মধ্যনগরের হাওরে পানি বাড়লেও মাছের দেখা মিলছে না

রাসেল আহমদ, মধ্যনগর (সুুনামগঞ্জ) থেকে
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৪, ০৬:০৩ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
সুুনামগঞ্জের মধ্যনগরে নদ-নদী ও হাওরের পানি বাড়লেও মাছ নেই। ফলে স্থানীয় মৎস্য আড়তে দেশীয় মাছের উপস্থিতি নেই বললেই চলে। বাজারে মাছ না থাকায় দাম বেড়েছে কয়েকগুণ। উপজেলার বংশীকুন্ডা বাজারে মাছের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, আড়তদারেরা বসে বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। আড়তগুলোতে মাছ নেই বললেই চলে।
বংশীকুন্ডা বাজারে মাছ ব্যবসায়ীরা কয়েকটি ঢালায় সাজিয়ে রেখেছেন পুকুরের চাষের পাঙ্গাশ, সিলভার কার্প, কড়া বাগড়া (ছোট রুই), কাতলা, কই, ব্রিগেড, তেলাপিয়া, ঘাস কার্প, কার্গো ইত্যাদি মাছ রয়েছে। তবে দেশী জাতের মাছের দেখা মিলেনি।
অন্যান্য বছর এ সময়ে বর্ষার আগমনে নদনদী-হাওরে দেশীয় মাছ পাওয়া যায়। কিন্তু এ বছর বর্ষার পানি একটু দেরিতে আসায় মাছের দেখা পাচ্ছে না জেলেরা।
উপজেলার মধ্যনগর বাজার, বংশীকুন্ডা বাজার, সাতুর নতুন বাজার, রুপনগর বাজার, আলমপুরের ঘাট ইত্যাদি স্থানের মৎস্য আড়ৎ থেকে প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রির জন্য মিঠা পানির মাছ সরবরাহ করা হয়। বড় বাক্সে করে বরফ দিয়ে এসব মাছ মধ্যনগর পিপড়াকান্দা ঘাট বা নেত্রকোণার কলমাকান্দায় নৌকায় পাঠানো হয়। সেখান থেকে ট্রাকে পরিবহন করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মাছের আড়তে পৌঁছে যায়।
বংশীকুন্ডা বাজারের মৎস্য আড়তের লিটন সরকার বলেন, এখনতো শুধু নদীতে পানি আসছে। তাই সামান্য পরিমাণ দেশীয় মাছ আড়তে আসছে। এই মাছ দিয়ে একটা টেংকি (বাক্স) ভরেনা। কোনোদিন অর্ধেকটাও হয়না। মাছ কিছু মিললেও দাম অনেক বেশী। যদি মাছের আমদানি বেশি থাকতো তাহলে আড়তে মাছের দাম কমতো।
আরো পড়ুন: রেমালে নিঃস্ব চরবাসীর মুখে জুটবে না কোরবানির গোস্তো!

রুপনগর বাজারের মৎস্য আড়তদার আমিন মিয়া বলেন, বৃহস্পতিবার (১৪ জুন) কোনো মাছ পাইনি। শুক্রবার (১৫ জুন) আধা টেংকী (বাক্স) মাছ পাইছি, তাও গুড়া ইছা (ছোট চিংড়ি)। এ অবস্থায় ব্যবসা চালানো কষ্ট হচ্ছে।
মধ্যনগর বাজারের মৎস্য আড়তদার দেলোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর হাওরে দেরিতে পানি আসায় নদ-নদীতে মাছ ধরা পড়েনি। যার ফলে আড়তে দেশীয় মাছের আমদানি কম। আড়তে কোনোদিন মাছ হয়, আবার কোনোদিন হয়না। অনেকটা লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে ব্যবসা চালাচ্ছি।
বংশীকুন্ডা বাজারে মাছ কিনতে আসা এবিএম জুয়েল তালুুকদার জানান, বাজার জুড়ে চাষের মাছ। পরিবারকে বোঝাতে মাছ কিনেছি। রান্নার পর স্বাদ কম পাওয়া যায়। তবুও কিনে নিতে হয়।
বংশীকুন্ডা বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী মিঠু মিয়া বলেন, হাওর ও নদীর মাছটা এখন কম। পুকুরের চাষের মাছের আমদানি বেশি রয়েছে। এখন চাষের মাছ বাজারটা ধরে রেখেছে। মাস দুয়েক পর আশ্বিন-কার্তিক মাসের দিকে দেশীয় প্রজাতির মিঠাপানির মাছের আমদানি বাড়বে।
মধ্যনগর উপজেলা মৎস কর্মকর্তার অতিরিক্ত দ্বায়িত্বে থাকা মো. মাহমুদুর রহমান ভোরের কাগজকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার বর্ষা দেরিতে শুরু হচ্ছে। এই কারণে দেশীয় মাছের প্রজনন অনেকটা ব্যাহত হচ্ছে। হাওর বা নদীতে মাছের পোনা রক্ষায় অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। স্থানীয়রা সচেতন হলে মৎস্য সম্পদ রক্ষা পাবে।