সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়লেও কমেনি হুমকি

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৯ জুলাই ২০২৪, ০৮:৩৩ এএম

ছবি: সংগৃহীত
আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। বাঘের আবাস রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে প্রতি বছরের ২৯ জুলাই পালিত হচ্ছে এই দিবসটি।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট ক্রমবর্ধমান হুমকির মুখে প্রাণিটির অস্তিত্বের সংকট কাটছেই না। বনবিভাগ বলছে, ৬ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে বাঘের সংখ্যা। তবে কমেনি টিকে থাকার হুমকিগুলো।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় গত বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে সাতক্ষীরা ও খুলনা রেঞ্জে শুমারি হয়। এ বছরের প্রথম দিকে বনের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জেও একই পদ্ধতিতে শুমারি করা হয়েছে। ৪০ দিন ধরে প্রতিটি রেঞ্জের ১৪৫টি পয়েন্টে দুটি করে ক্যামেরা বসানো হয়েছিল। এ ছাড়া সুন্দরবনে খাল সার্ভের মাধ্যমে বাঘের পায়ের ছাপ সংগ্রহ করা হয়। প্রায় চার মাস আগে শুমারির মাঠ পর্যায়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে সুন্দরবনে বাঘ শুমারি শুরু হয়। এর মাঠ পর্যায়ের কাজ শেষ হয় চার মাস আগে। এখন চলছে বিশ্লেষণ। এবারের শুমারিতে বাঘের সংখ্যা বাড়বে বলে ধারণা বন বিভাগের। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সমীক্ষা বলছে, বনে যে খাবার আছে, তাতে টিকে থাকতে পারে কমপক্ষে ১৬৪টি বাঘ।
বাঘ সংরক্ষণ প্রকল্প পরিচালক ও সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, বাঘের প্রায় সাড়ে সাত হাজার ছবি পাওয়া গেছে। একই বাঘের ছবি পাওয়া গেছে বহুবার। এজন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রতিটি বাঘের ‘ইউনিক আইডি’ করা হয়েছে। এসব ছবি বিশেষজ্ঞদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে। তারা সেগুলো বিশ্লেষণ করছেন।
তার তথ্য মতে, এবারের শুমারিতে সুন্দরবনের অন্য তিনটি রেঞ্জের মতো খুলনা রেঞ্জেও বাঘের অনেক ছবি পাওয়া গেছে। এবারই প্রথম সবচেয়ে বেশি বাঘের বাচ্চার ছবি পেয়েছি। এ থেকে ধারণা করছি, বাঘ আগের তুলনায় বেড়েছে। তবে সংখ্যা কত, তা জানাতে কয়েকদিন সময় লাগবে।
বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মোহসিন হোসেন জানান, এবারের বাঘ দিবসে শুমারির তথ্য প্রকাশ করার কথা ছিল। কিন্তু আন্দোলন ও কারফিউর কারণে সব কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। সেজন্য আগামী মাসে ফল ঘোষণা করা হবে।
বাঘের জন্য হুমকি বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে গবেষক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম এ আজিজ বলেন, সুন্দরবনে বাঘের প্রধান খাদ্য হরিণ ও শূকর। কিন্তু হরিণ শিকার বন্ধ হয়নি। এটি বাঘের জন্য পরোক্ষ হুমকি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, বনের পার্শ্ববর্তী এলাকায় অসংখ্য শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানার তরল বর্জ্য পশুর নদীতে ফেলা হচ্ছে। এসব দূষণ বাঘের ক্ষতি করছে। কিছু জেলে বিষ দিয়ে মাছ ধরছেন। এতে বাঘের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে ২০১৮ সালে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতে করা শুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ১১৪।