নেত্রকোণার সেই বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি, উদ্ধার অস্ত্র ও হ্যান্ডকাফ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ জুন ২০২৪, ০৮:২৯ এএম

ছবি: সংগৃহীত
নেত্রকোণার সদর উপজেলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে সেখান থেকে বিদেশি পিস্তল, গুলি, ওয়াকিটকি, হ্যান্ডকাফ ও খেলনা একে-৪৭ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শনিবার (৮ জুন) দুপুর ১টার পর সদর উপজেলার কাইলাটি ইউনিয়নের ভাসাপাড়া গ্রামের ওই বাড়ির চারপাশে অবস্থান নেন পুলিশ সদস্যরা। পরে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ময়মনসিংহ থেকে আসা এন্টি টেরোরিজম ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে বাড়িটির ভেতরে ঢুকে প্রাথমিক অভিযান চালায়।
নেত্রকোণার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ অভিযান শেষে বলেন, প্রাথমিকভাবে আমরা একটা তল্লাশি করেছি। বাড়িটির ভেতরে কাউকে পাওয়া যায়নি। যেহেতু বিস্ফোরক থাকার সম্ভাবনা আছে তাই আমরা বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটের জন্য অপেক্ষা করছি। তারা এলে আমরা আরো অধিকতর তল্লাশি করব।
এদিকে এমন ঘটনায় হতবাক এলাকাবাসী। তারা বলছেন, বছর দুয়েক আগে এই বাড়িটি ভাড়া নেয় একটি পরিবার। কিন্তু কখনো কোনো কারণে তাদের মনে হয়নি যে এরা জঙ্গি হতে পারে। এই পরিবারের পুরুষ যারা মসজিদে নামাজ পড়তে আসত তারা সবার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করতো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রতিবেশী বলেন, তাদের পরিবারের সঙ্গে ওই বাড়ির লোকজন সব সময়ই ভালো আচরণ করত। দেখা হলেই সালাম দিত। তারা নামাজ পড়ার পরে যে কোরআন শরিফ পড়তো, তখন খুব সুন্দর শোনা যেত। কিন্তু তাদের ভেতর যে এ রকম চিন্তা এটা আমরা ভাবতেও পারিনি। কিন্তু তাদের চেহারা আমরা কখনো দেখতে পারতাম না। মহিলারা সব সময় পা থেকে মাথার চুল পর্যন্ত ঢেকে চলাফেরা করতো। কিন্তু তাদের বাসায় কখনো যাওয়া যেত না।
আরো পড়ুন: পাবনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে গুলি করে হত্যা
তিনি আরো বলেন, আমাদের বাড়ির মেয়ের জামাইরা এলে দোতলা বাড়ি দেখে একটু ভেতরে গিয়ে দেখতে চায়। কিন্তু ওরা কখনো গেট খুলে ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। পুরুষরা মসজিদে যাতায়াতের সময় মাঝেমধ্যে দেখা যেত। কিন্তু মহিলাদের কখনো দেখতে পারতাম না। তারা সব সময় গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করত।
ওই নারী বলেন, সবার ব্যবহার ভালো হলেও একজন লোক ছিল যার চেহারা খুব ভয়ংকর। তার কথা শুনলেই গায়ের লোমগুলো দাঁড়িয়ে যায়, জংলিদের মতো তার চেহারা। আমরা তো ধান কাটার সময় বা শুকানোর সময় ওদের আশপাশে যাতায়াত করতাম। কিন্তু কখনোই তাদের গেট খোলা পেতাম না, আর চারদিকে খালি সিসি ক্যামেরা। এখন আজকের ঘটনার পর তো ভয়ে আমার শরীর কাঁপছে।
আরেক প্রতিবেশী বলেন, আমরা তো দুই আড়াই বছর যাবৎ তাদের দেখতেছি বাড়ির পুরুষ যারা আছে, তারা মসজিদে আমাদের সঙ্গে সবসময় নামাজ পড়ে। বেশিরভাগ সময় দুইজন পুরুষ নামাজ পড়তে আসতো, আর একজন মাঝে মধ্যে আসতো। মোট তিনজন এই মসজিদে নামাজ পড়তে আসতো।
তিনি আরো জানান, ওই বাড়ির মহিলা যারা ছিল তারা খুবই পর্দানশীল। হাতে মোজা, পায়ে মোজা, সারা শরীর বোরকা দিয়ে ঢাকা। চেহারার কোনো অংশ দেখা যেতো না, শুধু চোখ দুইটা দেখা যাইতো। দুই মহিলার মধ্য এক মহিলার দুই মেয়ে, এক ছেলে সন্তান ছিল। আরেক মহিলা ছিলেন তার এক ছেলে, এক মেয়ে এবং উনি ১০ মাসের গর্ভবতী ছিলেন।
তিনি বলেন, তারা সব সময় নিজস্ব গাড়ি দিয়ে যাতায়াত করত। তবে তারা কী কাজ করতো এটা আমরা কখনো জানতে চাইনি। কী করে তা জানিও না। আর এই বাড়িটা এক প্রফেসরের ছিল। তিনি এটা কলেজ করার জন্য তৈরি করেছিলেন। কিন্তু কলেজ করতে পারেননি। পরে কিছু দিন মাদরাসার কাছে ভাড়া দেয়া ছিল। তারপর আড়াই বছর আগে ওই ভাড়াটিয়ারা আসেন।
আরো পড়ুন: আবারো সেন্টমার্টিনগামী ট্রলারকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ
কাইলাটি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৬নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন জানান, বাড়ির মালিক প্রফেসর আব্দুল মান্নান। তার বাড়ি জেলার আটপাড়া উপজেলায়। বছর তিনেক আগে বর্তমান বাসিন্দাদের কাছে বাড়িটি ভাড়া দেয়া হয়। তবে ভাড়া নেয়া ব্যক্তিদের সম্পর্কে লোকজন কিছু জানে না। পুরো বাড়িটি সিসি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে।

দুপুর থেকে পুলিশ ওই বাড়িটি ঘিরে রাখার পর বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন নেত্রকোণার পুলিশ সুপার ফয়েজ আহমেদ। তিনি জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অনেক আগে থেকেই এই বাড়িটির ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। এখন পুলিশ এখানে অবস্থান নিয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, সোর্স এবং গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি, নেত্রকোণা শহরের কোথাও একটা জঙ্গি প্রশিক্ষণের আস্তানা রয়েছে। এ রকম একটা প্রাথমিক তথ্য পাই আমরা। তার ভিত্তিতে আমরা অনেকদিন ধরে কাজ করি। কাজ করার ভিত্তিতে আমরা গতকাল (শনিবার) রাতে নিশ্চিত হই যে এই এলাকায় তারা অবস্থান করছে। তারপর সদর থানার পুলিশ সদস্যরা অভিযান পরিচালনা করেন। অভিযানে আমরা এখান থেকে জঙ্গি প্রশিক্ষণের বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধার করেছি। যেমন খেলনা একে-৪৭ এর মতো অস্ত্র, বিদেশি পিস্তল, হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি। একটা রুম ছিল সেটা সাউন্ড প্রুফ ছিল। বিভিন্ন ধরনের যে আইটেমগুলো আমরা এখানে পেয়েছি সেগুলো আসলে প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজন হয়।
কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করিনি। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এখনো কাজ চলমান আছে। ইতোমধ্যে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট এসেছে। আমরা আশা করি তারা একটা ভালো ফলাফল দেবে।