আবারো স্লোগান দিতে থাকেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবি করে দেয়ালে স্লোগান লিখেন তারা।
এরপর শিক্ষার্থীরা কাজলা ও বিনোদপুর বাজার হয়ে রাবির প্রধান ফটকে মিছিল নিয়ে যান। সেখানে রাবির নামফলকেও সরকারপ্রধানকে নিয়ে স্লোগান লেখেন তারা। বেশ কয়েকজন নামফলকের দালানের ওপর দাঁড়িয়ে যান। জাতীয় পতাকা ওড়াতে ওড়াতে স্লোগান দেন। কর্মসূচিতে রাবি এবং রুয়েটের শিক্ষকরাও একাত্মতা পোষণ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
আরো পড়ুন: জুড়ীতে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগের হামলা, আহত ৩ শিক্ষার্থী
এ সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ড. ফজলুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের আর কোনো ভয় পাবার কারণ নেই। তাদের পিতৃতুল্য শিক্ষকরা তাদের সামনে থাকবেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে আমরা একাত্মতা পোষণ করছি এবং তাদেরকে সুরক্ষা দিতে সবসময় তাদের সঙ্গেই আমরা আছি। গণহত্যার দায় স্বীকার করে স্বৈরাচারী সরকারের পদত্যাগ দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, আর কত ঘরে বসে আমার ছেলেদের রক্ত দেখবো? শিক্ষার্থীদের গায়ে গুলি করতে স্বৈরাচার সরকারের কি একটুও বুক কাঁপেনি? আজ থেকে এ আন্দোলনে গুলি চালালে সেই গুলি আগে শিক্ষকদের গায়ে লাগবে, তারপর আমাদের ছাত্রদের।
বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কর্মসূচি শেষে দুপুর ২টার দিকে নগরীর ভদ্রা ও রেলগেটে সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। রেলগেট এলাকায় মিছিল আসলে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী-নওগাঁ রুটে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এসময় শিক্ষক ও আন্দোলনের সমন্বায়করা সেখানে বক্তব্য দেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দেন তারা।
তবে এদিন কোনো সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। এ ব্যাপারে আরএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জামিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে বিক্ষোভ করতে দেয়া হয়েছে, কোনো বাধা দেয়া হয়নি। এরপরও শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। আমাদের দুটি পুলিশ বক্স ভাঙচুর করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের মারধরে এক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছেন তিনি।
সাবেক মেয়র-পত্নীর কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের বাধা-
বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক রাসিক মেয়র ও এমপি মিজানুর রহমান মিনুর পত্নী সালমা শাহাদত ইসলামকে কর্মসূচি পালনে বাধা দিয়েছে ছাত্রলীগ। শনিবার বেলা ১১টার দিকে নগরীর সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি রাজপথে নামেন। শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে অবস্থান নিতে থাকেন। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা খবর পেয়ে সেখানে যান এবং তাকে বাধা দেন।
মহানগর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিরাজুম মুবিন সবুজ মিনুপত্নীকে সরে যেতে বলেন। এসময় তার কথায় কর্ণপাত না করে সেখানেই অবস্থান নেন বিএনপির নেতার এ স্ত্রী। সালমা শাহাদাত বলেন, আমি কোথাও যাব না, এখানেই থাকব। আপনাদের কর্মসূচি থাকলে আমাদেরও কর্মসূচি পালনের অধিকার রয়েছে।