মানিকগঞ্জে কমছে না নাব্য সংকট, বাড়ছে সরকারি টাকার অপচয়

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৪২ পিএম

মানিকগঞ্জের আরিচাঘাট ও পাবনার কাজীরহাট নৌ-রুটে নাব্য সংকটের কারণে অতিরিক্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে ফেরি। ফলে ব্যয় হচ্ছে বাড়তি সময়, বাড়ছে জ্বালানি খরচ আর অপচয় হচ্ছে সরকারি টাকা। এমন অভিযোগ বিআইডব্লিউটিসির কর্মকর্তা-কর্মচারি এবং স্থানীয়দের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বালুমহলের ইজারাদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে আরিচা বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে কচ্ছপ গতিতে নদীর মাটি নদীর অনতিদুরেই ফেলছে। এতে বিআইডব্লিউটিয়ের কর্মকর্তা, কর্মচারিরা আর্থিকভাবে লাভবান হলে কাটছে না নদীর নাব্য সংকট।
আরিচা-কাজীরহাট নৌ-রুটে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মূল চ্যানেলে ডুবোচর জেগে ওঠায় প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে ফেরিগুলো চলাচল করছে। প্রায় বছরজুড়েই এই নৌ-রুটে চলমান রয়েছে নামসর্বস্ব ড্রেজিং কার্যক্রম। নদীতে ৮টি ড্রেজার স্থাপন করা হলেও ৪টি ড্রেজার চলমান রয়েছে।
শাহ আলী ফেরির ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার রোমান সরকার রতন জানান, আরিচা প্রান্তের ব্যাসিনসহ আড়াই কিলোমিটার এলাকায় এই সমস্যা প্রকট। যথেষ্ট গভীরতা না থাকায় ফেরিগুলো এ চ্যানেল দিয়ে চলাচল পারছে না। আগস্ট মাসের শেষ দিক থেকে ফেরিগুলো প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা ঘুরে বিকল্প চ্যানেল দিয়ে চলাচল করছে। এতে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে। আর সময় বেশি লাগলে জ্বালানি খরচ বেশি হবে এটাই স্বাভাবিক। এখানকার ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পূর্ণ নির্ভর করছে বিআইডব্লিউটিএ’র ইচ্ছা অনিচ্ছার ওপর। তারা মন চাইলে ড্রেজিং করেন, মন না চাইলে বন্ধ করে রাখেন।
সুফিয়া ফেরির ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আমির হোসেন জানান, আরিচা ২ নম্বর ঘাট থেকে কেডিসি পর্যন্ত নাব্য সংকট বেশি। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে নদীর স্রোত। পলি জমে মূল চ্যানেল বন্ধ থাকায় এখন বিকল্প চ্যানেল ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে ফেরির জ্বালানি খরচ অনেক গেছে।
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা ঘাট ম্যানেজার আবু আব্দুল্লাহ জানান, ফেরি চলাচলে সময় বেশি লাগায় জ্বালানি খরচও বেড়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বলেছে খুব তাড়াতাড়ি নাব্য সংকট কাটবে। কিন্তু তাদের কথা কাজের কোন মিল পাওয়া যাচ্ছে না। ৮টি ড্রেজারের মধ্যে এখন ৪টি ড্রেজার চলমান রয়েছে।
আরিচা বিআইডব্লিউটিসির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) খালেদ নেওয়াজ জানান, বিআইডব্লিউটিএ’র মন্থরগতির ড্রেজিংয়ে আমরা খুব অসুবিধায় আছি। নাব্য সংকটের কারণে রুহুল আমিন ফেরি মাত্র বারোটি ট্রাক নিয়ে আরিচাঘাটে প্রশে করতে পারেনি। উপায়ন্তর না পেয়ে ফেরি ঘুরিয়ে পাটুরিয়াঘাট থেকে ট্রাকগুলো আনলোড করা হয়েছে। চ্যানেলে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় রুহুল আমিন বন্ধ করে ছোট ফেরি রোকেয়া ও সুফিয়া চালু করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ নামসর্বস্ব ড্রেজিংয়ে কোন আউটপুট পাওয়া যাচ্ছে না। একটি জায়গায় ৪টি ড্রেজার এক সপ্তাহ যাবৎ বসিয়ে রাখার ফলে নদীর পলি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে চ্যানেলগুলো দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু যেখানে ড্রেজার নেই সেখানে কোন পলি জমছে না। এখন দেখা যাচ্ছে, ড্রেজিং কার্যক্রমে হিতে বিপরীত হচ্ছে। ড্রেজিংয়ের বিষয়ে প্রতিনিয়ত বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষকে তাগিদ দেয়া হচ্ছে। কিন্তু তারা বিআইডব্লিউটিসির কথা কর্ণপাত না করে নিজেদের মত কাজ করে যাচ্ছেন। এদের কাজকর্মে স্থানীয়রাও বেশ ক্ষিপ্ত। সাধারণ ট্রলার পর্যন্ত ঘাটে ভিড়তে পারছে না। বিআইডব্লিউটিসির উর্ধতন কর্তৃপক্ষ প্রতিনিয়ত বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করছেন। বিষয়টি মনিটরিংয়ের জন্য বিআইডব্লিউটিয়ের হাই ভোল্টেজ টিম মাঝেমধ্যেই আরিচা আসছেন, কিন্তু কাজের কোন অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না।
আরিচা বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আক্কাছ আলী দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, ড্রেজিংয়ে কোনরকম অনিয়ম হচ্ছে না। এ মুহূর্তে নদীতে কয়টি ড্রেজার চলমান রয়েছে প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান ৮টি।
নদীতে যে ৮টি ড্রেজার এই মুহূর্তে চলমান রয়েছে এ বিষয়ে আপনি কি নিশ্চিত? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আজ আমি অফিসে নেই। এ বিষয়ে এখন কোন কথা বলতে পারবো না। আগামীকাল অফিসে গিয়ে আপনার সাথে কথা বলবো।
আরিচা বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান আহমেদের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।